
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে উপহার হিসেবে দেওয়া পাকা বাড়িতে উঠেছেন সেই বৃদ্ধ ভিক্ষুক নাজিম উদ্দিন। আজ রোববার দুপুরে তার হাতে নতুন বাড়ির চাবি হস্তান্তর করেন শেরপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) আনার কলি মাহবুব। এরপরই স্ত্রী-সন্তান নিয়ে জীর্ণ মাটির ঘর ছেড়ে পাকা বাড়িতে উঠেন বৃদ্ধ নাজিম উদ্দিন।
পাকা বাড়ি হস্তান্তর করা ছাড়াও জীবিকা নির্বাহের জন্য বৃদ্ধ নাজিম উদ্দিনকে স্থানীয় বাজারে একটি দোকান করে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। দোকানের মালামাল কেনার জন্য দেওয়া হয়েছে ২০ হাজার টাকা। এছাড়া নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণের মধ্যে কর্মহীন অসহায় মানুষের সহায়তায় নিজের জমানো কষ্টের টাকা সরকারি ত্রাণ তহবিলে জামা দেওয়ায় তাকে দেওয়া হয়েছে সম্মাননা।
এদিকে আলোচিত এই বৃদ্ধ ভিক্ষুককে ব্যক্তিগত উদ্যোগে একটি ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক কিনে দিয়েছেন ঝিনাইগাতী উপজেলা পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এসএমএ ওয়ারেজ নাঈম। এমনকি তার উদারতায় খুশি হয়ে এলাকাবাসী স্থানীয় একটি বাজারের নামকরণ করেছে ‘নাজিম উদ্দিন বাজার’।
দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে অনেক মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ে। দিন আনে দিন খায়- এমন মানুষ কাজ না পাওয়ায় সন্তান-সন্ততি নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করতে থাকেন। এসব অসহায় মানুষকে সহায়তা করতেই নিজের জমানো ১০ হাজার টাকা স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুবেল মাহমুদের হাতে তুলে দেন ঝিনাইগাতী উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের গান্ধীগাঁও গ্রামের ইয়ার আলীর ছেলে নজিম উদ্দিন (৮০)।
বৃদ্ধ নাজিম উদ্দিন পথে পথে ঘুরে ভিক্ষা করে সংসার চালান। স্ত্রী ও ছয় সন্তান নিয়ে থাকতেন ভাঙ্গাচোরা মাটির ঘরে। সেই ঘর ঠিক করার জন্য দুই বছর ধরে তিল তিল করে জমিয়েছিলেন ওই ১০ হাজার টাকা। কিন্তু কর্মহীন মানুষের কষ্ট দেখে ভুলে গিয়েছিলেন নিজের দুঃখ। তাইতো সরকারি ত্রাণ তহবিলে দান করে দিয়েছিলেন পুরো টাকাটাই।
তখন বৃদ্ধ নাজিম উদ্দিনের এই মহানুভবতা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে সারাদেশে আলোচনার সৃষ্টি হয়। তার কথা জানতে পারেন প্রধানমন্ত্রীও। ওই সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃদ্ধ ভিক্ষুকের এমন দানকে ‘বিরল ঘটনা’ বলে মন্তব্য করেছিলেন। পাশাপাশি তাকে খাসজমি বন্দোবস্তসহ পাকা বাড়ি করে দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা অনুযায়ী বৃদ্ধ নাজিম উদ্দিনকে খাসজমি বন্দোবস্তসহ পাকাবাড়ি করে দেয় স্থানীয় প্রশাসন। আজ আনুষ্ঠানিকভাবে তার হাতে ঘরের চাবি হস্তান্তর করা হয়।
প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ঘর ও স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে দোকান পেয়ে খুশিতে উৎফুল্ল নাজিম উদ্দিন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর তাকে পাকা বাড়ি করে দিয়েছে। এতে তিনি অনেক খুশি। মহান আল্লাহ তায়ালাহ যেনো শেখ হাসিনাকে নেক হায়াত দান করেন এবং তিনি যাতে আরো অনেক মানুষকে সাহায্য সহযোগিতা করেন এই দোয়া করি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একবার সামনাসামনি দেখার ইচ্ছা পোষণ করে তিনি আরো বলেন, ‘শেখের বেটিরে যাতে একবার সামনাসামনি দেখতে পারি এটাই জীবনের শেষ ইচ্ছা’। তিনি প্রধানমন্ত্রীর পায়ে ধরে একবার সালাম করতে চান। মহান আল্লাহ তায়ালাহ যেনো তার এই শেষ ইচ্ছাটুকু পূরণ করেন।’
এ সময় ডিসি আনার কলি মাহবুব ও ইউপি চেয়ারম্যান এসএমএ ওয়ারেজ নাঈমের জন্যও আল্লাহর কাছে দোয়া চেয়ে তিনি আরো বলেন, যাতে আর কখনো ভিক্ষাবৃত্তি না করতে হয়, এ জন্য ডিসি সাহেব তাকে একটি দোকান করে দিয়েছেন। দোকানের মালামাল তোলার জন্য ২০ হাজার টাকা দিয়েছেন। চেয়ারম্যান একটি অটোরিকশা কিনে দিয়েছেন। আল্লাহ তাদের মঙ্গল করুক।
এ বিষয়ে ডিসি আনার কলি মাহবুব বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বৃদ্ধ নাজিম উদ্দিনের জন্য খাসজমি বন্দোবস্ত, পাকাবাড়ি করে দেওয়াসহ অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তার চিকিৎসা ও জীবিকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ভবিষ্যতেও যেকোনো প্রয়োজনে তাকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।
এদিকে নাজিম উদ্দিনের নামে স্থানীয় বাজারের নামকরণের বিষয়ে এলাকাবাসী জানান, নাজিম উদ্দিনের উদারতার জন্য তাদের গ্রামকে আজ সারাদেশ চিনেছে। তাই তার এমন উদারতাকে সম্মান করে স্থানীয় একটি বাজারের নাম ‘নাজিম উদ্দিন বাজার’ করা হয়েছে।
এমএম/পাবলিকভয়েস