আব্দুর রহমান কোব্বাদী
ইসলামী রাজনীতির ভাঙা-গড়ার ধারাটা একরকম অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। মুসলমানদের স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রশ্নে জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ থেকে ভিন্ন দল হয় ‘নিখিল ভারত জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম’। শরীয়া আইন বাস্তবায়নের নিমিত্তে মুসলিম লীগকে সমর্থন করে তারা। কিন্তু মুসলিমলীগ নেতাদের ওয়াদা ভঙ্গের কারণে ১৯৫২ সালে নবগঠিত পাকিস্তানে পৃথক রাজনৈতিক দল হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে নেজামে ইসলামী পার্টি। কিন্তু ধারাবাহিক বৃহৎ দলের লেজুড়বৃত্তির কারণে সাংগঠনিকভাবে অনেক দুর্বল ছিল তারা। তাই স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে তারা সিন্দাবাদের সোনালী লতায় রুপান্তর হয়। এরপর ১৯৮১ সনে রাজনীতিতে আসেন কিংবদন্তি মাও. মুহাম্মদুল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর রহ.। তাঁর ব্যক্তিত্ব ও বুজুর্গীর প্রভাবে আলেম-ওলামা ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের আকুন্ঠ সমর্থন লাভ করেন তিনি।
যার ধারাবাহিকতায় ১৯৮৬ সনে জাতীয় নির্বাচনে দ্বিতীয় স্থান লাভ করেছিল তাঁর নেতৃত্বাধীন ‘খেলাফত আন্দোলন’। কিন্তু গণমানুষের বিপুল সমর্থনকে কাজে লাগিয়ে তৃণমূল থেকে সংগঠন মজবুত করতে পারেনি দলটি। ফলে ১৯৮৭ সনে হাফেজ্জী হুজুর রহ. ইন্তেকালের পর খেলাফত আন্দোলনে বিভক্তির সূর উঠে। বিশিষ্ট ইসলামী স্কলারদের ঐক্যমতে গঠিত হয় ‘ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোল’। সূচনালগ্নেই ভিন্ন ভিন্ন ওজর পেশ করে পাশ কেটে যান অনেকেই। ফলে বাধ্য হয়েই নেতৃত্ব গ্রহণ করতে হয় মাও. ফজলুল করীম পীর সাহেব চরমোনাই রহ.-কে। এরপর ১৯৮৯ সনে শায়খুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক রহ.-এর নেতৃত্বাধীন ‘খেলাফত আন্দোলনের একাংশ’ ও আহমদ আব্দুল কাদেরের নেতৃত্বাধীন ‘যুব শিবির’ একীভূত হয়ে গঠন হয় ‘খেলাফত মজলিস’। অতীত ব্যর্থতা বিশ্লেষণপূর্বক সম্মিলিত প্ল্যাটফর্ম তৈরী হয় ‘ইসলামী ঐক্যজাট’।
তৎকালীন ছয়টি ইসলামি দল নিয়ে গঠন করা হয় এই জোট। দলগুলো হচ্ছে- খেলাফত মজলিস, খেলাফত আন্দোলন, নেজামে ইসলামী পার্টি, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন (বর্তমান ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ), জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও ফরায়েজী আন্দোলন। ১৯৯১ ও ১৯৯৬ -এর জাতীয় নির্বাচনে মিনার প্রতীক নিয়ে প্রতিদন্ধিতা করে ইসলামী ঐক্যজোট। কিন্তু তৃণমূলের খবর না রাখা নামসর্বস্ব দলগুলো ইসলামের বৃহত্তর স্বার্থে (?) ঘোষিত ৮ দফারফা না করেই বিএনপির নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোট ভুক্ত হয়। ফের ভাঙ্গনের সূর! ভেঙে যায় ইসলামী ঐক্যজোট।
বদলে যায় প্রতীক। আশা আকাঙ্খার উঁচু মিনারটা মিলে যায় ধানের শীষে। দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ও নৈতিক অবিচলতায় একলা চলো নীতি গ্রহণ করেন মাও. ফজলুল করীম পীর সাহেব চরমোনাই রহ.। তৃণমূল থেকে সংগঠন গোছানোর কাজ শুরু করে ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোল (বর্তমান ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ)। নৈতিক স্পষ্টবাদীতা, পরিকল্পিত কর্মপদ্ধতি ও যোগ নেতৃত্ব গঠনের ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে, ইসলামী বিপ্লবকামীদের অন্যতম ভরসাস্থল এখন তারা।
ব্যক্তি ইমেজ কাজে লাগিয়ে কিছু হযরত শাগরিদদের সমর্থন ও জোটের ভোটে বিপ্লবের স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু যা হওয়ার তাই হয়েছে। পূর্বেকার মত তাঁরাও ধোঁকার প্রাত্র হয়েছেন। ব্যক্তির ইন্তেকালে ক্রমান্নয়ে মূমুর্ষ হালতের দিকে তাঁদের রেখে যাওয়া দলগুলোও। সেই পুরনো ধারাবাহিকতা চলতে থাকলে ইসলামী রাজনীতিতে হতাশা বৈ কিছু নেই। . সাংগঠনিক ও ধর্মীয় যোগ্যতার নিরিখে আমীর নির্বাচন করে বিভাগ, জেলা, উপজেলা/থানা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড ও গ্রাম পর্যায়ে সাংগঠনিক মজবুতি অর্জন করে, গণমানুষের আশা এবং ভাষা বুঝার ক্ষমতা ও বাস্তব জ্ঞান সম্পন্ন কর্মী বাহিনীর নিরলস প্রচেষ্টা ও শুরু-শেষ এক নীতি অবলম্বনে সাধিত হতে পারে একটি সর্বজনীন গণবিপ্লব।