চাঁদপুরের কচুয়ার সাতবাড়িয়ায় মাদরাসার এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে একই মাদরাসার হিফজ বিভাগের ১৩ বছরের শিশুছাত্রকে বলাৎকারের মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে অমানুষিক নির্যাতনের ঘটনায় পৃথক পৃথক বিবৃতি পাঠিয়ে প্রতিবাদ করেছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমীর আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সহ-সভাপতি আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক।
বলাৎকারের অভিযোগ তুলে মাদরাসা শিক্ষককে নির্যাতন, জানা গেলো ঘটনাটি ভূয়া
হেফাজত প্রধান আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী চাঁদপুরে মাদরাসার শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় অভিযুক্তদের বিচারের আওতায় আনার জোর দাবি জানিয়েছেন।
গণমাধ্যমে পঠানো বিবৃতিতে তিনি বলেছেন - মিথ্যা অভিযোগ তুলে মাদরাসা ভাংচুর করে শিক্ষককে মারধর ও পুলিশে সোপর্দ করার ঘটনা চরম উদ্বেগজনক। এসব মিথ্যা অভিযোগ উত্থাপন করে কওমী মাদরাসাকে কলুষিত করাই রাম-বামদের মূল লক্ষ্য উদ্দেশ্য। এ ঘটনা কওমী মাদরাসা ও হক্কানী ওলামায়ে কেরামের বিরুদ্ধে চলমান গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ।অনতিবিলম্বে মিথ্যা অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া সেই মাদরাসার শিক্ষককে স্বসম্মানে মুক্তি দিতে হবে।
আমীরে হেফাজত আল্লামা বাবুনগরী বলেন, ঐ মাদরাসার ছাত্র যে সময় উল্লেখ্য করে তার শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছিল মাদরাসার মোহতামীম, এলাকাবাসী ও ঢাকা থেকে যাওয়া ঘটনাস্থল পরিদর্শনকারী ওলামায়ে কেরামের প্রতিনিধি দলের অনুসন্ধান এবং মাদরাসায় থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে সেই ছাত্রের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা বানোয়াট ও ভূয়া প্রমাণিত হয়েছে। মিথ্যা অভিযোগে একজন হাফেজে কুরআনকে বেধরক মারধর করা, মাথা ন্যাড়া করে পুলিশে সোপর্দ করার ঘটনার নিন্দা ও ধিক্কার জানানোর ভাষা আমার নেই। নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে হাফেজে কুরআন শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
আমীরে হেফাজত আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী আরও বলেন,মিথ্যা অভিযোগ তুলে মাদরাসা ভাংচুরের যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে এবং সম্মানহানির জন্য ঐ শিক্ষক ও মাদরাসা কর্তৃপক্ষের নিকট দোষীদের প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।
অপরদিকে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ-এর সহসভাপতি শায়খুল হাদীস আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক বলেছেন, ‘চাঁদপুরে মাদরাসা শিক্ষক লাঞ্ছিতের ঘটনার বিচারবিভাগীয় তদন্ত ও দোষীদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে’
তিনি বলেন - ইসলাম নির্মূলবাদী চক্র আলেম-উলামা ও মাদ্রাসা শিক্ষার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার ও কুৎসা রটনায় যেনো নতুন উদ্যোমে কোমর বেঁধে নেমেছে। এ ক্ষেত্রে পুঁজিবাদের তল্পিবাহক ও আধিপত্যবাদের স্বপক্ষে কাজ করা কতিপয় ইসলামবিদ্বেষী দালাল মিডিয়া সহযোগীর ভূমিকা পালন করছে। এই চক্রের সাম্প্রতিক মিথ্যাচার ও কুৎসা রটনার শিকার চাঁদপুরের তালিমুল কুরআন ওয়াল হিকমাহ মাদ্রাসা ও এর শিক্ষক হাফেজ মুহাম্মদ ওমর ফারুক।
আজ (৫ জানুয়ারী) মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে তিনি আরো বলেন, গত ২৯ ডিসেম্বর রাতে সম্পূর্ণ সাজানো ও মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে স্থানীয় চিহ্নিত কিছু লোক চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার তালিমুল কুরআন ওয়াল হিকমাহ (রহিমানগর) কওমী মাদরাসায় ভাঙ্চুর এবং হিফজ বিভাগের শিক্ষক হাফেজ মুহাম্মদ ওমর ফারুককে চরম লাঞ্ছিত ও মারধর করে পুলিশে সোপর্দ করে।
