অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক মারিয়াম বাটসনের জন্ম একটি বাহায়ি পরিবারে। বাহায়ি ধর্মগ্রন্থের অনুবাদ করার ইচ্ছা থেকে আরবি ভাষা ও ইসলাম সম্পর্কে জানতে শুরু করেন। একসময় ইসলাম ও বাহায়ি ধর্মবিশ্বাসের তুলানমূলক পাঠ শুরু করেন এবং ক্রমেই ইসলামের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন। দীর্ঘ দুই বছরের পাঠ ও পর্যালোচনা শেষে ৯ নভেম্বর ১৯৯৭ সালে মারিয়াম ইসলাম গ্রহণ করেন।
নিজের ইসলাম গ্রহণ সম্পর্কে মারিয়াম বাটসন বলেন, আমি একটি বাহায়ি পরিবারে জন্মগ্রহণ করি। আমার মা-বাবা অ্যাংলো-ক্যাল্টিক বংশোদ্ভূত হলেও তাঁরা ষাটের দশকে বাহায়ি ধর্মে দীক্ষিত হন। ফলে শৈশবে বাহায়ি ধর্মবিশ্বাসের আলোকেই আমি পৃথিবীর অন্য ধর্মগুলোকে বিচার করতাম। অল্প বয়সে আমি স্থানীয় পর্যায়ে প্রচারক ও আধ্যাত্মিক নেতা হিসেবে নির্বাচিত হই। মূলত আমার ইচ্ছা ছিল বাহায়ি বিশ্বাসের সেবক ও ধর্মগ্রন্থের অনুবাদক হওয়া।
এক রাতে আমি উত্তর কুইন্সল্যান্ডে যাচ্ছিলাম এক বছর বাহায়ি ধর্মের স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করতে। আমি রাতের প্রার্থনা শুরু করলাম। মনে আছে, সন্ধ্যায় প্রচণ্ড গরম ছিল। ফ্যানে জঘন্য আওয়াজ হচ্ছিল। মশা-মাছি আমার বেডসাইড ল্যাম্পে এসে পড়ছিল। কিছু আমার গায়েও পড়ছিল। এমন অবস্থার মধ্যেও আমি স্রষ্টার জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছি, তার ইচ্ছায় জীবন পরিচালিত করছি— এই বোধ আমাকে অবর্ণনীয় প্রশান্তি দিয়েছিল।
পরবর্তী কয়েক দিন আমার ভেতর আরবি শেখার তাড়না সৃষ্টি হলো। যেন ধর্মগ্রন্থের অনুবাদক হতে পারি। তবে পরিচিতদের বারবার বলছিলাম, আমি ফারসি শিখব— যে ভাষায় বাহায়ি ধর্মগ্রন্থটি প্রথম প্রকাশ পেয়েছিল। এভাবেই আল্লাহ আমাকে তাঁর পথে পরিচালিত করছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবি ও ইসলামিক স্টাডিজ নেওয়ার সুযোগ পেলাম। ক্লাস শুরু হওয়ার আগে ইসলাম সম্পর্কে ধারণা পেতে চাইলাম।
আমি একটি ইসলামিক পোশাকের দোকান খুঁজে পেলাম এবং তার কাছে মুসলিম নারীদের ধর্মীয় পাঠদানের বিজ্ঞাপন দেখলাম। আমি নিজের পরিচয় দিয়ে জানতে চাইলাম তাদের ক্লাসে আমি অংশগ্রহণ করতে পারি কি না? তারা আমাকে সুযোগ দিল এবং আমি সাপ্তাহিক ক্লাসে কোরআন, হাদিস, ফিকহ ও সিরাত পাঠ শুরু করলাম। তখন ইসলামের প্রতি আমার যে আকর্ষণ তৈরি হলো তা অপ্রতিরোধ্য। প্রচণ্ড ইচ্ছা হচ্ছিল, আমি মুসলিম হয়ে যাই। তার পরও নিজেকে প্রতিহত করলাম এবং দু-এক মাস পর ক্লাস ত্যাগ করলাম। আর কখনো ফিরে যাইনি।
দুই বছর পর্যন্ত আমি ইসলাম ধর্ম নিয়ে পড়ালেখা করলাম। ইসলামকে বাহায়ি ধর্মের আলোকে পর্যালোচনা করলাম। গভীর অনুসন্ধানের পর দেখলাম, আমার কাছে যা কিছু ভালো মনে হয় এবং বাহায়ি ধর্মের অনবদ্য বিষয়গুলোর উৎস ইসলাম। যেমন— সামাজিক দায়িত্ব ভিন্ন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নারী-পুরুষের সমতা, জাতিগত কুসংস্কার ত্যাগ, শিক্ষা ও জ্ঞানার্জনে উৎসাহ, সামাজিক উন্নয়ন ও বিপ্লবের ধারণা ইত্যাদি।
এরপর আমি দুই ধর্মাদর্শের ভিন্নতা খুঁজতে শুরু করলাম। বাহায়ি ধর্মেও একত্ববাদের ধারণা রয়েছে। তবে সেখানে প্রতিষ্ঠাতা বাহাউল্লাহর মাধ্যমে স্রষ্টার প্রার্থনা করতে উৎসাহিত করা হয়। বাহায়ি ধর্মবিশ্বাসে এমন বহু বিষয় খুঁজে পেলাম, যা মানুষ ও তার স্রষ্টার মধ্যে আড়াল তৈরি করে। অন্যদিকে ইসলাম মানুষকে মহান স্রষ্টার সঙ্গে সংযুক্ত করে।
মহান স্রষ্টা ও মানুষের মধ্যে কোনো আড়াল সৃষ্টি করাকে অপরাধ বিবেচনা করে। সার্বিক পর্যালোচনা ও পর্যবেক্ষণের পর আমি ইসলাম গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিই এবং ৯ নভেম্বর ১৯৯৭ সালে কলেমা শাহাদাত পাঠ করে মুসলিম হই। আমি কলেমা পাঠ করি সেসব নারীদের সামনে, যাঁরা প্রথম আমাকে ইসলামের শিক্ষা ও সৌরভ প্রদান করেছিলেন। আল হামদুলিল্লাহ!