কওমী মাদরাসা শিক্ষার সম্মিলিত শিক্ষাসংস্থা 'আল হাইআতুল উলআ লিল জামিয়াতিল কওমিয়া'র অধিনে থাকা কওমী মাদরাসাসমূহের একটি বোর্ড 'জাতীয় দ্বীনি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের' উধ্বর্তন চারজন সদস্য তথা এ বোর্ডের সহ-সভাপতি ড. মাওলানা মুশতাক আহমদ ও মাওলানা ইয়াহইয়া মাহমুদ এবং বোর্ডের মহাসচিব মুফতি মোহাম্মদ আলী এবং মাওলানা মুজিবুর রহমানসহ কওমি আলেমদের একটি প্রতিনিধি দল গতকাল (১৭ আগস্ট) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের সাথে বৈঠক করেন এবং কওমী মাদরাসাগুলো খুলে দেওয়ার অনুরোধ করেন।
আরও পড়ুুন : কওমী মাদরাসা খুলতে আলেমদের সাহসী হতে হবে: নদভী
আরও পড়ুুন : অবশেষে দেশের সকল কওমী মাদরাসা খুলে দেওয়ার অনুমতি দিয়েছে সরকার
এ বিষয়ে উক্ত বোর্ডের সহ-সভাপতি ড. মুশতাক আহমদ বলেন - আলহামদুলিল্লাহ। সুখবর। মুহতারাম কাওমী উলামা! আপনারা দুআ করেছেন। আমরা চার বন্ধু মেহনত করেছি। আল্লাহ আপনাদের সেহেরগাহী ও কান্না কবুল করেছেন। তাই এখন হিফজখানার পর কিতাবখানার জন্যও সুখবর চলে আসছে। তবে মহামারী থেকে সাবধানতা ও সুরক্ষা গ্রহণে যেন ত্রুটি না ঘটে। কাজেই ছাত্রদের পরীক্ষার আয়োজন গ্রহন করুন। অনুমতি হয়ে গিয়েছে। শোকর আলহামদুলিল্লাহ। – ড. মুশতাক আহমদ।
অপরদিকে বোর্ডের আর একজন সহ-সভাপতি মাওলানা ইয়াহইয়া মাহমুদ একটি ভিডিও বার্তার মাধ্যমে বলেন - আপনারা সবাই জেনেছেন যে গতকাল (১৭ আগস্ট) দুপুর ১২.১০ মিনিট থেকে আমরা চারজন অর্থাৎ ড. মোস্তাক আহমদ সাহেব, মাওলানা মুফতি মোহাম্মদ আলী সাহেব, এবং মাওলানা মুজিবুর রহমান সাহেব আর আমি ইয়াহিয়া মাহমুদ কওমী মাদরাসার কিতাব বিভাগ খুলে দেওয়ার জন্য কেবিনেট সচিবের সাথে একটি বৈঠক করি। আলহামদুলিল্লাহ গতকাল কেবিনেট সচিব মহোদয়ের সঙ্গে আমাদের দীর্ঘ প্রায় দুই ঘণ্টা আলোচনা হয় ওই আলোচনার পরে তিনি আমাদেরকে আশ্বাস দিয়েছিলেন যে দ্রুত সময়ের মধ্যে আপনাদেরকে আমি ইতিবাচক মেসেজ দেওয়ার চেষ্টা করব। এরপর আজ (১৮ আগস্ট) সকালে আমি মাননীয় কেবিনেট সচিবের কাছ থেকে সকাল ৯ টার দিকে একটি মেসেজ পেলাম। সেই মেসেজে তিনি আমাদেরকে কওমী মাদরাসার কিতাব বিভাগসমূহের পরীক্ষা গ্রহণের জন্য প্রস্তুত হতে বলেছেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আমি আপনাদের সকলকে এই সংবাদ দিতে চাই যে খুব দ্রুততার সাথে হাইআতুল উলয়ার মিটিং ডেকে পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হবে ইনশাআল্লাহ। আপনারা প্রস্তুত থাকুন।
এই ঘোষণা ও কওমী মাদরাসা খোলার বিষয়ে কওমী মাদরাসা শিক্ষার সম্মিলিত শিক্ষাবোর্ড সংস্থা আল হাইআতুল উলআ এবং কওমি মাদ্রাসা শিক্ষার সর্ববৃহৎ বোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের মতামত জানতে একটি অনুসন্ধান চালানো হয় পাবলিক ভয়েসের পক্ষ থেকে।
