প্রিন্ট এর তারিখঃ জুলাই ২৮, ২০২৫, ১:০১ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ জানুয়ারি ২২, ২০১৯, ৪:৫৭ অপরাহ্ণ

এম শামসুদদোহা তালুকদার
পবিত্র কুরআনিক নির্দেশ মতে-একটি উম্মাহর মাঝে ঐক্যবদ্ধতা ফরয আমল। উম্মাহর চালিকাশক্তি হচ্ছেন আলেম ওলামা। তবে আলেম নেতৃবৃন্দদের মাঝে ঐকতান থাকতে হবে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আলেমদের মাঝে রয়েছে শতধা বিভক্তি। এর নেপথ্যে কি হেকমত আছে, তা সংশ্লিষ্টরা জানেন, তবে বেশী জানেন আল্লাহ তায়ালা। কারণ, তিনি তাঁদের প্রত্যেকের অন্তরের খবর রাখেন।
কয়েকদিন আগে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকী পালন করেছে তাঁর দলের লোকেরা। উর্দি থেকে তিনি বাই চান্স দেশের শাসনক্ষমতায় আসীন হন। তিনি রাজনীতিকদের উদ্দেশ্যে একটা কথা বলেছিলেন, যা রাজনীতির ইতিহাস থেকে মুছে ফেলা সম্ভব নয়। "আমি পলিটিশিয়ানদের জন্য পলিটিক্স ডিফিকাল্ট করে দিবো।" তিনি এতে কতটা সফল হয়েছেন বা ব্যর্থ হয়েছেন, সেটা কমপক্ষে ৫০ ব্ৎসর পরে ইতিহাসবেত্তাগণ নির্ণয় করবেন।
তবে দেশের রাজনীতিতে আলেমগণ বড়ই ডিফিকাল্টের মাঝে আছেন। তাঁদের জন্য প্রচলিত রাজনীতি সত্যিই ডিফিকাল্ট হিসেবে ধরা দিয়েছে। ইসলামী রাজনীতি যারা করছেন, তাঁদের মাঝে ঐক্য নাই। কেন তাঁরা এক হয়ে রাজনীতি করেন না? এ প্রশ্নটা কিন্তু যে কোন সাধারণ মানুষের। এ প্রশ্নের যুতসই উত্তর আসলেই অনেকের কাছে নেই।
নব্বই'র পরের গনতান্ত্রিক ধারাবাহিকতায় ইসলামী রাজনীতিতে গতিশীলতা পায়। তবে, ইসলামী রাজনীতির নেতৃত্ব তখন জোটবদ্ধতার কাদায় আটকে যায়। বিএনপিকেন্দ্রিক জোটে কয়েকটি আসনে ইসলামিস্টরা বিজয়ীও হয়। এসব ইতিহাস সবাই জানেন।
২০১৩ সালে 'হেফাজতে ইসলাম' আবির্ভূত হলে ইসলামিক নেতৃত্ব তখন হেফাজতবান্ধব হয়ে উঠে। কারণ, হেফাজতের মধ্যে তখন ইসলামী নেতৃবৃন্দ একাকার হয়ে যায়। হেফাজত যদিও অরাজনৈতিক সংগঠন, কিন্তু এর নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন ইসলামী দল থেকে আমদানিকৃত।
'ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ' একটি ইসলামী দল। এ দলটি একটা নীতি এখন পর্যন্ত ধরে রেখেছে, প্রচলিত জোট তথা বিএনপি বা আওয়ামী লীগের কোন জোটে শামিল না হওয়া। একলা চলো নীতি আর কি! এর ফলে কি ফায়দা হয়েছে, তা সবাই অবলোকন করছে। ঐ সব ইসলামী দলগুলো জোটের রাজনীতির চোটে আজ বহুধা বিভক্ত ও দেশের রাজনীতিতে চরম উপেক্ষিত। দলগুলো ভেংগে-চুরে আজ অস্তিত্ব সংকটে। প্রায় দু যুগ ধরে জোটের আওতায় রাজনীতি করার কারণে- দেশব্যাপী দলগুলোর কাঙ্খিত বিকাশ ঘটেনি। আজ হয়তো অস্ফুট স্বরে তারা আহাজারি করছেন, কি পেলাম! আর কি হবার কথা ছিল।
গত নির্বাচনে ইসলামী দলগুলোর প্রতি আওয়ামী ও বিএনপি জোট চুড়ান্ত ভাবে বে-ইনসাফী করেছে। জোটের রাজনীতি করতে গিয়ে তারা অপমানিত আর উপেক্ষিত হয়ে আজ সর্বস্বান্ত। ফলাফল জিরো। আসলে সমাজ বা রাষ্ট্রে ইসলাম কায়েমের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হলে বিএনপি বা আওয়ামী লীগের সাথে আঁতাত করে তা সম্ভব নয়, এটা এখন উনারা বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন। অথচ এ সরল হিসাবটা বহু আগেই কষেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এবং একলা চলো নীতিতে অটল থেকেছে।
