নাহিদুজ্জামান নাহিদ, বেরোবি প্রতিনিধি: বিজয় দিবসে জাতীয় পতাকা বিকৃতি করে প্রদর্শনের ঘটনায় জড়িত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরকে দেশ ও জাতির শত্রু বলে আখ্যায়িত করেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ। অভিযুক্ত শিক্ষকদেরকে দ্রুত গ্রেফতার করে শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা।
রবিবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুরে থেক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে রংপুর মহানগরের ২৮ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের এক মানববন্ধন কর্মসূচিতে এসব দাবি জানানো হয়।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ‘যারা দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম ও ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত পতাকার মূল্য বোঝে না, তাদের এই দেশে থাকার অধিকার নেই। তারা এই দেশ ও জাতির শত্রু। অতিদ্রুত পতাকা অবমাননার সাথে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করে শাস্তির আওতায় না আনলে কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবে আওয়ামী লীগ।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, বিজয়ের সুবর্ণ জয়ন্তীর দারপ্রান্তে এসেও দেশে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা বিরোধিরা বারবার দেশকে সাম্প্রদায়িক করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। বিজয় দিবসে জাতীয় পতাকাকে অবমাননা করে অভিযুক্ত শিক্ষকরা প্রমাণ করেছে তারা একাত্তরের পরাজিত শক্তি এবং তারা মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুকে অন্তরে লালন করে না। তারা বিশ্ববিদ্যালয়কে পাকিস্থান বানানোর প্রচেষ্টায় রয়েছেন। তারা এতোদিন গোপনে জামায়াত বিএনপির এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে আসছিলেন এবার তারা প্রকাশ্যে এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে।
তারা বলেন, পতাকার ডিজাইন পরিবর্তন করে তারা বাংলাদেশের মানচিত্রের উপর হানা দিয়েছে। অভিযুক্তরা। তারা পতাকাতে বৃত্ত না দিয়ে, চারকোণার মতো আকৃতি দিয়েছে। কী উদ্দেশ্য? কেন পতাকার ডিজাইন পরিবর্তন করা হলো? ১/১১-এর কুশীলব না স্বাধীনতা বিরোধী, কারা তারা, কে পেছনে তা জনগণ জানতে চায়।
তারা আরো বলেন, এটা কোন খেলনা নয় যে পতাকার পরিবর্তন করা যায়। জাতীয় পতাকা আইন অনুযায়ী এটা অপরাধ। রাষ্ট্রবিরোধী কাণ্ড। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এটাই প্রধান কর্মসূচি! আলোকসজ্জাও হয়নি ক্যাম্পাসে। ছবিতে যারা আছেন তাদের একজন ডিন, হিসাব দফতরের পরিচালক, সিন্ডিকেট সদস্য, একজন প্রভোস্ট, কয়েকজন সহকারি প্রভোস্ট, দুইজন সহকারী প্রক্টর। সবাই দায়িত্বশীল, উপাচার্যের নিয়োগপ্রাপ্ত ও ঘনিষ্ঠজন।
ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি তৌহিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নওশাদ রশিদ, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ওবায়দুর রহমান ময়না, সাংগঠনিক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার শাহাদাৎ হোসেন, সদস্য ইদ্রিস আলী, ৩২ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি মাহবুবুর রহমান, মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আসিফ, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ফয়সাল আজম ফাইন প্রমুখ।
এর আগে পতাকা অবমাননার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষক এবং সাবেক এক ছাত্রলীগের নেতা রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ এনে ভিসি প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহকে প্রধান আসামি করে মেট্রোপলিটন পুলিশের তাজহাট থানায় এজাহার দায়ের করেন। এঘটনায় রংপুর জেলা প্রশাসন তিন সদস্যদের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
উল্লেখ্য, বিজয় দিবস উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা স্মারকে বিকৃত পতাকা ধরে দাড়িয়ে থাকা ভাইরাল ছবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে 'অবৈধভাবে' নিয়োগ পাওয়া শিক্ষক ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোস্ট (চলতি দায়িত্ব) তাবিউর রহমান প্রধান, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরীর পরিচালক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. সরিফা সালোয়া ডিনার স্বামী প্রফেসর ড. পরিমল চন্দ্র বর্মন,অর্থ ও হিসাব দফতরের পরিচালক ও বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আর এম হাফিজুর রহমান সেলিম, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হোসেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ও মার্কেটিং বিভাগের সহকারি অধ্যাপক ও মাসুদুল হাসান, সহকারি প্রক্টর ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সহকারি প্রভোস্ট প্রদীপ কুমার সরকারকে দেখা যায়।
এছাড়াও পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষক ড. রশিদুল, শাহজামান তপু, চার্লস ডারউইন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সহকারি প্রোভোস্ট ও ইতিহাসের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের প্রভাষক সোহাগ আলী, একই হলের সহকারি প্রভোস্ট ও রসায়ন বিভাগের প্রভাষক শারাফাত কাইয়ুম, শহীদ মুখতার ইলাহি হলের সহকারি প্রভোস্ট ও ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক শামীম হোসাইন, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক রাম প্রসাদ, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রভাষক মো: রহমতউল্লাহ, পদার্থবিজ্ঞানের প্রভাষক আবু সাইদ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এমদাদুল হককেও দেখা যায়।###