পাবলিক ভয়েস: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভরাডুবির পর টালমাটাল বিএনপি। ভোট কারচুরি ও ডাকাতির অভিযোগ তুলে ফল প্রত্যাখ্যান করেছে দলটি। পাশাপাশি দলের সাংগঠনিক দূরাবস্থা কাটিয়ে উঠার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
আন্দোলন না দলীয় সংস্কার এই নিয়ে বিএনপি নেতারা যখন দোলাচলে তখনই চলে এলে উপজেলা নির্বাচন ও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে (ডিএনসিসি) মেয়র পদে উপ-নির্বাচন।
এই দুটি নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ে ব্যস্ত ক্ষমতাসীন আ.লীগ। ডিএনসিসিতে ইতিমধ্যে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের কাছে মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করেছে দলটি।
অন্যদিকে বিএনপি বর্তমান সরকার ও ইসির অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে দলটি যদি উত্তর সিটির উপনির্বাচনে অংশ নেয় সেক্ষেত্রে আগের প্রার্থী তাবিথ আউয়ালকেই মনোনয়ন দেবে বিএনপি।
এদিকে উত্তর ও দক্ষিণের ৩৬টি সাধারণ এবং ১২টি সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে প্রার্থী চূড়ান্ত করতে ব্যস্ত আ.লীগের সংশ্লিষ্ট নেতারা। বিএনপি কাউন্সিলর পদে প্রার্থী বাছাই শুরু করেনি। এক্ষেত্রেও মেয়রের মতো কাউন্সিলর পদে তাদের একটি তালিকা তৈরি করা আছে।
গত বছরের জানুয়ারি মাসে নির্বাচন স্থগিত হওয়ার আগে বিএনপির নেতারা কাউন্সিলর পদেও তালিকা করেছিলেন। এবার ভোটে অংশ নিলে সেই তালিকা ধরেই কাউন্সিলর পদের প্রার্থীদের দলীয় সমর্থন দেবে বিএনপি।
সদ্যসমাপ্ত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট ডাকাতি ও ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ তুলে ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে বিএনপি। বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে অংশ না নেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
এ কারণে বিগত সময়ে সব স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নিলেও এবার তেমন আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। সংসদ নির্বাচনের অনিয়ম সংক্রান্ত অভিযোগগুলো ইসি আমলে না নেয়ায় তাদের মধ্যে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ক্ষমতাসীনরা কারচুপির আশ্রয় নিলে বর্তমান কমিশন কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারবে না বলে মনে করছেন তারা।
তাই নির্বাচনে অংশ নিয়ে বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে বৈধতা না দেয়ার পক্ষে দলটির বেশির ভাগ নেতাকর্মী। এসব বিবেচনায় নির্বাচনে অংশ নেয়ার সম্ভাবনা কম। তবে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি দলের নীতিনির্ধারকরা।
কয়েকদিনের মধ্যে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বৈঠকে বসবেন তারা। সেখানেই নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়ার বিষয় চূড়ান্ত হবে। তবে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নিলে মেয়র পদে প্রার্থীর ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন হবে না। স্থগিত হওয়ার আগে তাবিথই ছিল বিএনপির প্রার্থী।
এবারের উপনির্বাচনেও তাবিথ আউয়ালকেই মেয়র পদে মনোনয়ন দেবে দলটি। একইভাবে কাউন্সিলর পদেও দলের সমর্থন দেয়া হবে। প্রসঙ্গত স্থগিত হওয়ার আগে এ পদে আ.লীগের প্রার্থী ছিলেন আতিকুল ইসলাম। এবারও তিনিই এগিয়ে আছেন।
২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হক মারা গেলে ওই পদটি শূন্য হয়। মেয়র পদে উপনির্বাচনসহ দুই সিটিতে নতুন যুক্ত হওয়া ৩৬টি ওয়ার্ড এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর নির্বাচনের তফসিল দেয় ইসি। এতে গত বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের দিন নির্ধারণ করেছিল। কিন্ত এর বিরুদ্ধে রিট করলে আদালত নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করেন। গত ১৬ জানুয়ারি উচ্চ আদালত রিট খারিজ করে দিলে নির্বাচনের সুযোগ তৈরি হয়। এরপর ২২ জানুয়ারি নির্বাচন কমিশন ফের তফসিল ঘোষণা করে।
নির্বাচনে অংশ নেয়া ও প্রার্থী বাছাইয়ে আগ্রহ নেই বিএনপিতে। তফসিল ঘোষণা হলেও এ ব্যাপারে এখনও কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, আদালতের নির্দেশের পর দলীয় ফোরামে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়নি। তবে আমি মনে করি এই সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে যাওয়া উচিত হবে না।
কারণ এই সরকার গণতন্ত্র বলতে শুধু চুরি আর ভোট ডাকাতি বুঝে। তিনি বলেন, সর্বশেষ সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছিল উপজেলা নির্বাচনের প্রথম দুই ধাপ। সেখানে যখন আ.লীগ দেখেছে অধিকাংশতেই তাদের প্রার্থীদের ভারাডুবি হচ্ছে, তারপর থেকে তারা এই ভোট ডাকাতি শুরু করেছে। এরপর আর কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু করেনি। সদ্যসমাপ্ত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আ.লীগ প্রমাণ করে দিয়েছে তাদের অধীনে নির্বাচনের নমুনা কী হতে পারে।
এদিকে এ মুহূর্তে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন নিয়ে বিএনপি নেতারা অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়াদ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এ সময় নতুন নির্বাচন দিতে হবে কেন?
২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর প্রায় ১৪ মাস আগে আনিসুল হকের মৃত্যুর কারণে যখন মেয়র পদ শূন্য হল, তখন নির্বাচন হল না কেন? ওই নীতিনির্ধারক আরও বলেন, আমরা এটাও মনে করছি, একাদশ সংসদ নির্বাচনে যে ‘অনিয়ম’ ও ‘ভোট কারচুপি’ হয়েছে, তা নিয়ে এখন দেশে-বিদেশে সব জায়গাই আলোচনা চলছে। এই ইস্যুটি আড়াল করতেই ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন দিতে চাইছে সরকার।
বিএনপি নেতারা বলেন, উত্তর সিটি কর্পোরেশনে গতবারের মেয়র নির্বাচন কেমন হয়েছিল, তা আমরা ভুলে যাইনি। এর সঙ্গে রয়েছে সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনের বাস্তবতা। এটা স্পষ্ট- মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগের ক্ষমতা এখন আর নেই। দলের নেতাকর্মীরাও মনে করেন, ‘নিয়ন্ত্রিত’ নির্বাচনে গিয়ে মামলা-হামলার সংখ্যা আর বাড়িয়ে লাভ নেই।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেন, এ সরকার এবং সিইসির অধীনে নির্বাচনে যে ভোট কারচুপি হয়, তা দেশ-বিদেশে সবার কাছে পরিষ্কার। তাই আ.লীগের অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার কোনো কারণ দেখছি না।
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কারচুপি ও অনিয়মের পর বর্তমান সরকার ও কমিশনের অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার মানে নেই। তারপরও দলের নীতিনির্ধারকরা এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।