অনুসন্ধানে হাইআতুল উলয়ার অফিস সম্পাদক মাওলানা অসিউর রহমান পাবলিক ভয়েসকে বলেন, "আগামী শনিবার (২২ আগস্ট) আমাদের পরীক্ষা কমিটির মিটিং রয়েছে এবং সোমবার (২৪ আগস্ট) স্থায়ী কমিটির মিটিং রয়েছে। সেখানে সিদ্ধান্তক্রমেই মাদরাসা খোলা ও পরীক্ষার বিষয়ে ঘোষণা আসবে।
"মাদরাসা খোলার বিষয়ে হাইআতুল উলয়ার ভূমিকা কী এবং তারা 'জাতীয় দ্বীনি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডের' ঘোষণার আলোকে মাদরাসা খুলে দেবেন কি না" জানতে চাইলে তিনি বলেন - 'সরকারের সাথে মাদরাসা খোলার বিষয়ে আলোচনা করার জন্য হাইআতুল উলয়ার পক্ষ থেকে একটি সাব কমিটি গঠন করা হয়েছিলো যে কমিটির আটজন সদস্যের মধ্যে অন্যতম হলেন - জাতীয় দ্বীনি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের মহাসচিব মুফতি মোহাম্মদ আলী। তিনি এবং এই সাব-কমিটির প্রধান আহবায়ক মাওলানা মাহফুজুল হকসহ গত বুধবারে হাইআতুল উলয়ার চেয়ারম্যানের চিঠিসহ (১২ আগস্ট) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের সাথে দেখা করেছেন এবং সেই চিঠি প্রধানমন্ত্রীর নিকট তার মধ্যস্থতায় পৌছানো হয়েছে। এরপর আজ (১৮ আগস্ট) হাইআতুল উলআর চেয়ারম্যান আল্লামা শফীর চিঠির জবাবে হাইআতুল উলয়ার সাব-কমিটির আহবায়ক মাওলানা মাহফুজুল হককে কেবিনেট সচিব মাদরাসাগুলোতে পরীক্ষা নেওয়ার অনুমতির বিষয়টি মৌখিকভাবে জানিয়েছেন। একই সাথে দু একদিনের মধ্যে লিখিত আকারে বিষয়টি জানানো হবে বলেও তিনি মাওলানা মাহফুজুল হককে বলেছেন।'
'জাতীয় দ্বীনি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের যে চারজন গতকাল কেবিনেট সচিবের সাথে দেখা করেছেন এবং মাদরাসায় পরীক্ষা নেওয়ার যে অনুমতির বিষয়টি ফেসবুকসহ সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করেছেন' এ বিষয়ে তিনি বলেন - 'উনারাও গতকাল দেখা করেছেন এবং এ বিষয়ে একটি অনুমতি নিয়ে এসেছেন কিন্তু হাইআতুল উলআ যেহেতু একটি প্রতিষ্ঠান তাই এখানে লিখিত আকারে কোনো নিশ্চিত ঘোষণা না আসা পর্যন্ত আমরা কোনো বিষয় প্রচার করতে পারি না। তবে যথাশীগ্রই এখানে নিয়মতান্ত্রীকভাবে বিষয়টি হাইআর পক্ষ থেকে প্রকাশ করা হবে'।
একই বিষয়ে বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের মহাপরিচালক অধ্যাপক জুবায়ের আহমদ চৌধুরী পাবলিক ভয়েসকে বলেন, "এটা উনারা (জাতীয় দ্বীনি শিক্ষাবোর্ড) যা করেছেন সে বিষয়ে এখনও কোনো লিখিত বক্তব্য আমাদের কাছে দেননি এবং মাদরাসা খোলা সম্পর্কে এখনও লিখিত কিছু আমরা পাইনি। উনারা গিয়েছেন এবং চেষ্টা করেছেন তবে বেফাক তার জায়গা থেকে মাদরাসা খোলার জন্য চেষ্টা চালিয়ে গেছে কিন্তু বেফাকের কাছে এখনো লিখিত কিছু যেহেতু আসেনি তাই এ বিষয়ে আমরা এখনই কিছু বলতে চাই না।"
