সকল কওমী মাদরাসাসমূহকে প্রজ্ঞাপনে এনে নতুন করে জারি করা একটি নোটিশের মাধ্যমে দেশের সকল কওমি মাদ্রাসাগুলো খুলে দেওয়ার সুস্পষ্ট অনুমতি মিলেছে।
এর আগে গত ১২ জুলাই থেকে কওমী মাদরাসাসমূহের হিফজ বিভাগ খুলে দেয়ার অনুমতি দেয় সরকার। গত ৮ জুলাই এ বিষয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয় একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে হেফজ বিভাগ খুলে দেওয়ার অনুমতি দেয়। এরও আগে গত ১ জুন থেকে দেশের কওমি মাদ্রাসায় ছাত্রছাত্রী ভর্তির কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে অফিস খোলার অনুমতি দিয়েছিল।
তবে কওমী মাদরাসার কিতাব বিভাগ খোলার অনুমতি বিষয়ে গতকাল (২৪ আগস্ট) আরও একটি প্রজ্ঞাপনের ছবি প্রকাশ হয়েছিলো এবং সে প্রজ্ঞাপনের আলোকেও মাদরাসা খুলে দেওয়ার ঘোষণা এসেছিলো। যেখানে বেফাকুদ্দিনীয়া নামে কওমী মাদসাসমূহের একটি বোর্ডের নাম উল্লেখ করা হয়েছিলো। বোর্ডের সহ-সভাপতি মাওলানা ইয়াইয়া মাহমুদ এ বিষয়ে স্পষ্ট কিছু বক্তব্যও দিয়েছিলেন। বক্তব্যটি জানতে ক্লিক করুন।
তবে ওই প্রজ্ঞাপনে কওমি মাদরাসার দাওরায়ে হাদিসসহ অন্যান্য পরীক্ষা গ্রহণের অনুমতি দেয় সরকার। এমনটাই জানিয়েছিলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
সোমবার মন্ত্রিসভার মিটিং শেষে ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানান, মাদরাসাগুলোর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার স্বাস্থ্যবিধি মেনে কওমি মাদরাসার ডিগ্রি ও মাস্টার্স পর্যায়ের পরীক্ষাগুলো নেওয়ার অনুমতি দিয়েছে। তবে মাদরাসার শিক্ষাকার্যক্রম চালুর সিদ্ধান্ত হয়নি।
এরই মাঝে সোমবার বিকেলের দিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সহকারী সচিব সৈয়দ আসগর আলী (মাদরাসা শাখা-২) স্বাক্ষরিত একটি প্রজ্ঞাপন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এটা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে মাদরাসা খোলার ঘোষণা দেওয়া হয়নি।
নোটিশে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে অনুসরণ করে কওমি মাদরাসার কিতাব বিভাগের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু ও পরীক্ষা গ্রহণের অনুমতি দেওয়া হলো। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে স্বাস্থ্য বিভাগ মনিটরিং করতে পারবে বলেও নোটিশে উল্লেখ করা হয়। এ সময় ৬টি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
নির্দেশনাগুলো হলো - ১. প্রত্যেক শিক্ষার্থীর মাস্ক, হ্যান্ডগ্লাভস ও মাথায় নিরাপত্তা টুপি পরিধান করা আবশ্যক। ২. মাদরাসায় প্রবেশের পূর্বে প্রবেশদ্বারে স্যানিটাইজিং করতে হবে। ৩. শিক্ষার্থীরা তার নিজ নিজ কক্ষে অবস্থান করবে।বিক্ষিপ্তভাবে এদিক সেদিক চলাফেরা করবে না। ৪. একজন শিক্ষার্থী থেকে অপর শিক্ষার্থী কমপক্ষে তিন ফুট দূরত্বে অবস্থান করবে। ৫. কোভিড-১৯ এর কারণে কোলাকুলি ও মুসাফাহা করবেনা। ৬. শিক্ষক ও কর্মচারীগণও একইভাবে সরকারি স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে ক্লাস গ্রহণ করবেন।
অপরদিকে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা বোর্ডসমূহের সম্মিলিত সংস্থা আল হাইয়াতুল উলিয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া এর পক্ষ থেকে অফিস সম্পাদক মাওলানা অসিউর রহমানের বরাতে ২৪ আগস্ট প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনটিকে 'সঠিক নয়' বলে দাবি করা হয়েছে। হাইআর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে নতুন প্রজ্ঞাপনটি প্রকাশ করে বলা হয়েছে - ‘কওমি মাদরাসাসমূহের কিতাব বিভাগের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু ও পরীক্ষা গ্রহণের অনুমতি প্রদান’ নামে শিক্ষা মন্ত্রণালয় আজ মঙ্গলবার (২৫/০৮/২০২০) সন্ধ্যায় প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। গতকাল আমরা যে প্রজ্ঞাপনটি পেয়েছিলাম তা সঠিক ছিল না।"
