ইবনে মুসা-
৯২% মুসলিম অধ্যুষিত দেশে বামদের আস্ফালন দেখে মনে হয় দেশটা তারা কিনে ফেলেছে! আর মুসলমান বা ইসলামপন্থীরা এ দেশে ভাড়া থাকে! ইসলাম ও মুসলমানের দেশে ইসলামের বিরুদ্ধে হরহামেশা বলে যাচ্ছে, লিখে যাচ্ছে ওরা।
কী চায় তারা? তাঁদের খুঁটির জোরই বা কোথায়? ডাকসু নির্বাচনে সকল সংগঠনের অংগ্রহণের দাবি জানায় ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন। একটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠন নৈতিকভাবেই সে নির্বাচনে অংশগ্রহণের দাবি রাখে। কিন্তু উপেক্ষিত হয়ে প্রতিবাদ করেছে তারা। আর তাতেই প্রতিবাদ জানিয়েছে প্রগতিশীল বামজোট! তারা ছাত্র আন্দোলনের প্রতিবাদ দেখে আশ্চর্য হয়েছে বলে বিবৃতি দিয়েছে। কিন্তু দেশের মানুষ আশ্চর্য হয়েছে বামজোটের মোড়লিপনা দেখে। যাদের দশজন সমর্থন নেই তারা লক্ষ সমর্থকের সংগঠনের বিরুদ্ধে দাঁড়ায় কীভাবে?
বামদের কমন ডায়লগ তারা অসাম্প্রদায়িক। বাংলা একাডেমির অভিধানে বলা হয়েছে, 'নির্দিষ্ট কোনো দল, গোষ্ঠী বা ধর্মকে সমর্থন বর্জিত'-ই হলো অসাম্প্রদায়িকতা। আর তার উল্টোটা সাম্প্রদায়িকতা। বামদের বক্তব্যের মূল বিষয় হচ্ছে, মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ বা খৃস্টান এসব বিশেষণ থাকবে না। থাকবে না কোনো ধর্ম। মানুষের পরিচয় হবে সে একজন মানুষ ব্যস। বংশ-গোত্র, মত-পথ বা ধর্মবর্ণের গণ্ডি থাকবে না। যারা ধর্মের রীতি-নীতির কথা বলে, তাঁরাই সাম্প্রদায়িক। আর সাম্প্রদায়িকতামুক্ত বাংলা চায় বামরা। মানে এদেশে ধর্ম থাকবে না। ধর্মমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে বদ্ধ পরিকর তারা।
অথচ বাংলাদেশে প্রায় ১০০% মানুষই কোনো না কোনো ধর্মে বিশ্বাসী। যার মধ্যে ৯২% জনসংখ্যা মুসলিম। সে দেশে গুটি কয়েক বাম এতো বড় কথা বলার সাহস পায় কীভাবে?
মজার ব্যাপার হলো, অসাম্প্রদায়িকতার নামে তারা শুধু ইসলামেরই বিষোদগার করে, অন্য ধর্মের নয়। এতে স্পষ্ট যে, বাম গোষ্ঠী শুধুমাত্র ইসলাম ধ্বংসেই কাজ করে যাচ্ছে। তারা যদি অসাম্প্রদায়িকই হয়ে থাকে, তাহলে অন্য ধর্মের বিশ্বাসের বিরুদ্ধে বলছে না কেনো? কেউ নিজেকে অসাম্প্রদায়কি দাবী করলে, সে কোনো ধর্মেরই বিরুদ্ধাচরণ করতে পারে না। কেননা, সে ধর্ম মানে না। যে ধর্ম মানে না, তার অধিকার নেই কোনো ধর্মের পক্ষে-বিপক্ষে মন্তব্য করার। আগেই উল্লেখ করেছি, বাংলাদেশে প্রায় ১০০% মানুষই কোনো না কোনো ধর্মে বিশ্বাসী। অর্থাৎ বাংলাদেশের প্রায় সকল নাগরিকই সাম্প্রদায়িকতা অবলম্বন করে চলে। তবে বাংলাদেশের কোনো সম্প্রদায়-ই সাম্প্রদায়িক বিভাজনে বিশৃংখলার পক্ষে নয়।
অসাম্প্রদায়িক দাবীদার কথিত প্রগতিশীলরা যেভাবে কথা বলা শুরু করেছে, মনে হচ্ছে এ দেশ কীভাবে চলবে, ইসলামপন্থীরা এ দেশে থাকবে কি থাকবে না, ইসলামের দাবী তোলবে কি তোলবে না, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কীভাবে পরিচালিত হবে, তা বলার ঠিকাদারী নিয়েছে তারা।
