সম্প্রতি বাংলাদেশের আলোচিত ইস্যু ভাস্কর্য/মূর্তি নিয়ে গত ৫ ডিসেম্বর যাত্রাবাড়ি বড় মাদরাসায় অনুষ্ঠিত হওয়া দেশের সকল শীর্ষ আলেমদের বৈঠক থেকে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী বরাবর উত্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়।
সিদ্ধান্ত মোতাবেক বেফাকের সভাপতি ও আল হাইআতুল উলয়ার চেয়ারম্যান আল্লামা মাহমুদুল হাসানের নেতৃত্বে আলেমদের একটি প্রতিনিধি দল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সাথে বৈঠক করেন।
বৈঠক বিষয়ে বিস্তারিত বিবরণে জানা গেছে - সরকারের পক্ষ থেকে বৈঠকটি অত্যন্ত ইতিবাচকভাবে দেখা হয়েছে এবং প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে একটি সিদ্ধান্ত জানানো হবে বলেও আশ্বাস দেয়া হয়েছে।
বৈঠকটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন - বৈঠক আহবায়ক কমিটির শীর্ষ সদস্য মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী।
তিনি জানান - সরকারের ঊর্ধতন মহলের সাথে ১৪.১২.২০২০ রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সরকারী বাসভবনে শীর্ষ উলামায়ে কেরামের প্রতিনিধি দলের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৈঠকে আল্লামা মাহমুদুল হাসান শায়খে যাত্রাবাড়ির নেতৃত্বে নয় সদস্যের দলটি তাদের পরামর্শ ও দাবি তুলে ধরার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর মতামত নিয়ে পরবর্তী বৈঠকে সরকারী পক্ষ তার সিদ্ধান্ত জানানোর কথা বলেন।
আলোচনার সূচনা করেন আল্লামা মাহমুদুল হাসান। প্রধানমন্ত্রীকে পাঠানো তার পত্রের বিবরণ পেশ করেন। যাত্রাবাড়ি শীর্ষ বৈঠকের প্রস্তাব পাঠ করেন বেফাকের মহাসচিব, জামিয়া রাহমানিয়ার প্রিন্সিপ্যাল মাওলানা মাহফুজুল হক। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর অনুরোধে বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন বেফাকুদ্দীনিয়ার সভাপতি আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ। ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর অনুরোধে এ বিষয়ে মতামত পেশ করেন ইসলামী ফাউন্ডেশনের গভর্নর ও গহরডাঙ্গা মাদরাসার মুহতামিম মুফতি রুহুল আমীন।
এছাড়াও সেখানে আরও উপস্থিত ছিলেন - মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, মাওলানা নূরুল ইসলাম জিহাদী, মাওলানা মুসলেহ উদ্দিন গওহরপুরী, মাওলানা মুসলেহ উদ্দীন রাজু, মাওলানা নূর আহমদ কাসেম প্রমূখ।
উলামা প্রতিনিধি দলের সম্মিলিত মতামত, সিদ্ধান্ত, প্রস্তাব, পরামর্শ ও ভবিষ্যত কর্মসূচি নিয়ে উলামায়ে কেরাম ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয়ের আহবানে এই অভাজন ইস্যুর পূর্বাপর, ৫ তারিখের যাত্রাবাড়ি শীর্ষ বৈঠক, দেশ-জাতির কল্যাণে আলেমসমাজের ভূমিকা, দেশের উদ্ভূত পরিস্থিতি, একটি মহলের সুপরিকল্পিত উগ্রতা ও উস্কানি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং এই মুহূর্তে রাষ্ট্র ও সরকারের করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করি। যাতে বৈঠকে অংশগ্রহণকারী সকল পক্ষের সামনে গোটা বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায় বলেন জানান তিনি।
এছাড়াও ধর্ম সচিব, সহকারী স্বরাষ্ট্র সচিব ( জন নিরাপত্তা), সহকারী স্বরাষ্ট্র সচিব ( রাজনৈতিক) সহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা গুরুত্বপূর্ণ প্রতিটি পয়েন্ট নোট নেন বলেও জানিয়েছেন মিটিংয়ের সূত্র।
মিটিংয়ের প্রসিডিংস কনফিডেনসিয়াল বলে শীর্ষ উলামায়ে কেরাম বিষয়টি সমাধানের আগে মিডিয়ার সামনে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিষয়টি প্রেসের কাছে প্রকাশ করার অনুরোধ জানান।
তবে আল্লামা মাহমুদুল হাসান কেবল লিখিত এতটুকু রিপোর্টই মিডিয়াকে জানাতে সম্মত হয়েছেন যা এখানে প্রকাশ করা হয়েছে।
বিষয়টি প্রকাশকারী মাওলানা নদভী আরও জানান - দেশী-বিদেশী মিডিয়ার অসংখ্য ফোনের জবাবেও এতটুকুই বলা হচ্ছে। কারণ আমরা সরকারকে চাপমুক্ত রেখে ঠাণ্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় ও সুযোগ দিতে চাই। আল্লামা মাহমুদুল হাসানের এ সিদ্ধান্ত ও শীর্ষ উলামায়ে কেরামের পরামর্শের আলোকেই মন্ত্রীর বাসভবনের সামনে অপেক্ষারত কোনো ইলেকট্রনিক, অনলাইন ও প্রিন্ট মিডিয়াকেই আমরা কোনো মতামত দেইনি। বলেন নদভী।
অপরদিকে বৈঠকের সূত্র অনুসারে জানা যায় - দুয়েক জনের সম্পূরক মতামতের পর ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ও সবশেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বক্তব্য রাখেন এবং জানান যে - আলোচনা চলমান থাকবে। এরপর একটি উত্তম সমাধানের আশা নিয়ে তখনকার মতো বৈঠক শেষ হয়।
একই সাথে সবাই আশাবাদী, বিষয়টির একটি সুন্দর সমাধানের।
তবে আলেমদের পক্ষ থেকে একটি বিষয় পরিস্কার জানানো হয়েছে যে - আলেমগণ তাদের শরীয়ত নির্ধারিত সিদ্ধান্তে অটল আছেন এবং থাকবেন। সরকার কোন্ পথ বেছে নেবে, তা তার নিজের বিবেচনা। তবে গোটা আলোচনাটাই ছিল ইতিবাচক ও গঠনমূলক।