ফটিকছড়ি উপজেলার নাজিরহাট পৌরসভার জামিয়া আরবিয়া নাজিরহাট বড় মাদরাসা নিয়ে বিগত বেশ কিছুদিন ধরেই উত্তপ্ত পরিস্থিতি চলছে। এর মধ্যে গত ২৭শে মে মাদরাসার পরিচালক মাওলানা ইদরীস ইন্তেকাল করার পর এ পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়ে দাড়ায়। সৃষ্টি হয় দুটি পক্ষের। এবং তাদের বিবাদ সামনে চলে আসে।
সৃষ্ট বিবাদে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমীর, ওই মাদরাসার শুরা সভাপতি ও হাটহাজারী মাদরাসার মহাপরিচালক আল্লামা শাহ আহমদ শফীর নামে মামলা করেন মাদরাসার সিনিয়র শিক্ষক মাওলানা হাবিবুর রহমান কাসেমী।
নাজিরহাট মাদরাসায় গোলযোগ : যা বলছেন মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী
আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে প্রধান এবং প্রথম আসামী ও ফরিদাবাদ মাদরাসার পরিচালক আল্লামা আবদুল কুদ্দুসকে শেষ আসামী করে আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী, আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী, আল্লামা আবদুল হালিম বোখারী, মাওলানা আনাস মাদানীসহ মোট ১৯ জনের বিরুদ্ধে তিনি চট্টগ্রামের জেলা যুগ্ম আদালতে গত ২২ জুলাই মামলা দায়ের করেন বলে জানা যায়।
মামলার দীর্ঘ এজহারে নাজিরহাট পৌরসভার জামিয়া আরবিয়া নাজিরহাট বড় মাদরাসার মুহতামিম নিয়োগ বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা দেয়া হয়।
আল্লামা শফীর বিরুদ্ধে ইসলামী আন্দোলনের নেতার মামলা ; নেপথ্য ঘটনা কী
প্রকাশিত বিবৃতিতে আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন - হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সভাপতি ও দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদরাসার পরিচালক আল্লামা শাহ আহমদ শফী সাহেব দা.বা. এর বিরুদ্ধে নাজিরহাট বড় মাদরাসার শিক্ষক মাওলানা হাবিবুর রহমান কাসেমী কর্তৃক মিথ্যা ও ষড়যন্ত্র মূলক মামলা করায় হাবিবুর রহমান কাসেমীকে চরম খেসারত দিতে হবে।
বিবৃতিটি সম্পূর্ণ অবিকৃত ও অসম্পাদিত অবস্থায় হুবহু প্রকাশ করা হলো -
আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন - দেশের সর্ববৃহৎ অরাজনৈতিক দ্বীনি সংগঠন, নাস্তিক বিরোধী আন্দোলনের সর্বজন স্বীকৃত ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্ম "হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশে"র সম্মানিত আমীর, বেফাকুল মাদারিসিল আরবিয়া বাংলাদেশের সম্মানিত চেয়ারম্যান, শাইখুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী সাহেব দা. বা. এর বিরুদ্ধে, নাজিরহাট বড় মাদরাসার পরিচালকের দায়িত্ব হস্তান্তরের বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করতঃ পরিচালকের দায়িত্তের চাহিদা পেশ করে মুফতি হাবিবুর রহমান কাসেমী কর্তৃক ষড়যন্ত্র মূলক মিথ্যা মামলা করায় হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সকল নেতা-কর্মীদের পক্ষ থেকে তিব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন হেফাজতের কেন্দ্রীয় সংগ্রামী মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী।
আজ ৯ ই আগস্ট রোববার সংবাদমাধ্যমে প্রেরিত বিবৃতিতে আল্লামা বাবুনগরী বলেন, শাইখুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী সাহেব দা. বা. দেশের সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেমে দ্বীন। হযরতের জীবনের বেশীরভাগ অংশ তাদরীস ও তা'লীমের মধ্যে অতিবাহিত হয়েছে। হযরত, জীবনের শেষ প্রান্তে এসেও থেমে থাকেনি। দাওয়াতি কাজে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে চলেছেন। হযরতের জন্য দেশে আলেম-ওলামার সম্মান এবং মর্যাদা পূর্বের চেয়ে বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। হযরতের অবদানে বাংলাদেশের সকল মাদারেসে কওমীয়্যার পড়াশোনার মান বেড়ে চলেছে ক্রমাগত।
মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী আরো বলেন, শাইখুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী সাহেব দা.বা. মুসলিমবিশ্বের এক আধ্যাত্মিক রাহবার, যার বর্ণাঢ্য জীবনের প্রতিচ্ছবি মানুষের চোখে ভেসে আছে। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে হযরতের বর্ণালী জীবনকে কালিমায় লেপটে দিতে উঠেপড়ে লেগেছে মাদারিসে কওমীয়্যার একদল ষড়যন্ত্রকারী দুষমন চক্র। তারা ওলামায়ে কওমীয়্যার মধ্যে ফাটল সৃষ্টি করতে লেগে আছে।
তিনি আরো বলেন, মুফতি হাবিবুর রহমান কাসেমী নাজিরহাট বড় মাদরাসার একজন শিক্ষক, হাটহাজারী এলাকায় তার বাড়ী, সে আল্লামা শাহ আহমদ শফী সাহেব দা.বা. এর সরাসরি ছাত্র। নাজিরহাট বড় মাদরাসার সাবেক মহাপরিচালক মাওলানা ইদরিস সাহেব রহঃ এর ইন্তেকালের পর গত ০৭-০৬-২০২০ রোজ রবিবার সকাল দশটা হতে প্রায় দু'ঘন্টা পর্যন্ত আল্লামা শাহ আহমদ শফী হাফিজাহুল্লাহর কার্যালয়ে নাজিরহাট বড় মাদরাসার শুরা বৈঠক হয়। উক্ত বৈঠকে মতামতের ভিত্তিতে নাজিরহাট বড় মাদরাসার সম্মানিত মুতাওয়াল্লি আল্লামা শাহ আহমদ শফী সাহেব দা.বা. বৈঠকের সিদ্ধান্ত হিসেবে মাওলানা সলিমুল্লাহ সাহেবকে মাদরাসার পরিচালক ঘোষণা করেছেন। সাথে সাথে মাওলানা সলিমুল্লাহ সাহেবকে মুহতামিম হিসেবে মেনে নিয়ে এলাকাবাসীকে মাদরাসায় সহযোগিতা করতে বলে ভিডিও বার্তা দিয়েছিলেন আল্লামা আহমদ শফী হাফিজাহুল্লাহ।
বিবৃতিতে আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, মজলিসে শুরার সিদ্ধান্ত এবং শাইখুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী হাফিজাহুল্লাহর এ আদেশ নাজিরহাট বড় মাদরাসার আসাতেজায়ে কেরাম মেনে নিলেও মুফতি হাবিবুর রহমান কাসেমী সাহেব মেনে না নিয়ে আল্লামা শাহ আহমদ শফী সাহেবের শানে একাধিকবার ফেইসবুক ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিয়ে হযরতের সাথে বেয়াদবিতে শামিল হয়েছেন। শেষ পর্যন্ত বেয়াদবীর চুড়ান্ত শেকড়ে গিয়ে জাতীর এই আধ্যাত্মিক মুরব্বিকে প্রধান আসামি করে ১৯ (ঊনিশ) জনের বিরুদ্ধে কোর্টে মামলা দায়ের করে।
আল্লামা বাবুনগরী বলেন, আমীরে হেফাজত আল্লামা শাহ আহমদ শফী সাহেব দা.বা. এর বিরুদ্ধে মিথ্যা ও ষড়যন্ত্র মূলক মামলা করায় হাবিবুর রহমান কাসেমীকে চরম খেসারত দিতে হবে। আমি হেফাজতের সকল নেতা-কর্মীদের পক্ষ থেকে তিব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
হেফজত মহাসচিব কঠোর হুশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন, আমি হেফাজতের পক্ষ থেকে মুফতি হাবিবুর রহমান কাসেমীকে জানাই, পাঁচ দিনের ভেতর আল্লামা শাহ আহমদ শফী হাফিজাহুল্লাহর কাছে এসে ক্ষমা চেয়ে মামলা তুলে নিতে হবে। অন্যথায় হেফাজতের পক্ষ থেকে আমরা আইনী ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবো।
আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়ে বলেন, আল্লাহ সবাইকে বুঝার তাওফিক দান করুক। আমার জন্য এবং আমাদের আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফী হাফিজাহুল্লাহর সুস্থতার জন্য দোয়া করবেন।
হেফাজত নিয়ে আল্লামা শফী ও বাবুনগরীর প্রতি মামুনুল হকের খোলা চিঠি
এইচআরআর/পাবলিক ভয়েস