হাটহাজারী কনক কমিউনিটি সেন্টার ও পশু হাসপাতালের এর পিছনে অবস্থিত মারকাযুল কোরআন ইসলামিক একাডেমিতে এক ছাত্রকে বেধড়ক মারধরের ঘটনার একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে নিন্দার ঝড় উঠে ফেসবুকে।
গতকাল রাত আনুমানিক ৮ টার দিকে এ ঘটনাটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে।
এরপর অভিযুক্ত শিক্ষককে আটক করে স্থানীয় প্রশাসন। পরবর্তীতে প্রশাসনের মধ্যস্থতায় মারধরের শিকার ওই ছাত্রের বাবা-মায়ের অনুরোধে শিক্ষককে ছেড়ে দেয় পুলিশ প্রশাসন। একই সাথে ওই শিক্ষককে উক্ত মাদ্রাসা থেকে বহিষ্কার করা হয়।
তবে অভিযুক্ত ওই শিক্ষক বিষয়টিতে মাফ চেয়েছেন এবং নিজের ভুল স্বিকার করে নিয়েছেন। অভিযুক্ত শিক্ষকের নাম মোহাম্মাদ ইয়াহইয়া।
নির্যাতনের ঘটনায় তিনি শিশুটির মা-বাবার কাছে তিনি মাফ চেয়েছেন জানিয়ে বলেন, জন্মদিনে শিশুটির মা ছেলের জন্য মিষ্টি ও চকলেট নিয়ে এসেছিলেন। এমনকি তাকে (মোহাম্মদ ইয়াহিয়াকে) নাস্তা খাওয়ার জন্য মা দুইশো টাকাও দিয়েছিলেন। এরপর মা যখন চলে যাচ্ছেন, সেসময় শিশুটি দৌড়ে মাদ্রাসার বাইরে বেরিয়ে রাঙ্গামাটি-হাটহাজারী চৌরাস্তায় চলে যায়।
শিশুটিকে ফিরিয়ে আনতে আনতে তিনি (মোহাম্মদ ইয়াহিয়া) রেগে গিয়েছিলেন বলে জানান।
তিনি আরও বলেন - "আসলে যে রকম দেখা যাচ্ছে, অত জোরে মারতে ছিলাম না, বেতটাও হাফ বেত, এক বিঘতের চেয়ে একটু বড় সাইজ। বেশি জোরে লাগে না। কিন্তু আমার অন্যায় হইছে, ওইভাবে মারা উচিত হয় নাই।"
জানা যায় - মারকাযুল কোরআন ইসলামিক একাডেমি নামে ওই মাদ্রাসার হিফয শিক্ষক মোহাম্মদ ইয়াহিয়া গত তিন মাস ধরে এই আবাসিক মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করছেন।
এ বিষয়ে মারধরের শিকার শিশুটির বাবা মোহাম্মদ জয়নাল বিবিসিকে বলেছেন, তার সন্তানকে মারধরের ঘটনায় তিনি ও তার স্ত্রী অত্যন্ত কষ্ট পেয়েছেন।
কিন্তু শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করতে চান না তিনি। কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, "ছেলেকে হাফেজী পড়াইতে চাই আমরা, সে তো ওইখানে পড়বে, তাইলে মামলা করে কী হবে? উল্টা শিক্ষকের জীবনটা নষ্ট হবে।"
হাটাহাজারি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন বলেছেন, ভিডিওটি দেখেই শিশুটিকে এবং অভিযুক্ত শিক্ষককে শনাক্ত করা হয়েছে এবং ভিডিওটি যে মঙ্গলবারই ধারণ করা হয়েছে সে ব্যাপারেও তিনি নিশ্চিত হয়েছেন। বলেন, মঙ্গলবার রাতে ভাইরাল ভিডিওটি দেখে তিনি রাত একটার দিকে পুলিশ নিয়ে হাটহাজারীর মারকাযুল কোরআন ইসলামিক একাডেমী নামে ওই মাদ্রাসাটিতে যান। সেখান থেকে নির্যাতনের শিকার শিশু, অভিযুক্ত শিক্ষক এবং মাদ্রাসার পরিচালককে নিয়ে উপজেলা প্রশাসন কার্যালয়ে নিয়ে আসেন। এর পর শিশুটির মা-বাবাকে ডেকে আনা হয়।
মা-বাবাকে ভিডিওটি দেখানোর পর মা কান্নায় ভেঙে পড়েন। কিন্তু তারা ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক কোন অভিযোগ দিতে চান না, তাকে কোন সাজা দিতে চান না।
নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, "মামলা দায়ের করার জন্য তিন ঘণ্টার বেশি সময় ধরে শিশুটির মা-বাবাকে বোঝানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি আমরা।
এমনকি আজ সকালেও শিশুটির বাড়িতে গিয়েছিলাম আমি, তখনো তাদের বলেছি, কিন্তু তারা কিছুতেই মামলা করবে না শিক্ষকের বিরুদ্ধে।"
শিশুটির মা-বাবা মামলা করতে রাজি তো হনই নি, বরং নির্যাতনের শিকার শিশুর মা-বাবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবরে একটি চিঠি দিয়েছেন রাতেই, যেখানে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নিতে আবেদন জানানো হয়েছে।ফলে রাত সাড়ে চারটায় ওই শিক্ষকের কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে শিশুটির মা-বাবার জিম্মায় তাকে ছেড়ে দেয় প্রশাসন।