ইউসুফ পিয়াস
পাবলিক ভয়েস
ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন বিধান। মানুষের জন্য কল্যাণকর সবকিছুকে ইসলামে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে আবার অকল্যাণকর বা ক্ষতিকর সবকিছুকে অস্বীকৃতি বা নিষেধ করা হয়েছে। ইসলামী শরিয়তের সবকিছুই পবিত্র কোরআন ও হাদীসের ওপর নির্ভরশীল।
পবিত্র কোরআনে যা কিছু বলা হয়েছে তার সবকিছুই মহান আল্লাহর তরফ থেকে এসেছে আর মহান আল্লাহর সকল আদেশই ফরজ এবং যা হাদীসের মাধ্যমে এসেছে তা কিছু সময় ওয়াজিব আবার কিছু সময় সুন্নাত। অর্থাৎ ওয়াজিব হচ্ছে সেই সমস্ত কাজ যেগুলো করার প্রতি নবী কারীম (সা.) এর আদেশ রয়েছে বা যেগুলো পালন করার প্রতি বেশি জোর দেয়া হয়েছে আর সুন্নাত হচ্ছে মহানবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.) যা করতেন সেই সব কাজ। একজন মুসলিম হিসেবে এর সবকিছুই আমাদের করণীয়।
পৃথিবীতে অসংখ্য জাতি-গোষ্ঠী রয়েছে। প্রত্যেক জাতির নিজস্ব ইউনিফরম তথা স্বতন্ত্র প্রতীক আছে। সে হিসেবে মুসলিম জাতিরও স্বতন্ত্র ইউনিফরম থাকবে—এটাই স্বাভাবিক। আর এ কথা সর্বজন স্বীকৃত, যে জাতি নিজস্ব ইউনিফরম রক্ষা করে না, সে জাতি অচিরেই অন্য কোনো জাতির মধ্যে বিলীন হয়ে যায়। গোঁফ ছোট রাখা এবং দাড়ি লম্বা রাখা মুসলমানদের ধর্মীয় প্রতীক। দাড়ি রাখা কোনো ফ্যাশন নয়, এটি ইবাদত। এটি মহানবী (সা.)সহ সব নবীর সুন্নাত। কোনো ব্যক্তি মুসলিম হওয়ার অন্যতম নিদর্শন হলো সুন্নাহসম্মত দাড়ি ।
পবিত্র কোরআনে নবীর অনুসরণ নিয়ে আল্লাহ তা’য়ালা বলেন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসো, তাহলে আমাকে অনুসরণ কর, যাতে আল্লাহও তোমাদেরকে ভালোবাসেন এবং তোমাদের পাপ মার্জনা করে দেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাকারী দয়ালু।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ৩১)
হাদীস শরীফে হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলে পাক (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘দশটি বিষয় সকল নবী-রাসূলগণের সুন্নাত। তন্মধ্যে গোঁফ ছোট করা এবং দাড়ি লম্বা করা অন্যতম।’ (সহীহ মুসলিম শরীফ: ১/১২৯) এই আয়াত থেকে বোঝা যায় যে নবীর সুন্নাত হিসেবে দাড়ি রাখার গুরুত্ব অনেক।
দাড়ি রাখার উপকার সমূহ:
দাড়ি রাখলে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সাঃ) খুশি হন: একজন দাড়িওয়ালা মুসলিম ব্যক্তিকে আল্লাহ এবং তার রাসূল সা. পছন্দ করেন। যারা আল্লাহর রাসূল সা. কে অনুসরণ অনুকরণ করেন তাদের জন্য অসংখ্য সুসংবাদ প্রদান করা হয়েছে বিভিন্ন হাদিসে।
দাড়ি থাকলে দৃষ্টিশক্তি ঠিক থাকে: মুখে দাড়ি থাকলে মানুষের দৃষ্টিশক্তি ঠিক থাকে। ফলে ভালোভাবে কোরআন তেলাওয়াত করা সম্ভব হয়। আধুনিক ডাক্তারদের মধ্যে একজন লিখেছেন : সব সময় দাড়িতে খুর চালালে চোখের শিরার ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এতে চোখের জ্যোতি ক্রমেই ক্ষীণ হয়ে আসে।
দাড়ি থাকলে হাঁপানির প্রকোপ কমে: গবেষণায় দেখা যায় দাড়ি রাখা নাকে মুখে ক্ষতিকর ধুলো-বালি ঢুকতে বাঁধা প্রদান করে। ফলে ডাস্ট মাইট যার ফলে হাঁপানির প্রকোপ বৃদ্ধি পায় তা অনেকাংশে কমে আসে। ফলে দাড়ি রাখলে হাঁপানির সমস্যা থেকেও মুক্ত থাকা সম্ভব হয়।
দাড়ি অ্যালার্জি থেকে দূরে রাখে: পুরুষদের মধ্যে যাদের ধুলা ময়লা এবং রোদে অ্যালার্জির সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্য দাড়ি রাখা বেশ উপকারী। এতে মুখের ত্বক সরাসরি ধুলা-বালি এবং রোদের সংস্পর্শে আসে না। তাই অ্যালার্জি সংক্রান্ত সমস্যা থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়।
বিবিসির এক অনুষ্ঠান—ট্রাস্ট মি, আই অ্যাম এ ডক্টর—সম্প্রতি এই প্রশ্নে দাড়ি নিয়ে ছোট্ট একটা পরীক্ষা চালিয়েছে। এর ভিত্তিতে বিজ্ঞানীরা বলছেন, ক্লিন শেভড পুরুষের চেয়ে দাড়িওয়ালাদের মুখে রোগ-জীবাণু বেশি, এমন কোনো প্রমাণ তারা পাননি। যুক্তরাষ্ট্রের একটি হাসপাতাল সম্প্রতি এ নিয়ে গবেষণা চালায়।
‘জার্নাল অব হসপিটাল ইনফেকশনে’ প্রকাশিত এই গবেষণার ফলে বলা হচ্ছে, দাড়িওয়ালাদের চেয়ে বরং দাড়ি কামানো পুরুষের মুখেই বেশি রোগ-জীবাণু পাওয়া গেছে। গবেষকরা বলছেন, মেথিসিলিন-রেসিস্ট্যান্ট স্ট্যাফ অরিয়াস (এমআরএসএ) বলে যে জীবাণু অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী, সেটি দাড়িওয়ালাদের চেয়ে দাড়ি কামানোদের মুখে তিন গুণ বেশি মাত্রায় পাওয়া গেছে।
এর কারণ কী? গবেষকরা বলছেন, দাড়ি কামাতে গিয়ে মুখের চামড়ায় যে হালকা ঘষা লাগে, তা নাকি ব্যাকটেরিয়ার বাসা বাঁধার জন্য আদর্শ পরিবেশ তৈরি করে। অন্য দিকে দাড়ি সংক্রমণ ঠেকাতে সাহায্য করে। বিবিসির ‘ট্রাস্ট মি, আই অ্যাম এ ডক্টর’ অনুষ্ঠানে বেশ কিছু পুরুষের দাড়ি থেকে ব্যাকটেরিয়ার নমুনা সংগ্রহ করে একই ধরনের পরীক্ষা চালানো হয়।
এছাড়াও দাড়ির আরো উপকারিতা নিম্নে দেয়া হলো:
ওয়াইপি/পাবলিক ভয়েস