ভাস্কর্য ইস্যুতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের সঙ্গে বৈঠক করেছেন দেশের কওমি মাদ্রাসার শীর্ষ আলেমরা। কওমি মাদ্রাসার সম্মিলিত শিক্ষা বোর্ড- হাইয়াতুল উলইয়ার চেয়ারম্যান আল্লামা মাহমুদুল হাসানের নেতৃত্বে আলেমরা এতে অংশ নেন।
গতকাল সোমবার রাতে দীর্ঘ সময় নিয়ে চলা এই বৈঠকের ব্যাপারে আজ (১৫ ডিসেম্বর) মঙ্গলবার গণমাধ্যমকে ব্রিফ করেছেন আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
তবে ওই ব্রিফিংয়ে কয়েকজন সাংবাদিকের ঔদ্ধত্ব আচরণ ও কিছু মন্তব্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বোদ্ধামহল। বিশেষ করে ব্রিফিংয়ের অনুষ্ঠানে স্পষ্টই শোনা যাচ্ছিলো এক সাংবাদিক বলছিলেন - 'আমরা হতাশ, ওরা (হুজুররা) যা নিয়ে কথা বলছে তাতে মাইরের উপর ঔষধ নেই'। একজন স্বরাষ্টমন্ত্রীর সামনে কিভাবে একজন সাংবাদিক এমন ঔদ্ধত্বপূর্ণ ও উসকানীমূলক কথা বলতে পারে তা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা চলছে তুমুলভাবে।
তবে এই কথাটি কে বলেছে তিনি কোন মিডিয়ায় কাজ করেন তা বিস্তারিত জানা যায়নি। বিষয়টি নিয়ে কয়েকজন সাংবাদিক অনুসন্ধান করছেন বলেও জানিয়েছেন পাবলিক ভয়েসকে।
বিষয়টি নিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দেশের প্রথম সারির একজন সাংবাদিক বলেন এ ধরনের কথাবার্তা অবশ্যই স্বাভাবিক পরিস্থিতি বিনষ্ট করবে একজন সাংবাদিকের কাজ এ ধরনের উস্কানিমূলক কথাবার্তা বলা নয় বরং উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সমাধানমূলক আচরণই একজন সাংবাদিকের কাজ হওয়া উচিত।
দুপুরে সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আলেমদের সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়েছে। আলোচনা চলবে। আলোচনার মাধ্যমে আমরা ঐকমত্যে আসতে পারবে ইনশা আল্লাহ।’
তিনি আরো বলেন, ‘শীর্ষস্থানীয় আলেমদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। গত ৫ ডিসেম্বর আলেমরা আলোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বরাবর চিঠি দেন। সেসব বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। আলেমরাও ধারণ করেন সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধুকে। আলোচনা যে শুরু হয়েছে তা চলবে। আলাপ শুরু হয়েছে, এ আলাপ চলবে।’
‘আলেমরা চান, আল্লাহর ৯৯ নামখচিত একটি মুজিব মিনার নির্মাণের। কুতুব মিনারের মতো একটি মুজিব মিনার নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছেন তারা। আলেমরা কোনো ধরনের অরাজকতা ও রাজপথের আন্দোলন পরিহার করে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।’
আলেমদের সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ‘নতজানুর রাজনীতি আওয়ামী লীগ করে না। আমরা সংবিধানের বাইরেও যাব না, কারো ধর্মানুভূতির ওপরও আঘাত করব না। ভাস্কর্য থাকবে না এমন আলোচনা হয়নি। আলেমরা ভাস্কর্যের স্থলে মিনার করার প্রস্তাবনা দিয়েছে। এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি এখনও। আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হবে। ভাস্কর্য নির্মাণ কাজ চলছে। চলবে।’
আলেম-ওলামারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করতে চেয়েছেন জানিয়ে আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ‘তাদের সেই প্রস্তাব আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাব। এ ব্যাপারে তিনিই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আলেম ওলামারা ফেসবুকের অপপ্রচার বন্ধে আমাদের সজাগ হতে বলেছেন। তারা বলেছেন, কোনও রকম আন্দোলন তারা করবেন না এবং কেউ যেনো ভাঙচুর করতে না পারে তারও ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। তারা পাঁচটি দাবি জানিয়েছেন। সেসব বিষয়ে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ঐক্যমতে পৌঁছা যাবে।’
আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল আরও বলেন, আলেমরা দেশের বর্তমান অবস্থা, আমাদের করণীয় নিয়ে তারা আলোচনা করেছেন। আমরা আশা করি আলাপের মাধ্যমে সমস্ত সমস্যা সমাধান হবে। আমরা ঐক্যমতে পৌঁছাতে পারব। তারাও হৃদয় দিয়ে ধারণ করেন সর্বকালের সর্বশেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তারা এটাও জানিয়েছেন যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন খাঁটি মুসলমান।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ভাস্কর্য ইস্যুকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে যে উত্তেজনা ছড়ানো হচ্ছে তা বন্ধ করার জন্য আলেম-ওলামারা সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, ‘আলেম- ওলামারা বলেছেন, তারা যা বিশ্বাস করেন না এমন প্রচারণাও ফেসবুকে চলছে। ফেসবুকে অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সরকারকে কঠোর হতে পরামর্শ দিয়েছেন তারা।’
এর আগে গত ৫ ডিসেম্বর রাজধানীর যাত্রাবাড়ী মাদ্রাসায় শীর্ষ আলেমদের বৈঠক থেকে ভাস্কর্য ইস্যু নিয়ে পাঁচ দফা প্রস্তাব জানানো হয়। ওই বৈঠক থেকেই সরকারের সঙ্গে আলোচনার সিদ্ধান্ত হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল সোমবার রাতে কওমি মাদ্রাসার সম্মিলিত শিক্ষা বোর্ড হাইয়াতুল উলইয়ার চেয়ারম্যান আল্লামা মাহমুদুল হাসানের নেতৃত্বে আলেমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় বৈঠক করেন। এতে আরো উপস্থিত ছিলেন আল্লামা ফরিদ উদ্দীন মাসউদ, মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, মাওলানা নূরুল ইসলাম জিহাদী, মাওলানা মাহফুজুল হক, মাওলানা মুসলেহ উদ্দিন গওহরপুরী।
বৈঠকের ভিডিওটি দেখুন :
আই.এ/