প্রিন্ট এর তারিখঃ জুলাই ২৮, ২০২৫, ২:০৩ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ জানুয়ারি ২৭, ২০১৯, ২:১৫ অপরাহ্ণ
নাটক-সিনেমায় ইসলামবিদ্বেষ চাই না

পাঠক মতামত-
আরিফ রব্বানী
প্রেম-প্রীতি-ভালোবাসা এসব নিয়েই একটা সময় নাটক-সিনেমা তৈরি হত। অবৈধ প্রেম-ভালোবাসার প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টিই ছিল ফ্লিম নির্মাতাদের কাজ। যদিও এগুলো ইসলামসমর্থন ছিল না কিন্তু তাতে ইসলামকে ব্যঙ্গ করা হত না। ফ্লিম জগতটাকে অভিনেতারা এক প্রকার শিল্প মনে করত। অভিনয় করা বা করতে পারা এটাও একটা আলাদা যোগ্যতা বা শিক্ষা মনে করেই তারা অভিনয় করত। কিন্তু ইদানীং অভিনয়টাকে শুধু শিল্পই মনে করা হয় না বরঞ্চ এই অভিনয়ের মাধ্যমে বিশেষ কোন জাতিগোষ্ঠীকে ব্যঙ্গ বা আক্রমণও করা হয়। আর এই জাতিগোষ্ঠীটা বারবার ইসলাম ও মুসলিমরাই হয়ে থাকে।
মুসলিম অধ্যুষিত এই বাংলাদেশে ইসলামকে কটাক্ষ করে নাটক-সিনেমা তৈরি করা একসময় কারো সাহসেই ধরত না। কিন্তু আধুনিকায়নের এই যুগে প্রগতিশীলতার কথা বলে, মুক্তচিন্তা বা মুক্তমনার দোহায় দিয়ে একশ্রেণির নাস্তিকপ্রিয় লেখক-প্রযোজকরা ইসলামের লেবাস নিয়ে ব্যঙ্গ করা শুরু করে দিয়েছে। নাটক-সিনেমায় যারা চরিত্রহীন, লম্পট, গুণ্ডা, মাস্তান, মদখোর, গাঁজাখোর বা ধর্ষকের অভিনয়ে থাকে তাদের মুখে দাড়ি, মাথায় টুপি এবং পরনে পাঞ্জাবি পড়িয়ে অভিনয় করানো হয়। এতে কোমলমতি শিশুদের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। তারা মনে করে, দাড়িওয়ালারা খারাপ লোক, পাঞ্জাবি পড়ুয়ারা ধর্ষক হয়, আর সমাজের লম্পট লোকগুলোই মাথায় টুপি দিয়ে রাখে। এইসমস্ত ছেলেপুলেরাই পরে দাড়ি-টুপি সহ্য করতে পারে না। এসব পোশাকধারী ব্যক্তিদের সেকেলে, হিংস্র ও ত্রাস সৃষ্টিকারী মনে করে তারা।
অপরদিকে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীরাও ইসলামি লেবাসধারীদের তেমনই ধারণা করে যেমন তারা নাটক-সিনেমায় অভিনেতাদের দেখে। অভিনয় জগতের দাড়িওয়ালা ধর্ষককে বাস্তব জগতের দাড়িওয়ালা লোকটির সাথে মেলানোর চেষ্টা করে। ফলে তাদের কাছে ইসলামটা বর্বর মনে হয়। ইসলামের অনুসারীদের নারীপিপাষু জ্ঞান করে থাকে। যদিও বাস্তবচিত্র এর সম্পূর্ণ উলটো।
পশ্চিমা দেশগুলোতে ইসলাম অবমাননাকর ভিডিওচিত্র এখন অহরহ প্রকাশ পাচ্ছে। ইয়াহুদ-খ্রিস্টাননামক ইসলামের প্রকাশ্য শত্রুরা উঠেপড়ে লেগেছে কীভাবে ইসলামের প্রতি মানুষের ঘৃণা সঞ্চার করা যায় তার জন্য। আর এদেরই কিছু সদস্য বাংলাদেশে এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছে। প্রতিটা অনৈতিক কর্মকাণ্ডতে ধার্মিক মুসলিমদের উপস্থাপন করানো হচ্ছে। অত্যন্ত সুকৌশলে ধর্মের ব্যাপারে বিষিয়ে তুলছে তারা। ফলে অনেকে এখন ধার্মিক পোশাক পড়তেও অনীহা প্রকাশ করে।
রাজাকার, আলবদর ও আলশামস-এর অভিনয়ে যারা থাকবে তাদের দাড়ি, টুপি ও পাঞ্জাবি অনিবার্য। এতে তারা এটাই প্রমাণ করতে চাইছে যে, মুক্তিযুদ্ধকালীন এসব লেবাসধারী মোল্লারাই দেশবিরোধী ছিল। দাড়ি, টুপিওয়ালা মানেই পাকিস্তানপন্থী। অথচ বাস্তব দৃশ্যপট এর বিপরীত। তদীয় সময় মুষ্টিমেয় দুএকজন দাড়িওয়ালা, টুপিওয়ালা বা পাঞ্জাবিওয়ালা দেশের বিপক্ষে কাজ করলেও হাজারো দাড়িওয়ালারা দেশের পক্ষে কাজ করেছে। হাজারো পাঞ্জাবি-টুপিওয়ালারা জীবন বাজি রেখে দেশের জন্য লড়াই করেছে। কিন্তু আজ যখন মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ভিডিওচিত্র নির্মাণ করা হয় তখন মুক্তিযোদ্ধাদের একজনকেও দাড়ি, টুপি ও পাঞ্জাবি পড়ুয়া হুজুর বা মোল্লা দেখানো হয় না। আবার পাঠ্যপুস্তকেও মুক্তিযুদ্ধে আলেমদের অবদানের কথা নেই বললেই চলে। এভাবেই ইতিহাস থেকে আলেমরা ছিটকে পড়ছে। আর আগত প্রজম্মরা একটি বিশেষ মহলের চক্রান্তমূলক নাটক-সিনেমা দেখে ইসলাম ও ধর্মবিদ্বেষী হয়ে উঠছে।
রাষ্ট্রপক্ষ এ নিয়ে তেমন মাথা ঘামায় না। ধর্ম অবমাননা, ধর্মবিকৃতি, ধর্মকে নিয়ে ব্যঙ্গ করা বা কোন ধর্মকে আক্রমণ কিংবা কটাক্ষ করার আইন সংবিধানে আছে, তবে সেটা সংবিধানকক্ষেই আবদ্ধ থাকে। ধার্মিকরা প্রতিবাদ করলে তখন সাময়িকভাবে কিছুদিন বন্ধ থাকলেও পরে আবার নতুনভাবে শুরু করে দেয়। এই ধারা বন্ধ হোক। নাটক-সিনেমায় ইসলামবিদ্বেষ কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। ধার্মিকদের হৃদয়ে আঘাত দিয়ে আগামীতে যেন বাংলাদেশে কোন ভিডিওচিত্র তৈরি না হয় তার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি। ইসলামসহ কোন ধর্ম বা ধর্মাবলম্বীর মনে রেখাপাত করে এমন নাটক-সিনেমা নির্মাণের বৈধতা যেন সরকারের পক্ষ থেকে না আসে—এই প্রত্যাশা আমাদের।
লেকখ-
ছাত্র, জামিয়া আরাবিয়া কাসেমুল উলুম,ঢাকা।
Copyright © 2025 Samakaler Kontho. All rights reserved.