"পুনর্গঠন হচ্ছে হেফাজত : বাবুনগরী মহাসচিব পদ হারাচ্ছেন!" শিরোনামে চট্টগ্রামের সুপরিচিত দৈনিক সুপ্রভাত পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে (২ জুলাই) ও প্রিন্ট সংস্করণে (৩ জুলাই) একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। "সালাহ উদ্দিন সায়েম" নামের একজন প্রতিবেদক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেন।
প্রতিবেদনটিতে হেফাজতের ভেতরগত বিভিন্ন বিষয় বেশ কয়েকজন হেফাজত নেতার নাম উল্লেখ করেই মতামত প্রকাশ করা হয়েছে। যেখানে এক পর্যায়ে বলা হয়েছে - "...নতুন কমিটিতে মহাসচিব পদ থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে জুনায়েদ বাবুনগরীকে। নতুন মহাসচিব পদে আলোচনায় আছেন সংগঠনের দুই যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ সলিমুল্লাহ ও মুফতি মোহাম্মদ ফয়জুল্লাহ।"
আরও পড়ুন - আল্লামা বাবুনগরীকে সাঈদী মুক্তির দাবি সাথে জড়িয়ে সংবাদ : ১০ লক্ষ টাকার চ্যালেঞ্জ
সেখানে মুফতী ফয়জুল্লাহর ক্ষেত্রে এক পর্যায়ে এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে - "....জানা গেছে, হেফাজতের মহাসচিব পদের জন্য নজিবুল বশরের কাছে তিন দিন আগে ফোন করে দোয়া চেয়েছেন ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি মোহাম্মদ ফয়জুল্লাহ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংসদ সদস্য সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী সুপ্রভাতকে বলেন, হেফাজতের কমিটি পুনর্গঠন করবেন সংগঠনটির আমির। শুনেছি মহাসচিব পদে পরিবর্তন হবে। মহাসচিব পদের জন্য মুফতি ফয়জুল্লাহ আমার কাছে ফোন করে দোয়া চেয়েছেন। ...এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুফতি ফয়জুল্লাহ সুপ্রভাতকে বলেন, হেফাজতের মহাসচিব পদ নিয়ে আমার কোনো প্রত্যাশা নেই। এটা নিয়ে আমি কোনো চিন্তাও করছি না। নজিবুল বশর মাইজভান্ডারির কাছে দোয়া চাওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি উনার কাছে হেফাজতের জন্য দোয়া চেয়েছি। হেফাজতের জন্য কেন দোয়া চাইলেন জানতে চাইলে মুফতি ফয়জুল্লাহ এর কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।"
আলোচিত এ অংশটুকু উদ্ধৃত করেছেন নিজের ভেরিফায়েড পেজে "হেফাজতের জন্য মাইজভান্ডারীর কাছে দোয়া চাইলেন মুফতী ফয়জুল্লাহ!" শিরোনামে পোস্ট করেছেন বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিসের সভাপতি, সোশ্যাল মিডিয়ায় পরিচিত এবং আলোচিত ইসলামী বক্তা শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক রহ. এর সন্তান মাওলানা মামুনুল হক। এছাড়াও বিষয়টি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় এ নিয়ে অনেকেই কথা বলছেন।
আরও পড়ুন : ঘৃণ্য মিথ্যাচারের কারণে সময় টিভিকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে : মামুনুল হক
তবে মুফতি ফয়জুল্লাহকে জড়িয়ে এমন সংবাদ প্রকাশ করায় সংবাদের কঠোর বিরোধিতা করে উক্ত প্রতিবেদনকে মিথ্যাচার আখ্যা দিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ-এর যুগ্ম মহাসচিব এবং ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ। একই প্রতিবাদ আবার নিজের পেজে শেয়ার করেছেন মাওলানা মামুনুল হক।
এ বিষয়ে পাবলিক ভয়েসকে মুফতী ফয়জুল্লাহ বলেন - আমার ব্যাপারে প্রকাশিত সংবাদ সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং আমি এ ধরণের কোন কথা বলিনি। 'তাহলে এই সংবাদ কেন প্রকাশিত হলো' এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি জানি না কেন আমাকে নিয়ে এমন মিথ্যাচার করা হয়েছে। একই সাথে তিনি এই সংবাদ, প্রতিবেদক ও পত্রিকার ব্যাপারে যথাযোগ্য আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলেও জানান তিনি। এবং তিনি এ বিষয়ে ফেসবুকে বিস্তারিত লিখেছেন। পাঠকদের জন্য প্রতিবেদনের শেষে মুফতী ফয়জুল্লাহর পোস্ট তুলে ধরা হলো।
