শেখ ফজলুল করীম মারুফ
মতামত: "প্রগতিশীল, মুক্তচিন্তা, মুক্তবুদ্ধি চর্চা, উদারবাদ, বাক স্বাধীনতা, মানবাধিকার বা পরমতসহিষ্ণুতা" শব্দাবলী বামপন্থী রাজনীতির প্রধান পুঁজি এবং "পশ্চাৎপদ, সংকীর্ণমনা, মৌলবাদী, প্রতিক্রিয়াশীল বা সাম্প্রদায়িকতা" শব্দাবলী তাদের প্রধান হাতিয়ার।
তারা যখন কারো বিরোধিতা করে, তখন এসব শব্দাবলী ব্যবহারের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে বয়ান তৈরী করে এবং জনমনে তাদের সম্পর্কে একটা ভয়ঙ্কর ধারণা তৈরীর চেষ্টায় লি পাত থাকে।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে বামপন্থিরা ইসলামকে শত্রু হিসেবে নিয়েছে। যদিও শত্রু বানানোর বস্তুগত কোনো কারণ নেই। বামপন্থী এবং ইসলামপন্থী উভয়ই আদর্শভিত্তিক বৈপ্লবিক পরিবর্তন চায়। এ হিসেবে উভয়ের শত্রু হওয়ার কথা বুর্জোয়ারা (পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থার ধনী)।
কিন্তু অদ্ভুতভাবে বামপন্থীরা তাদের চিরন্তন শত্রু বুর্জোয়াতন্ত্রের সঙ্গে আঁতাত করে ইসলামপন্থীদের বিরোধিতা করে! এবং বিরোধিতা করতে গিয়ে ইসলাম সম্পর্কে মিথ্যা, অবান্তর, ভিত্তিহীন ও অবাস্তব বয়ান তৈরী করে।
তাদের বয়ানমতে ইসলাম "প্রতিক্রিয়াশীল, ধর্মান্ধ, সাম্প্রদায়িক বা হিংস্র" ইত্যাদি। আর তারা হলো, প্রগতিশীল, উদার, পরমতসহিষ্ণু ইত্যাদি।
বাস্তবতা হলো, পুরো বিষয়টা উল্টো। ওরা ইসলামকে যেসব শব্দে চিত্রায়িত করে তার সবগুলোই তাদের মধ্যে বিদ্যমান এবং তারা নিজেরা যেসব শব্দে নিজেদের মহিমান্বিত করে তার সবগুলোই ইসলামী রাজনীতিকদের মাঝে রয়েছে।
ডাকসু নির্বাচন নিয়ে বামপন্থীদের আচরণ তাদের চরিত্রের বিভৎস ও কুৎসিত দিকগুলো নগ্নভাবে প্রকাশ করে দিয়েছে।
উদারবাদের দাবী হলো, সমাজের সকল পক্ষকে তাদের কথা বলতে দিতে হবে। সবাইকে সমান রাজনৈতিক ও মানবিক অধিকার দিতে হবে। সাধারণ মানুষ সবার কথা শুনে যার যেটা ভালো লাগবে সে সেটা গ্রহন করবে।
উদারবাদের এই নীতিতেই আমরা বলেছি, "এসো! ক্যাম্পাসের একই মঞ্চে সবাই যার যার কথা বলি। তোমরা মার্কসের কথা বলো, আমরা মুহাম্মাদ স. এর কথা বলি। শিক্ষার্থীরা যেটা ভালো মনে করে সেটা গ্রহন করবে"। কিন্তু তারা 'বামান্ধ'র মতো বলছে, ইসলামপন্থীদের নিষিদ্ধ করতে হবে!
আধুনিকতার দাবী হলো, কাউকে শক্তিপ্রয়োগ করে তার মতামত প্রকাশে বাঁধা দেওয়া যাবে না। কাউকে জোড় করে কোনো মতবাদ মানতে বাধ্য করা যাবে না। সেই মতে আমরা গতকয়েক বছর ধরে তাদের সঙ্গে আলোচনা করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। কখনও বামপন্থীদের নিষেধাজ্ঞার দাবী তু্লিনি। কিন্তু তারা প্রতিক্রিয়াশীলদের মতো বারংবার আমাদের নিষিদ্ধ করার দাবী করেই যাচ্ছে!
সুষ্ঠু রাজনীতির দাবী হলো, যুক্তির বিরোধিতা হবে যুক্তি দিয়ে। কৌশলের বিরোধিতা হবে কৌশল দিয়ে। সেমতে আমরা দাবী করেছি, ক্যাম্পাসে আমাদের কাজ করতে দাও। আমাদের যুক্তি বা কৌশলের মোকাবিলায় তোমরাও পাল্টা কৌশল ও যুক্তি দাড় করাও। কিন্তু তারা দাবী করেই যাচ্ছে, ইসলামপন্থীদের নিষিদ্ধ করতে হবে! আমাদের সহ্যই করতে পারছে না তারা। আমাদের উপস্থিতি মানতে পারছে না! তারা জোড় করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের বামপন্থা গিলাতে চাচ্ছে। আর আমরা সবার সাথে সৌহার্দপূর্ণ সমঅধিকার চাইছি!
ডাকসু নির্বাচনের প্রাক্কালে আবারও প্রমানিত হলো যে, বামপন্থীরাই সবচেয়ে বেশী দলান্ধ, প্রতিক্রিয়াশীল, সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী এবং পশ্চাৎপদ এবং ইসলামপন্থীরাই সবচেয়ে উদার, প্রগতিকামী, অসাম্প্রদায়িক, আধুনিক এবং নীতিবান।
সর্বশেষ একটা সতর্কবানী উচ্চারন করি;
বামপন্থীদের কথায় ও কাজে এই দ্বিচারিতার কারণে গোটা বিশ্ব থেকে ক্রম হারিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশেও তারা সকল স্থান থেকে উপেক্ষিত হয়ে এখন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পসের সংকীর্ন জায়গায় আবদ্ধ হয়েছে।
এখন মুসলমানদের উদ্যোগে, মুসলমানদের সম্পদে মুসলিম জাতীর উন্নয়নে নির্মিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও যদি তারা এই প্রতিক্রিয়াশীল, সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী ও পশ্চাৎপদ আচরণ করে, তাহলে এখানেও তাদের জায়গা হবে না। এই ক্যাম্পাস থেকেও তারা উৎক্ষেপিত হয়ে আস্তাকুড়ে মুখ থুবড়ে পড়বে ইনশাআল্লাহ।
আরও পড়ুন :
সবার অংশগ্রহণে ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে ইশা ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