ইসলামের ইতিহাসে সাহাবায়ে কেরামদের (রা.) জীবন ছিল অসংখ্য ত্যাগ-তিতিক্ষায় ভরা। যারা ইসলামের জন্য অকাতরে নিজেদের জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন। ইসলামের মুহব্বত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মায়া এবং আল্লাহ তায়ালার প্রেমে উদ্ভাসিত হয়ে তারা তাদের জীবনের সর্বোচ্চ ত্যাগ করতে কখনো পিছপা হননি।
ইসলামের ইতিহাসে পুরুষ সাহাবীদের যেমন রয়েছে অসংখ্য ত্যাগের ইতিহাস তেমনিভাবে নারী সাহাবীদের রয়েছে ত্যাগ ও নিজেদের বিলিন করার অসংখ্য ঘটনাপঞ্জি।
তেমনি একজন নারী সাহাবা হলেন হযরত আতিকা বিনতে যায়েদ ইবনে আমর ইবনে নুফাইল রাজিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা। তিনি আশারায়ে মুবাশশিরা সাহাবা সাঈদ ইবনে যায়েদের বোন ছিলেন। তার পিতার নাম ছিলো যায়েদ ইবনে আমর এবং মাতার নাম ছিলো উম কুর্জ সাফিয়া বিনতে আল-হাযরামী।
তিনি কুরাইশ বংশের বনু আদি গোত্রের কন্যা ছিলেন। তিনি ইসলাম প্রচারের প্রথমদিকেই ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন এবং হিজরতে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
এই নারী সাহাবা একজন কবিও ছিলেন, তিনি তার প্রয়াত শহীদ স্বামীদের নিয়ে সবসময় শোকাহত ছিলেন এবং কবিতা রচনা করতেন। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এর ইন্তেকালের পরেও একটি শোক গাথা মূলক কবিতা রচনা করেছিলেন।
প্রথম বিবাহ ও স্বামীর শাহাদাত : তার প্রথম বিবাহ হয় তার চাচাত ভাই জায়েদ ইবনে খাত্তাবের সাথে। সম্ভবত এই স্বামীর সাথেই তিনি মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেছিলেন। ৬৩২ খ্রিষ্টাব্দে জায়েদ ইয়ামামার যুদ্ধে শহীদ হলে আতিকা দ্বিতীয় বিয়ে করেন।
দ্বিতীয় বিয়ে ও স্বামীর শাহাদাত : প্রথম স্বামীর শাহাদাতের পর আবদুল্লাহ ইবনে আবুবকর রা. এর সঙ্গে দ্বিতীয় বিয়ে হয়। হুনায়নের যুদ্ধের পর তাইফ অবরোধকালে তিনি আহত হয়েছিলেন। সেই পুরনো ক্ষতের সংক্রমণে ৬৩৩ সালে মৃত্যুবরণ করেন।
তৃতীয় স্বামী ও শাহাদাত : দ্বিতীয় স্বামীর ইন্তেকালের পর হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রা. এর সাথে তাঁর তৃতীয় বিয়ে হয়। উমর রা. এর প্রতি তাঁর বড়ো ভাই যায়েদ বিশেষ স্নেহপ্রবণ ছিলেন। তাঁরই হাতে ব্যবসায় হাতেখড়ি হয় তার। সেই ভাইয়ের বিপত্নীক স্ত্রী আবার একইসঙ্গে পিতৃহীন চাচাতো বোনের বিয়ের পর পুনরায় স্বামীহারা হওয়ায় উমর রা. ব্যথিত হয়েছিলেন। তিনি নিজেই কয়েকবার বিয়ের প্রস্তাব প্রেরণ করেন। তাঁর সঙ্গে তৃতীয় বিবাহ হয়। এরপর ৬৪৪ খ্রিষ্টাব্দে হযরত ওমর রা. ইন্তেকাল করেন। আতিকা রা. সেইদিন মসজিদেই ছিলেন যেদিন উমার রা. মসজিদে ছুরিকাহত হন এবং পরে শহীদ হন।
চতুর্থ বিয়ে ও স্বামীর শাহাদাত : হযরত ওমর রা. এর ইন্তেকালের পর যুবাইর ইবনুল আওয়াম রা. এর সাথে তার চতুর্থ বিয়ে হয়। তিনি ইসলামের ইতিহাসে অন্যতম শ্রেষ্ঠ সমর নায়ক ছিলেন। ৬৫৬ সালের ডিসেম্বরে উষ্টের যুদ্ধে তিনি শাহাদাত বরণ করেন।
পঞ্চম বিয়ে ও স্বামীর শাহাদাত : যুবাইর ইবনুল আওয়াম রা. এর ইন্তেকালের পর নবী স. এর দৌহিত্র হযরত হুসাইন ইবনে আলী রা. এর সাথে তার ৫ম বিয়ে হয়। আতিকা বিনতে যায়েদ রা. হুসাইন রা. এর ৮ বছর পূর্বে ইন্তেকাল করেন।
আতিকা ইবনে যায়েদ ৬৭২ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেছিলেন।
মহীয়সী এই নারীর পাঁচজন স্বামীর প্রত্যেকেই শাহাদাতের মর্যাদা লাভ করেছিলেন। এমন বিরল মর্যাদা পৃথিবীর ইতিহাসে আর কারও নেই সম্ভবত।
তথ্যসূত্র : ইসলামী বিশ্বকোষ (১ম খন্ড)। পৃষ্ঠা ৩০৯। আগানী, ১৬ খণ্ড- ১৩৩-৫। খিযানাতুল আদাব, ৪র্থ খণ্ড। পৃষ্ঠা ৩৫১। ইবনে কুতায়বা উয়ুনুল আখবার, ৪খণ্ড- ১১৪।আল-তাবাকাত আল কাবির, ৩য় খন্ড। তা-হা পাবলিশার্শ। পৃষ্ঠা ৯৫।
সম্পাদনা ও বিন্যাস : হাছিব আর রহমান।