নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে মধ্যযুগীয় কায়দায় চরম বর্বরতমভাবে স্বামীকে বেঁধে রেখে ধর্ষণচেষ্টা ও গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার মামলার প্রধান আসামি বাদলকে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। এছাড়া দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ারকে অস্ত্রসহ নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
রোববার রাতে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এ নিয়ে এ ঘটনায় মোট চারজনকে গ্রেফতার করলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
জানা গেছে, বেগমগঞ্জ থানার একলাশপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের বড়খাল এলাকায় বর্বর ঘটনাটি ঘটেছে। সেখানের এক গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে তার লজ্জাস্থানে আঘাত দেওয়াসহ তাকে ভয়ানক রকমের নিপীড়ন করা হয়েছে। ওই নারী নিজেকে রক্ষার জন্য বারবার কাকুতি-মিনতি করার পরও তারা তাকে ছাড়েনি। তবে ঠিক কী কারণে এতোটা বর্বর ও নারকীয় ঘটনা ঘটানো হয়েছে সে বিষয়ে এখনও বিস্তারিত জানা যায়নি। ঘটনা ফাঁস করলে পরিবারের সদস্যদেরকে গুম ও হত্যার হুমকি দেওয়া হয়।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী সরকারের ছত্রছায়ায় থাকা স্থানীয় প্রভাবশালী বখাটে, লম্পট ও নরপিচাশ ধরণের প্রায় ৯ জন যুবক ওই গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে বেধড়ক মারধর করে তার ভিডিও চিত্র ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেওয়ার ঘটনায় স্তব্ধ হয়ে আছে দেশের মানুষ।
ঘটনার ৩৩ দিন পর নয়জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। রোববার (৫ অক্টোবর) দিবাগত রাত ১টার দিকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে নির্যাতিতা গৃহবধূ (৩৫) বাদী হয়ে এ মামলা করেন।
তবে মামলায় গণধর্ষণের চেষ্টা করার কথা উল্যেখ করা হলেও স্থানীয়দের অভিযোগ, ওই গৃহবধূকে গণধর্ষণ করা হয়েছে। লোকলজ্জার ভয়ে গণধর্ষিতার পরিবার এ নিয়ে কথা বলতে অনীহা প্রকাশ করে। এমনকি ৩২ দিন অতিবাহিত হলেও ভুক্তভোগি পরিবার এ ঘটনায় থানায় কোন অভিযোগ দায়ের করতে পারেনি।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ২ সেপ্টেম্বর রাত ৯ টার দিকে উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের খালপাড় এলাকার নূর ইসলাম মিয়ার বাড়িতে গৃহবধূর বসতঘরে ঢুকে তার স্বামীকে পাশের কক্ষে বেঁধে রাখে স্থানীয় বাদল ও তার সহযোগীরা। এরপর গৃহবধূকে ধর্ষণের চেষ্টা করে তারা। এ সময় গৃহবধূ বাধা দিলে তারা বিবস্ত্র করে বেধড়ক মারধর করে মোবাইলে ভিডিও চিত্র ধারণ করেন।
ওসি মো. হারুন উর রশীদ জানান, পুলিশ অভিযুক্ত অপর আসামিদের গ্রেফতারে জোর তৎপরতা চালাচ্ছে। গ্রেফতার আসামিদের বিচারিক আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হবে।
নির্যাতনের ঘটনায় জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এরই মধ্যে পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেনের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ও জেলা প্রশাসক খোরশেদ আলম খানের নেতৃত্বে আরেকটি তদন্তদল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।
ভুক্তভোগী গৃহবধূর বাবা জানান, আমি নিরীহ লোক। সন্ত্রাসীদের ভয়ে কোনো কথা বলার সাহস পাই না। আমি শুধু আল্লাহর কাছে বিচার চাই।
নোয়াখালী পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন জানান, গৃহবধূকে নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। অভিযুক্তদের গ্রেফতারে এবং নির্যাতিতা পরিবারকে আইনি সহযোগিতা দিতে জেলা পুলিশের ৫টি ইউনিট মাঠে কাজ করছে।
রোববার দুপুরের দিকে ঘটনার ৩২দিন পর গৃহবধূকে নির্যাতনের ঐ ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে প্রকাশ পেলে ইতিমধ্যে তা ভাইরাল হয়ে গেলে টনক নড়ে স্থানীয় প্রশাসনের।
ঘটনার পর থেকে গত ৩২ দিন অভিযুক্ত স্থানীয় দেলোয়ার, বাদল, কালাম ও তাদের সহযোগীরা গণধর্ষিতা গৃহবধূর পরিবারকে অবরুদ্ধ করে রাখলে পুরো ঘটনা থেকে যায় স্থানীয় এলাকাবাসী ও পুলিশ প্রশাসনের অগোচরে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত মাসের (২ সেপ্টেম্বর) উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের খালপাড় এলাকার নূর ইসলাম মিয়ার বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
ভিডিওচিত্রে দেখা যায় – ভুক্তভোগী গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে তাঁর মুখমণ্ডলে উপুর্যপুরি লাথি ও বেধড়ক মারধর করতে দেখা যায়। এসময় গৃহবধূ হামলাকারীদের বহুবার পায়ে ধরে এবং বাবা-বাবা বলে ডাকলেও নির্যাতন বন্ধ রাখা হয়নি। বরং তাঁর শরীরের স্পর্শকাতর স্থানসহ সবস্থানে লাঠি দিয়ে আঘাত করে মারাত্মক আহত করে। তারা এ সময় তাঁকে ধর্ষণের চেষ্টা করে বলেও অভিযোগ পাওয়া যায়। এলাকার বাদল, কালাম ও দেলোয়ারসহ আরো কয়েকজন ব্যক্তি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে।
স্থানীয় সূত্রে আরও জানা যায়, প্রায় দেড় থেকে দুই মাস আগে এলাকার একদল বখাটে ওই গৃহবধূকে কুপ্রস্তাব দেয় এবং শারীরিক সম্পর্কের চেষ্টা করে। এভাবে তারা আরো কয়েকবার তাঁকে কুপ্রস্তাব দেয় বলে গৃহবধূ জানান। পরে বখাটেরা শারীরিক সম্পর্ক করার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে কোনো এক সময়ে তাঁকে বেদম মারধর করে ভিডিও ধারণ করে। এভাবে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হবে বলেও তারা গৃহবধূকে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকি দিয়ে আবারো শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করে। ব্যর্থ হয়ে অবশেষে আজ রোববার তারা ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। ফলে তা ভাইরাল হয়ে পড়ে।
জানা যায়, ওই গৃহবধূর সঙ্গে তাঁর স্বামীর দীর্ঘদিন বনিবনা ছিল না। তবে সম্প্রতি স্বামী তাঁর কাছে ফিরে আসেন। তাঁদের দুটি সন্তান রয়েছে। ঘটনার সময় ওই নারীর স্বামীকে ধাক্কা দিয়ে ঘর থেকে বের করে দেয় বলে অভিযোগ করেন গৃহবধূ।
এদিকে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আলমগীর হোসেনের নজরে এলে তিনি এ বিষয়ে তড়িৎ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বেগমগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, ‘পুলিশ আজ নির্যাতিতাকে তাঁর বাবার বাড়ি থেকে সন্ধ্যায় উদ্ধার করেছে। তিনি পুলিশকে জানান, আজ থেকে ২০/২৫ দিন আগে এ ভিডিও চিত্র ধারণ করা হয়। তবে, সঠিক তারিখ তিনি বলতে পারেননি।’###
এনএইচ/