অসাম্প্রদায়িক বলে কোনো গোষ্ঠী পৃথিবীতে নেই। অসাম্প্রদায়িক দাবিদার লোকেরা ইসলাম ব্যতীত অন্য কোনো ধর্মের বিপক্ষে অবস্থান নেয় না। যা তাদের দাবির বিরুদ্ধ আচরণ। ধর্ম না মানাও একটি সাম্প্রদায়িকতা; তারা হলো “ধর্ম বিদ্বেষী সাম্প্রদায় বা ধর্মহীন সম্প্রদায়”।
বাংলাদেশে রথযাত্রা, মশাল মিছিল, হলি উৎসব বা মঙ্গল শোভাযাত্রার মতো হিন্দুয়ানী সংস্কৃতি ছিল না। ছিল না হিন্দুদের অতি বাড়াবাড়ি। মূলত রাম-বামদের আস্ফালনেই দেশে সাম্প্রদায়িক বিভাজন তৈরী হয়েছে। জাহেলী যুগের সেই বর্বরতার পূনরাবৃত্তি ঘটাতে বদ্ধপরিকর এরা। প্রিয় মাতৃভূমিতে বর্ষবরণের নামে পূর্বকালে আমাদের যুবতী বোনদের শ্লীলতাহানীর কোনো খবর পাওয়া যেত না। কেননা, ঐ সময়ে নারীর সম্ভ্রমহানি হতে পারে এমন পরিবেশই তৈরী হতো না। কিন্তু প্রগতির দোহাই দিয়ে, রাতব্যাপী অনুষ্ঠানমালা সাজিয়ে, নারীদের বস্ত্রহীন করার ছবকটা এরাই শুরু করেছে। একটি সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসব 'হলি'র নামে রাজপথে নারীদের প্রকাশ্যে লাঞ্ছিত করা হয়েছিল এদের যোগসাজেই। ফলে সাধারণ তেঁতুল শব্দ নিয়ে গাত্রদাহ হলেও নারীদের এমন প্রকাশ্য শ্লীলতাহানি কোনো প্রতিবাদ করতে দেখা যায়নি এদের।
ইসলাম নিশ্চিহ্ন করার মিশনে পাকাপোক্ত প্রস্ততি নিয়েই মাঠে নেমেছে এরা। যদিও অসাম্প্রদায়িক দাবি করে, মূলত ইসলামবিদ্বেষীদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে এ গোষ্ঠীটি। দেশে বাম সাম্প্রদায়িকতা প্রতিষ্ঠার হীন চেষ্টা চালাচ্ছে এরা।
উল্লেখ্য, ১৪/০৩/২০১৭ হলি উৎসবের নামে ঢাকার রাজপথে প্রকাশ্যে পথচারী যুবতী মেয়েদের শ্লীলতাহানী করেছিল উৎসব পালনকারী কিছু লম্পট। অথচ, অসাম্প্রদায়িক দাবিদার ধর্মহীনরা ঐ লম্পটদের বিরুদ্ধে নূন্যতম প্রতিবাদ করেনি।
সব ধর্মবর্ণের মানুষ সর্বস্ব দিয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এদেশে মুক্তিযুদ্ধ করেছে। তখন ছিল না কোনো সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, ছিল না ধর্মের বিভাজনও। যার যার স্থানে তার তার ধর্ম পালন করেছে সবাই। কারো ধর্মীয় রীতি-নীতি পালনে কেউ বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়নি। ছিল সৌহার্দ্য। ছিল ভালোবাসা। আন্তরিকতার অভাব ছিল না তখন। কিন্তু স্বাধীনতা অর্জনের প্রায় চার যুগ পর এসে এ কী দেখছি আমরা? অসাম্প্রদায়িকতার গান গেয়ে সাম্প্রদায়িক বিভাজনে ভূমিকা পালনকারী ওরা কারা?
যারা ধর্মনিরপেক্ষ বা অসাম্প্রদায়িক দাবি করে, তাদের নিয়ে কোনো কথা নেই। কিন্তু যারা ধর্মনিরপেক্ষতা বা অসাম্প্রদায়িকতার নামে বিশেষ কোনো ধর্মের পক্ষ নিয়ে ইসলামের বিষোদ্গার করে, তাদের সমর্থন করার সুযোগ নেই।