
করোনাকালে মানুষের আয় কমেছে, সেই হিসাবে নিত্যপণ্যের দামও কমে আসার কথা। কিন্তু বাজারের তথ্য বলছে, পাগলা ঘোড়ার মতো বেড়েই চলেছে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। সরকারি হিসাবেও বলা হচ্ছে, গত বছরের এই সময়ে যেসব পণ্যের দাম ছিল প্রতিকেজি ৪০ টাকা, এখন সেই পণ্য কিনতে হচ্ছে প্রতিকেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা দিয়ে।
ভোজ্যতেলের কোম্পানিগুলো সয়াবিন তেলের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। নিম্ন আয়ের মানুষের উপযোগী অ্যাংকর ডালের দাম প্রতিকেজিতে ৫ টাকা বেড়েছে। মোটা চালের সর্বনিম্ন দাম প্রতিকেজি ৪৩ টাকা। আর ভালো মানের মোটা চাল এখন প্রতিকেজি ৪৬ টাকা।
সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবি’র হিসাবে, গত এক বছরে গরিবের মোটা চালের দাম বেড়েছে ২৭ শতাংশ। চিকন চালের দামও বেড়েছে ১৪ শতাংশ। মাঝারি মানের বিভিন্ন চাল কিনতে প্রতিকেজি ৪৮ থেকে ৫৩ টাকা লাগছে।
আর সরু মিনিকেট চালের কেজি বাজারভেদে ৫৬ থেকে ৬০ টাকা। টিসিবির হিসাবে, গত বছরের এই সময়ের তুলনায় এখন মাঝারি মানের চালের দাম ৯ শতাংশ ও সরু চালের দাম ১৫ শতাংশ বেশি।
শুধু চালই নয়, ডাল, তেলসহ সব ধরনের পণ্যের দাম এখন বাড়তি। টিসিবি জানায়, গড়ে ২০টি পণ্যের মধ্যে ১৭টি পণ্যের দামই বাড়তি। আর কাঁচাবাজারের পরিস্থিতি আরও নাজুক। জিনিসপত্রের দাম নাগালের বাইরে চলে যাওয়ার কারণে অনেকেই মাছ-মাংস কেনা বন্ধ করে দিয়েছেন।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ২৫০ গ্রাম কাঁচা মরিচের দাম এখন ৬০ টাকা। আর ৫ টাকা আঁটি দামের সবুজ শাক বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকার ওপরে। বৃষ্টি ও বন্যার কারণে পণ্যের দাম বাড়তি বলে জানান ব্যবসায়ীরা। এদিকে সব নিত্যপণ্যের চড়া দামের কারণে অস্বস্তিতে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ। এমনকি মধ্যবিত্তরাও অস্বস্তিতে ভুগছেন।
আইসিডিডিআরবি এবং ওয়াল্টার এলিজা হল ইনস্টিটিউট, অস্ট্রেলিয়ার এক যৌথ গবেষণা বলছে, করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে ঘরে থাকার কারণে ৯৬ শতাংশ পরিবারের গড় আয় কমেছে। এছাড়া কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ রোধে গত মার্চের শেষের দিকে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটি ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়ার কারণে সারাদেশে ৯৫ শতাংশ মানুষের আয় কমেছে বলে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের এক জরিপে জানা গেছে।
জরিপে অংশ নেওয়াদের মধ্যে ৫১ শতাংশের কোনও আয় নেই এবং কাজ হারিয়েছেন ৬২ শতাংশ নিম্ন আয়ের মানুষ। এছাড়াও, ২৮ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন, মহামারির কারণে তারা অর্থনৈতিকভাবে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন।
শুক্রবার (২৮ আগস্ট) বিভিন্ন বাজারে ১০০ টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে অধিকাংশ সবজির কেজি। এককেজি পাকা টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়। প্রতি কেজি গাজর বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা করে। একইভাবে বেগুন, বরবটির কেজি এখন ১০০ টাকা। চিচিঙ্গা, পটল, ঢেঁড়স, কচুর লতি, কাকরোল, কচুর মুখি, ধুন্দুল বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা কেজি।
লাউয়ের পিস ৭০ টাকা, চাল কুমড়া ( জালির পিস) ৫০ টাকা, পেঁপের কেজি ৪৫ টাকা এবং কাঁচা কলার হালি ৪০ টাকা। পুঁইশাকের আঁটি বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা। আর লাল শাক, সবুজ শাক ও কলমি শাকের আঁটি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা।
এছাড়া চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে আলু ও ডিম। এক কেজি আলুর দাম ৩৭ টাকা। এক ডজন ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ১১৫ টাকা দরে। গত সপ্তাহে ভারতীয় পেঁয়াজ প্রতিকেজির দাম ছিল ৩০ টাকা। এখন সেটা বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকা কেজি দরে।
আই.এ/