ইসমাঈল আযহার
পাবলিক ভয়েস
ভাস্কর্য ইস্যুতে সরকার দেশের হকপন্থী আলেমদের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাবে রাজি হয়েছে। যাত্রাবাড়ী বড় মাদ্রাসার সিনিয়র মুহাদ্দিস মাওলানা নেয়ামতুল্লাহ আল ফরিদী জানিয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়ার উদ্দেশে চিঠি তৈরির প্রস্তুত করা হচ্ছে। দু-একদিনের মধ্যে সাক্ষাতের ব্যাপারে আশাবাদও ব্যক্ত করেছিলেন তিনি। প্রস্তুতকৃত সেই চিঠি প্রধানমন্ত্রীর নিকট প্রেরণ করার পরই এই প্রতিক্রিয়া এল।
এক বিবৃতিতে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, আলোচনার মাধ্যমে ভাস্কর্য ইস্যুটি সুরাহা করা হবে। তিনি আরও জানান, দুই পক্ষের মধ্যে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা চলছে। এখন আলেমদের কয়েকটি দল এবং হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী বা সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সাথে বৈঠক চেয়ে যে চিঠি দেয়া হয়েছে, সে ব্যাপারে তারা ব্যবস্থা নিচ্ছেন।
জানা গেছে, আলোচনার প্রক্রিয়ায় এখন আগামী রোববার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে আলেমদের একটি প্রতিনিধি দলের অনানুষ্ঠানিক বৈঠক হতে পারে।
গত শনিবার (৫ ডিসেম্বর) সকাল ১১ টায় রাজধানী যাত্রাবাড়ি মাদ্রাসায় বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড- বেফাকের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, আল-হাইয়াতুল উলয়া লিল-জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ-এর চেয়ারম্যান ও গুলশান আজাদ মসজিদের খতিব আল্লামা মাহমূদুল হাসানের নেতৃত্বে ভাস্কর্যের ব্যাপারে নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যাসহ পাঁচ দফা প্রস্তাব রেখেছে দেশের আলেমরা।
পাঁচটি প্রস্তাবনা
১. প্রস্তাবনা: মানব মূর্তি ও ভাস্কর্য যে কোনো উদ্দেশ্যে তৈরি করা ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। কোন মহল বা কোন নেতাকে ভাস্কর্য বানিয়ে শ্রদ্ধা জানানো শরীয়ত সম্মত নয়। এতে মুসলিম মৃত ব্যক্তির আত্মার কষ্ট হয়। কারো প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন ও তার স্মৃতিকে জাগ্রত রাখতে মূর্তি ও ভাস্কর্য নির্মাণ না করে শতকরা ৯০ ভাগ জনগণের বিশ্বাস ও চেতনার আলোকে কুরআন-সুন্নাহর সমর্থিত কোন উত্তম বিকল্প সন্ধান করাই যুক্তিযুক্ত।
২. প্রস্তাবনা: আমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অবমাননা, কার্টুন, বিষোদগার করা ইত্যাদির তীব্র নিন্দা জানাই। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সময়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নাশের উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ডে বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি অবমাননাকর আচরণের উপর কঠোর নজরদারি এবং দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে এসব অপকর্ম বন্ধ করা হোক।
৩. প্রস্তাবনা: বিগত সময়ে ইমানী আন্দোলনে গ্রেফতারকৃতদের নিঃশর্ত মুক্তি দান ও মামলা প্রত্যাহার করা হোক। এ সংক্রান্ত বিষয়ে সারাদেশে আলেম-ওলামা ও ইমাম-খতীবসহ সাধারণ মুসলমানদের উপর সব ধরনের হয়রানি বন্ধ করা হোক। ধোলাইপাড় চত্বরের পাশে ক্ষতিগ্রস্থ পুনঃনির্মিত মসজিদ নামাজের জন্য অবিলম্বে উম্মুক্ত করে দেওয়া হোক।
৪. প্রস্তাবনা: সম্প্রতি শব্দ দূষণ ও জনদুর্ভোগের অজুহাতে দীনি মাহফিলে লাউডস্পিকার ব্যবহারে প্রশাসনিক জটিলতা সৃষ্টি তৎপরতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। অপরদিকে সাধারণ শব্দদূষণ তথা উচ্চস্বরে গান-বাজনা ইত্যাদি বিষয়ে কোনো প্রশাসনিক উদ্যোগ নেই বললেই চলে। কেবল ওয়াজ মাহফিল নিয়ে শব্দ দূষণের অজুহাতে বিশেষ নির্দেশনা অনভিপ্রেত। অতএব জনগণের কল্যাণের পথে অনুপ্রাণিত করার লক্ষ্যে সকল দ্বীনী মাহফিল যথানিয়মে অনুষ্ঠানের অবাধ সুযোগ প্রদান করা হোক।
৫. প্রস্তাবনা : যে সকল বিষয় শরীয়তে নিষিদ্ধ বা হারাম সেসব বিষয়ে কুরআন সুন্নাহর আলোকে সঠিক বক্তব্য তুলে ধরা আলেমদের দায়িত্ব। অথচ একশ্রেণীর মানুষ আলেমদের বিরুদ্ধে বিষোদগার ও দায়িত্বহীন আচরণ করছে। কেউ কেউ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনাশের উস্কানি দিচ্ছে। এসবের খোঁজ-খবর রাখা এবং শান্তিপূর্ণ সমাধান খুঁজে বের করা সরকার ও প্রশাসনের দায়িত্ব। উস্কানিমূলক বক্তব্য অবমাননাকর মন্তব্য ও গান মিছিল-মিটিং সমাজে অস্থিরতা বৃদ্ধি করবে। ওলামায়ে কেরাম এসব বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা সত্ত্বেও সাধারণ মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেওয়ার আশঙ্কা প্রবল। সরকারকে এসবের উপযুক্ত প্রতিবিধান করতে হবে অন্যথায় দেশব্যাপী উদ্বৃত্ত বিশৃংখলা অস্থিরতায় সরকার এড়িয়ে যেতে পারবে না। বিশেষ করে ইসলাম দিন ও বাংলাদেশবিরোধী দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র অনাকাঙ্ক্ষিত হস্তক্ষেপ করা সরকারের অন্যতম দায়িত্ব।
আই.এ/