'বেফাক কর্তৃপক্ষ এখনই কি মাদরাসা খোলার ব্যাপারে কোনো ঘোষণা দেবে কি না' জানতে চাইলে তিনি বলেন, "না, লিখিতভাবে বিষয়টি না পাওয়া পর্যন্ত আমরা কোনো ঘোষণা দেবো না"।
প্রসঙ্গত : করোনাকালীন সময়ে করোনা মহামারীর বিস্তার রোধে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে সাথে কওমী মাদরাসামূহকেও গত ১৮ মার্চ থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিলো। পরবর্তিতে আলেমদের দাবি অনুসারে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ১২ জুলাই থেকে কওমী মাদরাসাসমূহের হিফজ বিভাগ খুলে দেয় সরকার। গত ৮ জুলাই এ বিষয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয় একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে হেফজ বিভাগ খুলে দেওয়ার অনুমতি দেয়।
স্বাস্থ্যবিধী মেনে খুলছে দেশের কওমী মাদরাসার হিফজ বিভাগগুলো
১২ জুলাই থেকে হিফজ বিভাগ খুলে দেওয়ার অনুমতি দিয়েছে সরকার
আজ থেকে খুলছে হেফজখানা : খুলতে পারে কওমী বিভাগও
এরও আগে ১ জুন দেশের কওমি মাদ্রাসায় ছাত্রছাত্রী ভর্তির কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে অফিস খোলার অনুমতি দিয়েছিল।
আরও পড়ুুন : মাদরাসা খুলতে সরকারের সাথে যোগাযোগে হাইআর সাব-কমিটিতে আছেন যারা
এরপর গত ২৩ জুলাই হাইআতুল উলআর পক্ষ থেকে ৮-ই আগষ্ট দেশের সকল কওমী মাদরাসা খুলে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু ৫ আগস্ট হাইআর একটি মিটিংয়ের মাধ্যমে ৮ আগষ্ট কওমী মাদরাসা খোলার পূর্ব সিদ্ধান্ত স্থগিত করা হয় সরকার আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার পর। এরপর মাদরাসা খোলার নতুন সিদ্ধান্ত আসবে বলেও জানানো হয়। যা নিয়ে সরকারের সাথে হাইয়াতুল উলআর পক্ষ থেকে মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করা হয় যেসব এর পরিপ্রেক্ষিতে এবং জাতীয় দ্বীনি শিক্ষা বোর্ডের প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কওমী মাদরাসাসমূহকে প্রাথমিকভাবে পরীক্ষা গ্রহণের মৌখিক অনুমতি দেওয়া হয়। যা মাদরাসাগুলো খুলে দেওয়ার অনুমতি বহন করে বলেই মনে করেন জাতীয় দ্বীনি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের' সহ-সভাপতি ড. মাওলানা মুশতাক আহমদ ও মাওলানা ইয়াহইয়া মাহমুদ।
আরও পড়ুুন :
৮ আগষ্ট দেশের সকল কওমী মাদরাসা খুলে দেওয়ার ঘোষণা
কওমী মাদরাসা খোলার সিদ্ধান্ত স্থগিত হাইআর : নতুন সিদ্ধান্ত পরে জানানো হবে
হাইআর সিদ্ধান্তের আলোকে ৮ আগস্ট বারিধারা মাদ্রাসা খোলার সিদ্ধান্তও স্থগিত
কওমী মাদরাসাগুলো খুলে দেয়া সময়ের দাবীতে পরিণত হয়েছে : আতাউল্লাহ হাফেজ্জী
কওমী মাদরাসা বন্ধ রাখার সুযোগ নেই, অতি শীগ্রই খুলে দিন : মুফতী ফয়জুল করীম
অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অতিদ্রুত কওমী মাদরাসাগুলো খুলে দিন
স্বাস্থ্যবিধি আরোপ করে হলেও কওমী মাদরাসা খুলে দিন : ইশা ছাত্র আন্দোলন