এখন একটি ঐক্য ঐক্য গেম চলছে। ইসলামী আন্দোলনের নিকট আজতক এসব দলের নেতৃবৃন্দ আদৌ প্রস্তাব দেয়নি যে, আসুন, আমরা যারা ইসলামী রাজনীতি করি তারা এক হয়ে যাই। চলুন সম্মিলিত ইসলামী জোট করি।
একমাত্র আল্লামা মামুনুল হক ফেসবুক লাইভে এসে দেশের আলেম-ওলামা অধ্যুষিত ইসলামিক দলগুলোর মাঝে ঐক্য কামণা করেছেন। আমি মনে করি, এ আহবানটা তিনি আন্তরিক ভাবেই করেছেন। তাঁর আহবানকেন্দ্রিক পক্ষে-বিপক্ষে কিছু কথাবার্তা চলছে ফেসবুক জুড়ে। সবচেয়ে যেটা বেশী আলোচিত, সেটা হলো- উনার নিজ দলের মাঝেই তো ঐক্য নাই। মাঝামাঝি দু ভাগ করা। তিনি সেটা আগে জোড়া লাগাক। আর কোন জোটে এখনো থাকলে তা ছেড়ে বেরিয়ে পড়ে প্রকাশ্যে ঘোষণা দিক, আমরা ঐ সব জোটফোটে নাই। আমরা ফ্রেশব্লাড।
এ ছাড়া অন্যান্য ইসলামী দলে রয়েছে অনেক ভাগ। এটা এত বৈচিত্রপূর্ণ যে, আমি এখনো দলগুলো ও নেতাদের নাম সহীহভাবে বলতে পারবো না। অভ্যন্তরীণ ফাটলগুলো মেরামত শেষে তারপর ঐক্যের ডাক হলে অর্থবহ হতো। ফেসবুকে তিনি ঐক্যের আহ্বান করেছেন, সেটায় আমি আয়েব দেখি না তবে পূর্নাঙ্গ নয়। এ ব্যাপারে সবার সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে হবে। এটা কাউকে না কাউকে দায়িত্ব নিতে হবে। আর এ দায়িত্বে তাঁকে দেখা যেতে পারে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ইসলামিস্টদের মাঝে ঐক্য বা সমঝোতা করতে অনীহা, কথাটা সঠিক না।
২০১৩ সালে জায়গামতো কায়দা করে আলেম ওলামাদের মাঝে স্বতন্ত্র প্লাটফর্ম করার আহ্বান করেছিলেন পীর সাহেব চরমোনাই। সে দিন তাঁকে কতটা অপমানিত হতে হয়েছিল হাটহাজারীর দারুল হাদীসে! সেটা আমরা অনেকেই জানি। মাঝে মাঝে সে ভিডিওটা দেখে এখনো শিউরে উঠি! কত দরদী আহ্বান ছিল, সেটি। ফলশ্রুতিতে, তাঁরা তখন চরমোনাইওয়ালাদেরকে একরকম একঘরে করে দেয়েছিল।
এরা কারা? এরা এক অংশ ক্ষমতায় যাবে যাবে পর্যায়ে মনে করছিলেন, অন্য অংশ তলে তলে ক্ষমতাসীনদের সাথে আঁতাত করছিলেন। এহেন প্রেক্ষাপটে পীর সাহেব চরমোনাই, মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম সাহেবের কন্ঠে আলেমদের একটি প্লাটফরমের দাবী তোলা তাদের নিকট চরম অসহ্যের ছিলো। তাঁর পাশে তখন কেউ দাঁড়াননি। সেদিন কিন্তু আজকের ঐক্য আহ্বানকারীকেও পাশে পাওয়া যায়নি।
আমি আইএবি'র একজন সমর্থক হিসাবে মতামত প্রকাশ করি। একজন অখ্যাত লেখক হিসেবে সমকালীন এজেন্ডা বিশ্লেষণের চেস্টা করি। আজ অকপটে বলতে চাই, জোটের কাছে লেজ রেখে ঐক্য করতে চাওয়াটা খামাখা। আগে ঐ পাড়া ত্যাগ করতে হবে। লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড হবে তখন। আর জোট ছেড়ে আসার ঘোষণা প্রকাশ্যে দিতে হবে।