তবে ২৫ আগস্ট নতুন প্রজ্ঞাপন প্রকাশের আগেই দেশের কওমি মাদ্রাসাগুলো খুলে দেওয়া শুরু হয়ে গেছে। দেশের বেশিরভাগ কওমী মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড থেকেই মাদরাসা খোলার ঘোষণা এসেছে। রাজধানী ঢাকার স্বনামধন্য কওমি মাদ্রাসা হিসেবে পরিচিত 'ফরিদাবাদ মাদরাসাও' গতকাল থেকেই খোলার ঘোষণা এসেছে। হাইআতুল উলয়ার অধিনে স্বীকৃত ৬ বোর্ড ছাড়াও অন্যান্য বোর্ডের মাদরাসাগুলো খোলারও ঘোষণা এসেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ কুরআন শিক্ষা বোর্ডের আওতাধীন সকল প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও মাদরাসাসমূহের প্রশিক্ষণ, পাঠক্রম ও পরীক্ষা গ্রহণের উদ্দেশ্যে আগামী ২৮শে আগষ্ট, শনিবার যথারীতি খোলা হবে বলেও জানানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত : করোনাকালীন সময়ে করোনা মহামারীর বিস্তার রোধে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে সাথে কওমী মাদরাসামূহকেও গত ১৮ মার্চ থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিলো। পরবর্তিতে আলেমদের দাবি অনুসারে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ১২ জুলাই থেকে কওমী মাদরাসাসমূহের হিফজ বিভাগ খুলে দেয় সরকার। গত ৮ জুলাই এ বিষয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয় একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে হেফজ বিভাগ খুলে দেওয়ার অনুমতি দেয়।
এরও আগে ১ জুন দেশের কওমি মাদ্রাসায় ছাত্রছাত্রী ভর্তির কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে অফিস খোলার অনুমতি দিয়েছিল।
পরবর্তিতে গত ১৩ জুলাই হাইআতুল উলয়ার বৈঠকে মাদ্রাসা খোলার বিষয়ে সরকারের সঙ্গে মধ্যস্থতা করতে মাওলানা মাহফুজুল হককে আহবায়ক করে ৮ সদস্য বিশিষ্ট একটি সাব-কমিটি গঠন করা হয়েছিলো।
এরপর গত ২৩ জুলাই হাইআতুল উলআর পক্ষ থেকে ৮-ই আগষ্ট দেশের সকল কওমী মাদরাসা খুলে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু সরকার আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার পর ৫ আগস্ট হাইআর একটি মিটিংয়ের মাধ্যমে ৮ আগষ্ট কওমী মাদরাসা খোলার পূর্ব সিদ্ধান্ত স্থগিত করা হয়। পরবর্তিতে স্পষ্টভাবে কওমী মাদরাসাসমূহ খুলে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়।
ঘটনাক্রম : কওমী মাদরাসা খুলে দেওয়া বিষয়ক সংবাদ
মাদরাসা খুলে দেওয়ার ঘোষণা : যা বলছে বেফাক ও হাইআ কর্তৃপক্ষ
কওমী মাদরাসা খুলে দেয়ায় সরকারকে ধন্যবাদ দিলেন মুফতী ফয়জুল করীম
কওমী মাদরাসা খোলার অনুমতির প্রজ্ঞাপনে সম্মতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী
অবশেষে দেশের সকল কওমী মাদরাসা খুলে দেওয়ার অনুমতি দিয়েছে সরকার
কওমী মাদরাসা খোলার সিদ্ধান্ত স্থগিত হাইআর : নতুন সিদ্ধান্ত পরে জানানো হবে
৮ আগষ্ট দেশের সকল কওমী মাদরাসা খুলে দেওয়ার ঘোষণা
স্বাস্থ্যবিধী মেনে খুলছে দেশের কওমী মাদরাসার হিফজ বিভাগগুলো
আরও পড়ুন :
বেফাক সংকট সমাধানে দায়িত্বশীলরা দ্রুত উদ্যোগী হন : মুফতী ফয়জুল করীম
বেফাকের অস্থিরতা: গুঞ্জনের ডালপালা পক্ষ-বিপক্ষ ও অনেক পক্ষ
বেফাক থেকে বহিস্কার ও ‘ফোনালাপ’ বিষয়ে যা বলছেন মুফতি আবু ইউসুফ
বেফাক থেকে বহিস্কার বিষয়ে যা বলছেন মুফতী তোয়াহা
বেফাক ও কওমী মাদরাসা সংকট : মূল প্রশ্ন আড়ালেই থাকছে
বেফাকের ফোনালাপ ফাঁস ও মার্কশীট দুর্নীতি : ফেঁসে যেতে পারে শতাধিক মাদরাসা