
আজ বৃহস্পতিবার। আরব বিশ্বে পয়লা মহররম। হিজরি বা আরবি নববর্ষ হিসাবেও পরিচিত এই দিনটি। মহররম মাসের প্রথম এই দিন ঘিরে আরব বিশ্বে পালিত হচ্ছে ইসলামী নববর্ষ ১৪৪২। বিশ্বনবী হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হিজরতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে হিজরি সনের শুভ সূচনা।
বাংলা ও ইংরেজি নববর্ষে আমাদের দেশে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকে। আরবি নববর্ষের অনেক গুরুত্ব ও তাৎপর্য থাকা সত্ত্বেও উল্লেখ করার মতো কোনো কর্মসূচি পালন করা হয় না বললেই চলে।
হিজরি বছরের শেষ মাস এবং শুরুর মাস অনেক মর্যাদা ও ফজিলতের মাস। তাই এ হিজরি বছরের শেষ এবং নতুন বছরের প্রথম রাত ও দিন বিগত দিনের গোনাহ মাফ এবং আগামী দিনের কল্যাণ লাভের এক মর্যাদপূর্ণ সময়।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ত্যাগ ও কুরবানির ঐতিহাসিক স্মৃতি স্মারক হিজরি (আরবি) সন। ইসলামের প্রচার, প্রসার এবং বিজয় কেতন উড্ডীনে হিজরি সনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অত্যাধিক। আইয়্যামে জাহেলিয়াতের জ্ঞানপাপীরা বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও ইসলামকে পৃথিবী থেকে চিরতরে সরিয়ে দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছিল। আল্লাহর নির্দেশে বিশ্বনবী দ্বীন প্রচারে প্রিয় মাতৃভূমি ত্যাগ করে মাদিনা মুনাওয়ারায় হিজরত করেন। যাকে কেন্দ্র করেই আজকের হিজরি সন। যা আজো মুসলিম উম্মাহর হৃদয়ে আলোকবর্তিকা হিসেবে জাগরিত হয়ে আছে।
মুহাররম মাস শুধুমাত্র কারবালার ঘটনা স্মরণ করার মাসই নয়, এ মাস গোনাহ থেকে বেঁচে থাকার, ত্যাগের, ভালো কাজ করার, খারাপ কাজ থেকে বেঁচে থাকার এবং মুসলিম বিশ্বকে নতুন করে গড়ার প্রতিজ্ঞা করার মাস। ইসলাম ও মুসলমানের জন্য এ মাসের রয়েছে অনেক শিক্ষণীয় ও পালনীয় বিষয়। তাইতো এ মাসের ৯, ১০ ও ১১ তারিখে রোজা রাখা উত্তম।
পবিত্র আশুরা মুসলিম উম্মাহর জন্য এক তাৎপর্যময় ও শোকাবহ দিন। হিজরি ৬১ সালের এই দিনে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) ও তার পরিবারের সদস্যরা ইয়াজিদের সৈন্যদের হাতে কারবালার ময়দানে শহীদ হন।
এছাড়া এই দিনে হজরত মুসা (আ.) ফেরাউনের জুলুম থেকে পরিত্রাণ লাভ করেছিলেন তার অনুসারীদের নিয়ে নীল নদ পার হয়ে। তাদের পিছু নেয়া ফেরাউন সদলবলে নীল নদে ডুবে যায়।
এমন আরও অনেক তাৎপর্যময় ঘটনা ঘটেছিল এই দিনে। তবে মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে কারবালার প্রান্তরে। সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) এবং তার পরিবার ও অনুসারীরা যুদ্ধ করতে গিয়ে ফোরাত নদীর তীরে ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে শহীদ হন। শান্তি ও সম্প্রীতির ধর্ম ইসলামের সুমহান আদর্শ সমুন্নত রাখতে তাদের এই আত্মত্যাগ মানবতার ইতিহাসে সমুজ্জ্বল হয়ে আছে।
কারবালার এই শোকাবহ ঘটনা ও পবিত্র আশুরার শাশ্বত বাণী আমাদের অন্যায় এবং অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে আজও অনুপ্রেরণা জোগায়। প্রেরণা জোগায় সত্য ও সুন্দরের পথে চলার। মুসলিম বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও যথাযোগ্য মর্যাদায় পবিত্র আশুরা পালিত হবে।
আই.এ/