কওমি মাদরাসাকেন্দ্রীক ইসলামপন্থিদের সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের ঢাকা মহানগরীর পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।
ঢাকার বিভিন্ন কওমি মাদরাসার দায়িত্বশীল ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ এবং খেলাফত আন্দোলনের বিভিন্ন দায়িত্বশীলদের সমন্বয়ে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে।
আজ ৩০ জানুয়ারী (শনিবার) রাজধানী ঢাকার খিলগাঁওয়ের মাখজানুল উলূম মাদরাসায় হেফাজতের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা নুরুল ইসলাম জিহাদীর উপস্থিতিতে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর শাখার কমিটি ঘোষণা করা হয়।
কমিটি ঘোষণা করেন হেফাজতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সাবেক মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক।
২২ সদস্য বিশিষ্ট উপদেষ্টামণ্ডলি ও ১০৮ সদস্যের কার্যকরী সদস্যসহ মোট ১৩০ জনের সমন্বয়ে পূর্নাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে সভাপতি হিসেবে জমিয়ত নেতা মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব ও সেক্রেটারী হিসেবে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকের নাম হাটহাজারী মাদরাসা থেকে আগেই ঘোষণা করা হয়েছিলো। বাকি সদস্যদের নাম আজ ঘোষিত হলো।
আরও পড়ুন : কাফন পরে রাস্তায় নামার হুঁশিয়ারি হেফাজত নেতা জুনায়েদ আল হাবিবের
কমিটির সদস্যদের মধ্যে বেশিরভাগই ইসলামি রাজনৈতিক দল জমিয়ত, খেলাফত ও মজলিসের সদস্যরা রয়েছেন। তবে কমিটিতে স্থান হয়নি বাংলাদেশের বৃহত ইসলামি রাজনৈতিক দল 'ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ' এর কোন সদস্যের।
আরও পড়ুন :
অবিশ্বাস্য এক সিন্ডিকেট চক্রের অদৃশ্য জালে হেফাজতে ইসলাম : হারুন ইজহার
বর্তমান হেফাজতে ‘সিন্ডকেট’ ভাঙ্গার আহবান মুফতী হারুণ ইজহারের
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ, ঢাকা মহানগর কমিটিতে যারা রয়েছেন :
২২ সদস্যবিশিষ্ট উপদেষ্টামন্ডলী :
সভাপতি- মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব
সহ সভাপতি (২২ জন)
সাধারণ সম্পাদক : মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক
সহ-সাধারণ সম্পাদক (১১ জন)
সাংগঠনিক সম্পাদক - মাওলানা মুফতি মুহাম্মদ আজহার।
সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক- (৮ জন)
প্রচার সম্পাদক- মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন
সহ প্রচার সম্পাদক- (৭ জন)
অর্থ সম্পাদক- মাওলানা মুফতি জাকির হোসাইন কাসেমী, জমিয়ত।
সহ অর্থ সম্পাদক - (৫ জন)
স্বেচ্ছাসেবা বিষয়ক সম্পাদক- মাওলানা ফয়সাল আহমদ বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস।
স্বেচ্ছাসেবা বিষয়ক সহ সম্পাদক- (১০ জন)
সমাজ কল্যাণ সম্পাদক- মাওলানা গাজী ইয়াকুব।
সহ সমাজ কল্যাণ সম্পাদক- (১০ জন)
আইন বিষয়ক সম্পাদক- জনাব এ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান। খেলাফত মজলিস
সহ আইন বিষয়ক সম্পাদক- (৭ জন)
দপ্তর সম্পাদক - মাওলানা রবিউল ইসলাম, মিরপুর।
সহ-দপ্তর সম্পাদক- (২ জন)
তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক- ডক্টর মুস্তাফিজুর রহমান, খেলাফত মজলিস।
তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সহ সম্পাদক- (৪ জন)
সদস্য - (১৫ জন)
প্রসঙ্গত : হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা আমীর দেশ বরেণ্য শীর্ষ আলেম আল্লামা শাহ্ আহমদ শফি রহ. গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করার পর হেফাজতের আমিরের পদটি শূণ্য হয়। এরপর গত বছরের ১৫ নভেম্বর হাটহাজারী মাদরাসায় হেফাজতের নতুন কমিটি গঠন করা হয় তখনকার মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীকে আমীর এবং হেফাজত ঢাকা মহানগরীর সভাপতি আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমীকে মহাসচিব করে।