এ বিষয়ে পাবলিক ভয়েসের পক্ষ থেকে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ নিয়ে এ ধরণের টানাহেঁচড়া করাকে দুঃখজনক আখ্যা দিয়ে এ বিষয়ে আলাদা কোন মতামত দিতে রাজি হননি বলে জানান।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হেফাজতের এক কেন্দ্রীয় নেতা এ বিষয়ে পাবলিক ভয়েসকে বলেন - হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ নিয়ে এক ধরণের চক্রান্ত হচ্ছে তা এখন পরিস্কার। অনেকেই উড়ে এসে জুড়ে বসে হেফাজতকে ভাঙ্গনের চেষ্টা করছে। এবং এই হেফাজতে অবশ্যই আম জনতার রক্ত রয়েছে। হেফাজত নিয়ে যে কোন ষড়যন্ত্রের প্রতিক্রিয়া খুবই খারাপ হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি। রক্তে জড়ানো হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ নিয়ে কোন ধরনের ষড়যন্ত্র এদেশের তৌহিদী জনতা মেনে নেবে না বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ, হাটহাজারী উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও মেখল মাদরাসার সিনিয়র শিক্ষক মাওলানা জাকারিয়া নোমান পাবলিক ভয়েসকে বলেন - বাংলাদেশ হেফাজত ইসলামের নেতৃত্বে রদবদল আসবে মর্মে প্রচারিত সংবাদটি অনুমান নির্ভর। হেফাজত ইসলাম একটি অরাজনৈতিক সংগঠন, এ সংগঠনের নিজস্ব কিছু কাঠামো আছে, যে কোন মুহুর্তে, যে কেউ চাইলেই এখানে কোনো ধরণের পরবির্তন আনতে পারবেন না। এছাড়া আমাদের দেশ ও ধর্মীয় অঙ্গণ বর্তমান কিঠিন পরিস্তিতি পার করছে, এ মুহুর্তে এ ধরণের কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে আমরা বিশ্বাস হয় না। তবুও যদি হেফাজত ইসলামের আমির এ ধরণের কোনো সিদ্ধান্ত নেন তবে আমাদের বলার কিছু নেই।
সুপ্রভাতের প্রতিবেদন বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে মুফতী ফয়জুল্লাহর ফেসবুক পোস্ট।
আজ শুক্রবার দৈনিক সুপ্রভাতের অনলাইন সংস্করণে ‘পুনর্গঠন হচ্ছে হেফাজত : বাবুনগরী মহাসচিব পদ হারাচ্ছেন! শীর্ষক প্রতিবেদনে আমার সম্পর্কে চরম আক্রমণাত্মক, মিথ্যা, বিকৃত ও মানহানিকর তথ্য প্রদান করা হয়েছে। প্রতিবেদনে হলুদ সাংবাদিকতা কাকে বলে এর নতুন নজির স্থাপন করা হয়েছে। আমার সম্পর্কে এমন ঔদ্ধত্যপূর্ণ মন্তব্য চরম অবমাননাকর ও মানহানিকর। এমন মিথ্যা কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায় না। প্রতিবেদক কার প্ররোচনায় অথবা কাকে খুশি করার জন্য এমন জঘন্য মিথ্যাচার করলেন তা আমার বোধগম্য নয়।
প্রতিবেদনের এক পর্যায়ে বলা হয়েছে , " হেফাজতের মহাসচিব পদ নিয়ে আমার কোনো প্রত্যাশা নেই। এটা নিয়ে আমি কোনো চিন্তাও করছি না।" যেখানে আমার কোনো প্রত্যাশা নেই। এটা নিয়ে আমি কোনো চিন্তাও করছি না' সেখানে কোন দুঃখে আমি দু'আ চাইতে যাবো? আবার অন্য জায়গায় বলা হয়েছে 'একজন দাবী করেছেন ; আমি উনার কাছে দু'আ চেয়েছি'। এর পর বলা হয়েছে, দোয়া চাওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি উনার কাছে হেফাজতের জন্য দোয়া চেয়েছি। ' মুলত আমাকে প্রশ্ন করা হলে- আমি বলেছি ; আমি দু'আ চেয়েছি ? ( প্রশ্ন করেছি )। উনার কাছে দু'আ চাইব কেন? উনি হেফাজতের কি ? বলেছি, এসব মিথ্যা কথা, আজগুবি কথা। বাজে কথা।
আমি এই মিথ্যা বানোয়াট প্রতিবেদনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। প্রয়োজনে প্রতিবেদকসহ সংশ্লিষ্ট সবার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ হবে।
আরএম/এইচআরআর/পাবলিক ভয়েস