বাংলাদেশের কওমী মাদরাসা শিক্ষার সর্ববৃহত বোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের অধিনে থাকা মাদরাসাগুলোতে হাইআতুল উলয়ার অধিনে তাকমিলের পরীক্ষা ছাড়া বেফাকের অন্য কোনো বিভাগের পরীক্ষা হচ্ছে না এ বছর। একই সাথে যারা বেফাকের পরীক্ষার ফিস প্রদান করেছে তাদের ফিস ৫০% ফেরত দেওয়া হবে।
একই সাথে বিষয়টি ঘোষণা আকারেও জানিয়েছে বেফাক কর্তৃপক্ষ। ঘোষণায় বলা হয়েছে - এতদ্বারা বেফাক অন্তর্ভুক্ত সর্বস্তরের কওমি মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে বিগত ২৩ আগস্ট তারিখে অনুষ্ঠিত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ কমিটির সভায় গৃহীত সুপারিশগুলো পরবর্তিতে ২৫ আগস্ট তারিখে খাস কমিটির সভায় অনুমোদন দেয়া হয়।
অপরদিকে আল হাইআতুল উলয়া লিল জামিয়াতিল কওমীয়ার অধিনে অনুষ্ঠিতব্য দাওরায়ে হাদিসের পরীক্ষা শুরু হওয়ার নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী ২০ সেপ্টেম্বর রবিবার এবং পরীক্ষা শেষ হওয়ার তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ মঙ্গলবার।
করোনা মহামারির কারণে প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে ১৪৪১ হিজরি তথা ২০২০ সালের কওমী মাদরাসাসমূহের দাওরায়ে হাদিস এবং অন্যান্য বিভাগের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামি‘আতিল কওমিয়া বাংলাদেশ এর পরীক্ষা উপকমিটির (২৩ আগস্ট) সভায় স্থায়ী কমিটি বরাবর পরীক্ষা বিষয়ে তিনটি প্রস্তাবনা প্রস্তাবনা পেশ করা হয়।
প্রস্তাবনাগুলো হলো –
১। ১৪৪১ হিজরীর দাওরায়ে হাদীস (তাকমীল) পরীক্ষার তারিখ : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০, রবিবার থেকে পরীক্ষা শুরু হয়ে ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ মঙ্গলবার শেষ হবে। ২। ১০ বিষয়ে পরীক্ষা হবে। প্রত্যেক বিষয়ের ৪টি প্রশ্ন হবে, ২টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। ৩। পরীক্ষার সময় হবে ৩.৩০ মিনিট।
পরবর্তিতে এ প্রস্তাবনাগুলো ২৫ আগস্ট নির্দেশনা আকারে পাশ করা হয় এবং সে মোতাবেক ২০ সেপ্টেম্বর পরীক্ষার ঘোষণা দেওয়া হয়।
এর মধ্যে গত ২৫ আগস্ট সকল কওমী মাদরাসাসমূহকে প্রজ্ঞাপনে এনে নতুন করে জারি করা একটি নোটিশের মাধ্যমে দেশের সকল কওমি মাদ্রাসাগুলো খুলে দেওয়ার সুস্পষ্ট অনুমতি মিলেছে।
দেশের আলেম-উলামাদের দাবির প্রেক্ষিতে ৬টি শর্তে কওমি মাদরাসার কিতাব বিভাগ খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে । এ বিষয়ে ২৫ আগস্ট একটি নোটিশ দিয়েছে কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ।
নোটিশে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে অনুসরণ করে কওমি মাদরাসার কিতাব বিভাগের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু ও পরীক্ষা গ্রহণের অনুমতি দেওয়া হলো। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে স্বাস্থ্য বিভাগ মনিটরিং করতে পারবে বলেও নোটিশে উল্লেখ করা হয়। এ সময় ৬টি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
নির্দেশনাগুলো হলো – ১. প্রত্যেক শিক্ষার্থীর মাস্ক, হ্যান্ডগ্লাভস ও মাথায় নিরাপত্তা টুপি পরিধান করা আবশ্যক। ২. মাদরাসায় প্রবেশের পূর্বে প্রবেশদ্বারে স্যানিটাইজিং করতে হবে। ৩. শিক্ষার্থীরা তার নিজ নিজ কক্ষে অবস্থান করবে।বিক্ষিপ্তভাবে এদিক সেদিক চলাফেরা করবে না। ৪. একজন শিক্ষার্থী থেকে অপর শিক্ষার্থী কমপক্ষে তিন ফুট দূরত্বে অবস্থান করবে। ৫. কোভিড-১৯ এর কারণে কোলাকুলি ও মুসাফাহা করবেনা। ৬. শিক্ষক ও কর্মচারীগণও একইভাবে সরকারি স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে ক্লাস গ্রহণ করবেন।
এর আগে গত ১২ জুলাই থেকে কওমী মাদরাসাসমূহের হিফজ বিভাগ খুলে দেয়ার অনুমতি দেয় সরকার। গত ৮ জুলাই এ বিষয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয় একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে হেফজ বিভাগ খুলে দেওয়ার অনুমতি দেয়। এরও আগে গত ১ জুন থেকে দেশের কওমি মাদ্রাসায় ছাত্রছাত্রী ভর্তির কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে অফিস খোলার অনুমতি দিয়েছিল।
প্রসঙ্গত : করোনাকালীন সময়ে করোনা মহামারীর বিস্তার রোধে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে সাথে কওমী মাদরাসামূহকেও গত ১৮ মার্চ থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিলো। পরবর্তিতে আলেমদের দাবি অনুসারে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ১২ জুলাই থেকে কওমী মাদরাসাসমূহের হিফজ বিভাগ খুলে দেয় সরকার। গত ৮ জুলাই এ বিষয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয় একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে হেফজ বিভাগ খুলে দেওয়ার অনুমতি দেয়।
এরও আগে ১ জুন দেশের কওমি মাদ্রাসায় ছাত্রছাত্রী ভর্তির কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে অফিস খোলার অনুমতি দিয়েছিল।
পরবর্তিতে গত ১৩ জুলাই হাইআতুল উলয়ার বৈঠকে মাদ্রাসা খোলার বিষয়ে সরকারের সঙ্গে মধ্যস্থতা করতে মাওলানা মাহফুজুল হককে আহবায়ক করে ৮ সদস্য বিশিষ্ট একটি সাব-কমিটি গঠন করা হয়েছিলো।
এরপর গত ২৩ জুলাই হাইআতুল উলআর পক্ষ থেকে ৮-ই আগষ্ট দেশের সকল কওমী মাদরাসা খুলে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু সরকার আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার পর ৫ আগস্ট হাইআর একটি মিটিংয়ের মাধ্যমে ৮ আগষ্ট কওমী মাদরাসা খোলার পূর্ব সিদ্ধান্ত স্থগিত করা হয়। পরবর্তিতে স্পষ্টভাবে কওমী মাদরাসাসমূহ খুলে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়।