পরবর্তিতে আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমীর ইন্তেকালের পর মাওলানা নুরুল ইসলাম জিহাদীকে হেফাজতের মহাসচিব নির্ধারণ করা হয়।
এছাড়াও কেন্দ্রীয় পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের আলেমদেরকে জায়গা দেয়া হয়। বিশেষ করে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও খেলাফত মজলিসের একাধিক নেতাকর্মীরা হেফাজতে ঢালাওভাবে পদ পান যা হেফাজতে নতুন সিন্ডিকেট হয়েছে মর্মে সমালোচনার জন্ম দিয়েছিলো।
আরও পড়ুন : ৭ বছর পর হঠাত করে হেফাজতের মামলা সক্রিয় করছে সরকার
হেফাজতের সাংগঠনিক ইতিহাস সম্পর্কে অনুসন্ধানে জানা যায় – ২০১০ সালের দিকে ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষানীতির বিরোধিতার মধ্য দিয়ে হেফাজতের আত্মপ্রকাশ হলেও সংগঠনটি দেশজুড়ে আলোচনায় আসে ২০১৩ সালে ১৩ দফা দাবিতে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। বিশ্বজুড়ে আলোচনায় আসে ২০১৩ সালে ৫ মে শাপলা চত্বর অবরোধের মাধ্যমে।
প্রতিষ্ঠা ইতিহাস সম্পর্কে জানা যায় – ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি গঠিত হয়েছিল চট্টগ্রাম কেন্দ্রীক কওমী মাদরাসাভিত্তিক অরাজনৈতিক ইসলামী সংগঠন হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশ। যদিও বা পরে অরাজনৈতিক এ সংগঠনটি রাজনৈতিক ফ্যাক্টরও হয়ে দাঁড়ায়।
হটহাজারীর দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসার প্রধান পরিচালক আল্লামা শাহ আহমদ শফিকে আমির ও মাদ্রাসার তৎকালীন সিনিয়র মুহাদ্দিস আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীকে মহাসচিব করে হেফাজতের ২২৯ সদস্যের মজলিশে শুরা কমিটি গঠন করা হয়েছিল সেই সময়।
তবে একটি সূত্র থেকে জানা যায় – হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব ছিলেন আল্লামা সুলতান যওক নদভী। কিন্তু পরবর্তিতে তেমন কোনো আলোচনা ছাড়াই আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীকে মহাসচিব বানানো হয়। দীর্ঘ অনুসন্ধানেও আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীকে তৎকালিন সময়ে মহাসচিব বানানোর কাগজপত্র পাওয়া যায়নি। তার আগে চট্টগ্রামের প্রবীণ আলেম মাওলানা আ. মালেক হালিমও হেফাজতের মহাসচিব ছিলেন বলে একটি তথ্য পাওয়া যায়। তবে আল্লামা শফী ও আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর নেতৃত্বেই হেফাজত অনন্য উচ্চতায় পৌছায়।
আল্লামা আহমদ শফী রহ. এর জীবদ্দশায় শেষ সময়ে হেফাজতের মধ্যে একটি সিন্ডিকেট ছিলো বলে অভিযোগ করা হয়। সে সিন্ডিকেটের আওতায় হেফাজত পথচ্যুত হয়েছে বলেও অভিযোগ আছে। হাটহাজারী মাদরাসায় একটি আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সেই সিন্ডিকেটের পতন হয়েছে বলেও মনে করছেন অনেকে। অপরদিকে সে আন্দোলনে আল্লামা শাহ্ আহমদ শফী রহ. এর দূর্ব্যবহার করা সহ হাটহাজারী মাদরাসায় আল্লামা শফীর রুম ভাংচুর ও বেশ কয়েকজন শিক্ষকের রুম ভাংচুরের অভিযোগ রয়েছে। যা নিয়ে আল্লামা শফী রহ. এর পরিবারের পক্ষ থেকে আদালতে মামলা করার ঘটনাও ঘটেছে।
আল্লামা শফী রহ. এর ইন্তেকালের পর গত ৩ অক্টোবর ঢাকায় হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগরের আয়োজনে বায়তুল মোকাররম উত্তর গেটে বিশাল গণসমাবেশের মাধ্যমে হেফাজতের নতুন জাগরণ হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। তবে এ সমাবেশেও হেফাজত ঢাকা মহানগরীর সেক্রেটারির উপস্থিত না থাকা নিয়েও তখন কিছুটা আলোচনা সমালোচনা শোনা গেছে বিভিন্ন মহলে।
পরবর্তিতে ১৫ নভেম্বর আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর নেতৃত্বে হেফাজতের কেন্দ্রীয় নতুন কমিটি গঠিত হয়। যেখানে হেফাজতের ঢাকা মহানগর কমিটির সভাপতি সেক্রেটারীও নির্ধারণ করা হয়।
পাবলিক ভয়েস ডেস্ক প্রতিবেদন। সম্পাদনা ও বিন্যাস : হাছিব আর রহমান।