তিনি বলেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক ও ঢাকা থেকে উলামায়ে কেরামের প্রতিনিধি দল সরেজমিনে তদন্ত করে দেখতে পেয়েছেন, মাদ্রাসা শিক্ষকের নামে সম্পূর্ণ ষড়যন্ত্রমূলক কুৎসা রটনা করে হামলা, ভাংচুর ও লাঞ্ছিত করা হয়েছে। মাদ্রাসারটির প্রতিটি শিক্ষক ও ছাত্র স্বাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং পরিকল্পিতভাবে মাদ্রাসা ভাঙচুর এবং একজন হাফেজে কুরআন শিক্ষককে মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে কতিপয় সন্ত্রাসী। বর্তমানে এই নিরপরাধ কুরআনের শিক্ষক বিনা দোষে জেলে আছেন।
আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক বলেন, হামলার সময় উক্ত মাদ্রাসার শিক্ষক ও ছাত্ররা অভিযোগের সত্যতা যাছাই করতে হামলাকারীদেরকে সিসিটিভি’র ভিডিও ফুটেজ দেখতে বার বার অনুরোধ করেন। কিন্তু হামলাকারীরা তাতে কর্ণপাত করেনি। পরবর্তীতে ভিডিও ফুটেজে প্রমাণিত হয়েছে যে, হামলাকারীদের অভিযোগ নিরেট ষড়যন্ত্রমূলক ও সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তিনি বলেন, মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয়দের বরাতে আরো জানা গেছে, বেশ কয়েক বছর আগে থেকে মাদ্রাসাটির জায়গা দখলে নিতে মরিয়া হয়ে ওঠেছে একটি মহল। তাদের যুক্ত হয়েছে দেওবন্দী মতাদর্শবিরোধী স্থানীয় একটি গোষ্ঠী। এই মহলটি ইসলামবিদ্বেষীদের চলমান আলেম-উলামা ও মাদ্রাসাবিরোধী অপপ্রচারকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে কথিত ‘বলাৎকার’-এর মিথ্যা অভিযোগ এনে হামলা ও মাদ্রাসা দখলের অপচেষ্টা চালিয়েছে। আর পুঁজিবাদ ও আগ্রাসনবাদি অপশক্তির তল্পিবাহক ইসলামবিদ্বেষী সেক্যুলার মিডিয়াগুলো ঘটনার সত্যাসত্য যাছাই না করে কওমি মাদ্রাসা ও আলেমবিরোধী প্রচারণার অংশ হিসেবে নানা রঙ দিয়ে মিথ্যাচারে শামিল হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার তালিমুল কুরআন ওয়াল হিকমাহ (রহিমানগর) কওমী মাদরাসায় ষড়যন্ত্রমূলক ও পরিকল্পিত এই সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসনসহ সরকারের প্রতি ঘটনার নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের কঠোর শাস্তি এবং ক্ষতিপুরণ দানেরও জোর দাবি জানাচ্ছি।
আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক অবিলম্বে মিথ্যা অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া সেই মাদরাসার শিক্ষককে স্বসম্মানে মুক্তি দেওয়ারও দাবি করেন।
তিনি বলেন, কওমী মাদরাসায় পবিত্র কুরআন-হাদীস ও ইসলামী-বিধিবিধান এবং আদর্শ ও সুনাগরিক হওয়ার শিক্ষা ও অনুশীলন করা হয়। দেশ ও জাতি গড়তে কওমি মাদ্রাসার ভূমিকা ও অবদান অত্যন্ত প্রশংসনীয়। কওমি মাদ্রাসা শিক্ষিতরা ঈমান-আক্বিদার সুরক্ষায় অতন্দ্র প্রহরির ভূমিকা রাখারার পাশাপাশি দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও যে কোন জুলুম-অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকার কারণে ইসলাম নির্মূলবাদী চক্র, আধিপত্যবাদি অপশক্তি এবং গণমানুষের অধিকারহরণকারীদের পথে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে কারণে তারা নানা কুৎসা, মিথ্যাচার ও ষড়যন্ত্রণের জাল বুনছে আলেম-উলামা ও কওমি মাদ্রাসার বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে আলেম সমাজ ও দেশবাসীকে সচেতন এবং সোচ্চার থাকতে হবে।
তিনি দেশবাসীর উদ্দেশ্যে ইসলাম নির্মূলবাদি চক্রের অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, দেশের আলেম সমাজ কখনো কোন অন্যায়কে ধামাচাপা দেয় না, অন্যায়কারির পক্ষাবলম্বন করেন না। সকল প্রকার জুলুম-অত্যাচার, অপরাধ, অধিকার হরণ এবং অনাচার-ব্যভিচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকেন এবং এসব অপরাধ বন্ধে কঠোর শাস্তির আইন ও প্রকাশ্য বিচার দাবি করেন। এই নিয়ে কোনরূপ অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হওয়ার সুযোগ নেই।