'দৈনন্দিন জীবনে চলার ক্ষেত্রে অন্যের দোষত্রুটি খুঁজে দেখা থেকে বিরত থাকতে হবে এবং মুমিন মুসলমানরা কষ্ট পায় এমন কোন কাজ করা যাবে না' বলে নসিহত করেছেন মুহিউসসুন্নাহ আল্লামা মাহমুদুল হাসান।
কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ শিক্ষা বোর্ড আল হাইয়াতুল উলিয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ-এর চেয়ারম্যান ও যাত্রাবাড়ী জামিয়া মাদানিয়া বড় মাদ্রাসার মহাপরিচালক আল্লামা মাহমুদুল হাসান এর প্রতিষ্ঠিত মোমেনশাহীর ঐতিহ্যবাহী মাদরাসা জামিয়া মাহমুদিয়া আরাবিয়া চরখরিচা মাদ্রাসা বার্ষিক মাহফিলের প্রধান অতিথির আলোচনায় তিনি এ কথা বলেন।
মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা মাসরুর হাসানের বিশেষ তত্বাবধানে আজ ২৯ জানুয়ারী (শুক্রবার) দিন-রাতব্যাপী আয়োজনে চরখরিচা মাদরাসা ময়দানে ঐতিহাসিক এ মাহফিলটি অনুষ্ঠিত হয়।
মাহফিলে মোমেনশাহী, ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে আল্লামা মাহমুদুল হাসান এর ভক্ত অনুরক্তসহ ইসলামপ্রেমী হাজার হাজার মানুষের সমাগম হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আল্লামা মাহমুদুল হাসান বলেন - 'আমাদেরকে অন্যের দোষ তালাশ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। একে অপরের গীবত করা যাবে না। মানুষের দোষ চর্চা করা যাবে না। কারো দোষ চর্চা মানি তার মনে কষ্ট দেয়া এবং মানুষের মনে কষ্ট দেয়া অবশ্যই গর্হিত কাজ।'
তিনি জুমার নামাজ পূর্ব আলোচনায় জুমার নামাজের ফজিলত এবং গুরুত্ব বর্ণনা করে বলেন - 'আমাদের পূর্ববর্তী আকাবির ওলামায়ে কেরামদের মধ্যে অনেকেই এমন ছিলেন যারা শুক্রবারে ফজরের পর থেকে জুমার নামাজ পর্যন্ত মসজিদে বসে থাকতেন এবং জুমার নামাজ আদায় করে তবেই যেতেন। তাই আমরা ততটা না পারলেও প্রতি শুক্রবারে অতিদ্রুত মসজিদে আসার চেষ্টা করবো।
ইসলাহী ও আমলি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের আলোচনার সাথে সাথে তিনি প্রতিটি অঞ্চলের ধনী ও বিত্তশালীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন - 'মুসলমানদের কল্যাণে সকলকে কাজ করতে হবে। বিশেষ করে অসহায় ও দরিদ্র মুসলিম জনগোষ্ঠীর জন্য সবাই তাদের সাধ্যমত সহযোগিতা করতে হবে। তিনি বিভিন্ন অঞ্চলে খ্রিস্টান মিশনারীদের মাধ্যমে মুসলমানরা ধর্মান্তরিত হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে আক্ষেপ প্রকাশ করেন এবং এদিকে সবাইকে সজাগ দৃষ্টি রাখার বিশেষ অনুরোধ করেন।'
জুমা পূর্ব আলোচনার পর আল্লামা মাহমুদুল হাসান চর খরিচা মাদ্রাসা সংলগ্ন ঐতিহাসিক মদিনা মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন এবং একই সাথে তিনি এ মাদ্রাসায় দাওরায়ে হাদিসের দরস প্রদান করেন।
জুমার নামাজ পরবর্তী অধিবেশনে বিশেষভাবে আলোচনা করেন বিশিষ্ট ইসলামী আলোচক, লেখক মুফতি হাবিবুর রহমান মিছবাহ।
তিনি তার বক্তব্যে প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি ভালোবাসার বজায় রাখতে এবং সুন্নত অনুসারে প্রতিটি মানুষ তাদের নিজেদের জীবন পরিচালনার ব্যাপারে উৎসাহ দেন। তিনি সবাইকে আহবান করেন মুহিউস সুন্নাহ আল্লামা মাহমূদুল হাসান এর নেতৃত্বে যেন সকল ওলামা একরাম ঐক্যবদ্ধ থাকেন একইসাথে মোমেনশাহীর ওলামায়ে কেরামগণ আল্লামা মাহমুদুল হাসানের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ আছেন বলে তিনি খুশি প্রকাশ করেন।
মাহফিলে ওলামায়ে কেরামদের মধ্যে বিশেষভাবে উপস্থিত ছিলেন - বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ, বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ এর সহ-সভাপতি সিলেটের গহরপুর মাদ্রাসার মুহতামিম হযরত মাওলানা মুসলেহ উদ্দীন রাজু, ঢালকানগর পীর সাহেব হযরত মাওলানা আব্দুল মতিন বিন হোসাইন, জামিয়াতুস সুন্নাহ শিবচর মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা নেয়ামতুল্লাহ আল ফরিদী, শায়খ যাকারিয়া ইসলামী রিসার্চ সেন্টারের মহাপরিচালক হযরত মাওলানা মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদ, তুরস্ক থেকে আগত আন্তর্জাতিক ইসলামী আলোচক শায়খ মনির তুরান, ইসলামী আলোচক হযরত মাওলানা নজরুল ইসলাম কাসেমী।
আরও উপস্থিত ছিলেন - ঐতিহাসিক শহীদি মসজিদের খতিব হযরত মাওলানা সাদেক আহমদ সিদ্দিকী, বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ মাখজানুল উলুম তালতলা মাদ্রাসার মুহতামিম আল্লামা আব্দুর রহমান হাফেজ্জীসহ অন্যান্য ওলামায়ে কেরাম।
এছাড়াও ময়মনসিংহের ওলামায়ে কেরামদের মধ্যে বিশেষভাবে উপস্থিত ছিলেন জামিয়া ইসলামিয়া সেহরা মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা আনোয়ারুল হক, জামিয়া ফয়জুর রহমান বড় মসজিদ মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা আব্দুল হক, মিফতাহুল উলুম মাদ্রাসার শায়খুল হাদিস মাওলানা মুফতি আহমদ আলী, মিফতাহুল উলুম মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা মুফতি দেলোয়ার হোসেন, ঐতিহাসিক আম্বরশাহ মসজিদের খতিব মাওলানা মাজহারুল ইসলাম প্রমুখ।