নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের ইসলামিক সেন্টারে অবস্থিত আল নূর মসজিদে উগ্র ও শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্টত্ববাদী খৃষ্টান সন্ত্রাসী ব্রেন্টন ট্যারেন্ট কর্তৃক ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় শহীদ হওয়া সারা কাসেম আদালতে কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন - "আমি আমার বাবার কণ্ঠস্বর শুনতে চাই, আমার বাবার আওয়াজ শুনতে চাই।"
এছাড়াও খৃস্টান জঙ্গী ট্যারান্ট কর্তৃক এই গণহত্যায় শহীদ হওয়া আত্তা এলায়ানের 'মা' মায়সুন সালামা বলেছিলেন ট্যারান্ট "পুরো নিউজিল্যান্ডকে কলূষিত করেছে এবং পুরো বিশ্বকে স্তম্ভিত করেছে" তিনি কান্নাজড়িয়ে ট্যারান্টকে বলেছেন - "আপনি নিজেকে ৫১ জন নিরপরাধ মানুষের হত্যাকারী হিসেবে প্রকাশিত করেছেন। তাদের একমাত্র অপরাধ - (আপনার চোখে) যে তারা মুসলমান। কিন্তু আপনি মনে রাখবেন "আপনি মনুষ্যত্ব হারিয়ে ফেলেছেন, আমি আপনাকে কখনও ক্ষমা করতে পারবো না।"
নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের ইসলামিক সেন্টারে অবস্থিত আল নূর মসজিদে ২০১৯ সালের ১৫ মার্চ শুক্রবার উগ্র ও শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্টত্ববাদী খৃষ্টান সন্ত্রাসী ব্রেন্টন ট্যারেন্ট কর্তৃক ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার বিচার চলছে নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের একটি উচ্চ আদালতে।
চারদিন স্থায়ী হওয়া এ বিচারিক সময়ে আদালতে উপস্থিত হয়েছেন আল-নূর মসজিদে নৃশংস এ হামলায় শহীদ হওয়া পরিবারগুলোর একাধিক সদস্যরা। বিচারিক আদালতে তারা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বিচারকের সামনেই ভর্ৎসনা দিয়েছে খৃস্টান জঙ্গী ব্রেন্টনকে। প্রতিটি শহীদ পরিবারের ভাষ্য বিচারককেও অশ্রুসজল করে তুলেছে।
গত সোমবার (২৩ আগস্ট) থেকে চলমান এ বিচারিক আদালতের কার্যক্রম শেষ হবে আগামী কাল বৃহস্পতিবার (২৭ আগস্ট)। ধারণা করা হচ্ছে - কাল বৃহস্পতিবার ক্রাইস্টচার্চের এই আদালতে তাকে প্যারোলবিহীন যাবজ্জীবন সাজা প্রদানের পরে অস্ট্রেলিয়ান অধিবাসী এই শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদী ট্যারান্ট নিউজিল্যান্ডের প্রথম ব্যক্তি হয়ে প্যারোলের সম্ভাবনা ছাড়াই যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত হবেন।
১৯৬১ সালে নিউজিল্যান্ডে শাস্তিস্বরুপ 'মৃত্যুদণ্ড' বাতিল করে দেওয়ার পর থেকে সবচেয়ে কঠোর শাস্তি হতে পারে এটি। কারণ নিউজিল্যান্ডে প্যারোলবিহীন যাবজ্জীবন সাজার ইতিহাস নেই এর আগে। ব্রেন্টন ট্যারেন্টকে সেই শাস্তি দেয়া হতে পারে বলেই সবার ধারণা। তবে তিনি মৃত্যুদণ্ড পেলে ন্যায়বিচার আরও প্রশ্নাতিত হতো বলেই ধারণা অনেকের।
এছাড়াও তিনদিনের বিচারিক কার্যক্রমে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের মধ্যে প্রায় ৬০ জনেরও বেশি লোক তাদের প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছে। যেখানে শহীদদের পরিবার এবং আহতরা কথা বলেছেন। ভুক্তভোগীদের কিছু আত্মীয় বিদেশ থেকে ভ্রমণ করে এসেছিলেন এবং এই বিচারিক কার্যক্রমে অংশ নিতে তাদেরকে দুই সপ্তাহের কোয়ারান্টিনেও থাকতে হয়েছিলো করোনাভাইরাস থেকে নিশ্চয়তার জন্য।
এদিকে আদালতে একে একে প্রায় সকল শহীদ পরিবারের ভাষ্য শোনা হয়েছে। সেখানে পরিবারগুলোর ভাষ্য ও আহতদের কথা শুনে অশ্রুসজল হয়েছেন সবাই।
ব্রেন্টন ট্যারেন্টের বিচারিক রায় বিষয়ে বিস্তারিত পড়তে ক্লিক করুন
উগ্রবাদী সন্ত্রাসী কর্তৃক ক্রাইস্টচার্চের আল-নূর মসজিদে হামলার এক বছর ও বিস্তারিত ঘটনা