গতকাল বৃহস্পতিবার তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান ও তাঁর স্ত্রী আয়াসোফিয়া মসজিদের নতুন নামফলক উম্মোচন করেছেন। বিশ্বের ঐতিহাসিক স্থাপনা ও ইউনেস্কো স্বীকৃত বিশ্বের অন্যতম হ্যারিটেজ ভবন আয়োসোফিয়াকে মসজিদ হিসেবে নেমফলক বসিয়েছেন তারা।
রাজধানী আঙ্কারায় সামরিক বিষয়ে বৈঠকের পরে রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান এবং একটি প্রতিনিধি দল গতকাল আয়াসোফিয়া মসজিদের মূল ফটকে নামফলক উন্মোচন করে সেখানে একটি গ্রুপ ছবি তোলেন। যেখানে সাথে তাঁর স্ত্রীও ছিলেন।
আরও পড়ুন : এক মহা উদ্বোধনের অপেক্ষায় আয়া সোফিয়া : আজ হবে প্রথম নামাজে জুমা
সেখানে আয়াসোফিয়া মসজিদের আজ শুক্রবারের নামাজের জন্য পুনরায় খোলার জন্য যে কাজ করা হচ্ছে তার বিষয়েও এরদোগানকে জানানো হয়েছিল। দেশী-বিদেশী উভয় দর্শনার্থীর জন্য তুরস্কের শীর্ষস্থানীয় পর্যটন স্থানগুলির মধ্যে আয়াসোফিয়া অন্যতম।
[মসজিদ হিসেবে আসিফের নতুন নেমপ্লেট। পাশেই উড়ছে তুর্কি পতাকা]
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রায় ১,৫০০ লোক জুমার নামাজে অংশ নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। দেশি-বিদেশী পর্যটকদের জন্য তুরস্কের সর্বাধিক দর্শনীয় স্থানগুলির মধ্যে আয়া সোফিয়া অন্যতম।
চলতি মাসের ১০ তারিখ এরদোগান আয়া সোফিয়াকে মসজিদ হিসেবে ঘোষণা করেন। আজ ২৪ তারিখ থেকে মসজিদটিতে নামাজ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
আরও পড়ুন : ঐতিহাসিক আয়া সোফিয়া নিয়ে ঐতিহাসিক টক-শো : একটি বিশ্লেষণ
এর আগে গত ২১ জুলাই ঐতিহাসিক আয়া সোফিয়া পরিদর্শন করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান। নামাজ শুরুর কয়েকদিন আগেই হঠাৎ ঐতিহাসিক এই স্থাপনাটি পরিদর্শনে ঝটিকা সফরে যান প্রেসিডেন্ট এরদোগান।
পরিদর্শন শেষে মসজিদটির রূপান্তর কাজ পর্যালোচনা করেছেন তিনি। একইসাথে ভবনের ভেতরে ভাসমান চিত্রের সাহায্যে সব দেখানো হয়। দেশটির ধর্মীয় কর্তৃপক্ষ, দিয়ানেত বলেছে যে খ্রিস্টান ধর্মের যে চিহ্নগুলো আছে তা নামাজের সময় পর্দা বা লেজারের সাহায্যে ঢেকে দেয়া হবে। তবে আগামী শুক্রবারের নামাজে অংশ নিতে প্রায় ১৫০০ মুসল্লির মধ্যে এরদোগান থাকবেন কি না এখনো তা স্পষ্ট নয়।
প্রসঙ্গত : ১৯৮৫ সালে, যাদুঘর হিসেবে স্থাপনাটি ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকাযর অন্তর্ভুক্ত হয়। ইস্তাম্বুলে অবস্থিত এই ঐতিহাসিক স্থাপনাটি ৯১৬ বছর টানা চার্চ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। এরপর ১৪৫৩ সালের শুরুর দিকে সুলতান মোহাম্মদ মসজিদটিকে তৎকালিন মূল্য অনুসারে খৃষ্টানদের থেকে কিনে নেন। এবং তখন থেকে শুরু করে ১৯৩৫ সাল প্রায় পাঁচশত বছর ধরে মসজিদ হিসেবেই পরিচিত ছিল এটি। এরপর ৮৬ যাবত এটা জাদুঘর হিসেবে পরিচিত ছিল।
গত ১০ জুলাই তুর্কি আদালতের রায়ে ১৯৩৪ সালের তৎকালীন মন্ত্রী পরিষদের জাদুঘরে রুপান্তরিত করার আদেশটি রহিত করার পর পুনরায় মসজিদ হিসেবে চালু করতে আর কোন বাধা রইল না। এরপর ১৬ জুলাই তুরস্কের ধর্ম বিষয়ক অধিদপ্তর এটি মসজিদে রূপান্তরিত হওয়ার পরে আয়া সোফিয়া পরিচালনার জন্য সংস্কৃতি ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সাথে একটি সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
এই চুক্তির অধীনে দেশটির সংস্কৃতি ও পর্যটন মন্ত্রণালয় আয়া সোফিয়ার সংস্কার ও সংরক্ষণের কাজ তদারকি করবে এবং ধর্ম বিষয়ক অধিদপ্তর ধর্মীয় সেবা তদারকি করবে। সূত্র : ডেইলি সাবাহ, আনাদুলু।
আরও পড়ুন :
আয়াসোফিয়ার মত বাবরি মসজিদও তার স্বরূপে ফিরে যাবে : মাসুদ আজহার
‘আয়াসোফিয়া’ তলোয়ার দিয়ে যারা জয় করেছে তারাই মালিক হবে : নুমান কর্তুলমুস
আয়াসোফিয়া নিয়ে কারও নাক গলানো মেনে নেওয়া হবে না : এরদোগান
ইস্তাম্বুলের চিঠি : আয়া সোফিয়ার আজানে ইস্তাম্বুল বিজয়ের আনন্দ
যাদুঘর থেকে মসজিদে রূপান্তরিত হলো বিখ্যাত আয়া সোফিয়া
হাছিব আর রহমান/ পাবলিক ভয়েস