অতঃপর ইসলাম ও উম্মাহর স্বার্থে অভিন্ন লক্ষ্য নিয়ে নেতৃবৃন্দকে আলোচনায় বসতে হবে, তখন ফয়সালা বের হয়ে আসবে। দ্রুত দৃশ্যমান ফলাফল না মিললে আলোচনা চলতে থাকবে। একদিন না একদিন আলেমরা এক কাতারে দাঁড়াবেন ইনশাআল্লাহ। দাঁড়াতেই হবে। যদি সম্মিলিত একটি প্লাটফর্ম না হয়, তাহলেও কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে ধরতে হবে। তখন নিজ নিজ স্বতন্ত্র প্লাটফর্ম থেকে ইসলামী রাজনীতি অব্যাহত রাখার সুযোগ থাকবে।
গত কয়েকদিনে যারা ফেসবুকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কড়া সমালোচনা করছিলেন, বিশেষ করে ইশা ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি শেখ ফজলুল করীম মারুফের একটি বিশ্লেষণধর্মী লেখার পর থেকে। যারা তাঁর আর্টিকেলটি পুরোটা মনোযোগের সাথে পড়েছেন তারা একটু বলুন, ওখানে কোথায় কি গলতি আছে? ফজলুল করীম মারুফ একজন কুরআনে হাফেজ, কওমী ও আলীয়া উভয় লাইনেই পড়াশোনা করেছেন, সবশেষে ঢাকা ইউনিভার্সিটি থেকে কেবল ফারেগ হলেন। অসম্ভব মেধাবী এ ছেলেটির পাঠ্যে সরকার, রাজনীতি ও সমাজনীতির মতো বিষয়গুলো ছিল, তিনি তো তাত্ত্বিক আলোচনাই করবেন। আন্দাজে বা হুজুগে আলোচনায় তিনি থাকেন না।
তাঁর লেখা যে কোন আর্টিকেল যুক্তিতে ভরা আর তথ্যে সমৃদ্ধ থাকে, যা একবার পড়লেই সবাই যে বুঝতে পারবে, সে রকম মেধা আমাদের ফেসবুকারদের থাকার কথা না। তাই হুজুগে পোস্ট বা কমেন্ট করে ইসলামী আন্দোলনের অবস্থানকে কর্দমাক্ত করার প্রচেষ্টা চালায় কতক ফেসবুক উজবুকে।
তিনি আল্লামা মামুনুল হক সাহেবকে ছোট করেছেন, এমন কোন শব্দ ব্যবহার করেননি। পারলে দেখান তো?
আসলে ফেসবুকে ছোট্ট একটা রাজনৈতিক হাভাতি দল আছে, যারা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সমালোচনা করে খায়। এদের না আছে যুক্তি, না আছে সহনশীলতা। আছে শুধু চরমোনাই বিরোধী কলুষিত মনন। পারলে আপনারা যুক্তি ও তথ্যসমেত পাল্টা লিখে মারুফের লেখাটিকে অচল করে দিন। কোথায় কোথায় একমত না, সেটা ব্যক্ত করুন। তা না করে কতকে লিখছেন বটে, তবে চামারের কলম দিয়ে। এরা কতকে কওমী আলেম বটে, তবে ভয়ানক হিংসুক টাইপের।
এদের জব হলো, সর্বদা চরমোনাইয়ের পিছনে লেগে থাকা। ভাইসাব, এ সব বাদ দিতে হবে উম্মাহর স্বার্থে। আপনারা ব্যঙ্গ ও তুচ্ছ তাচ্ছিল্য অব্যাহত রেখে কোন লাভ হবে না। ফেসবুক ছাড়া আপনাদেরকে জিগায় কেডা? ইসলামী রাজনীতির মূল স্রোতে চলে আসুন।
আল্লাহর ফজলে ও করমে চরমোনাই তরিকা ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সম্পূর্ণ খুলুছিয়াতের সাথে কাজ করে এ পর্যায়ে এসেছে । এর নেতৃত্বে রয়েছেন দূজন কর্মবীর ও পথ না হারানো সুদক্ষ রাহবারদ্বয়। ফেসবুকে কোথাকার কোন অর্বাচীন ও নির্লজ্জদের প্রচারণায় আইএবি'র জণপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা বিন্দুমাত্র কমবে না ইনশাআল্লাহ। এ গ্রুপটা ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর হচ্ছে সময়ের ব্যবধানে।
ইসলামী রাজনীতিতে লিডিং দেয়া ফ্রেশব্লাডের এ কাফেলাটি তাঁদের অভিষ্ঠ লক্ষ্যে পৌঁছতে খুব সিরিয়াস। আপনাদেরকে শামিল হতে আমন্ত্রণ, আগুয়ান এ কাফেলায়।
না আসাদের প্রতি বিণয়ী আহবান- তোমরা একটু লজ্জিত হও!