মাস খানেক ধরে গুঞ্জন ছিলো আফগানিস্তানের তালেবান নেতৃত্বে টানাপোড়ন চলছে। পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এবং মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ এসব নেতৃত্ব টানাপোড়ন তৈরি করছে বলেও একটি আলোচনা ছিলো।
এবং এসবের মধ্যেই তালেবানের নেতৃত্বে এসেছেন মোল্লা ওমরের ছেলে মোল্লা ইয়াকুব এমন একটি আলোচনাও ছিলো। সম্প্রতি এ আলোচনা বিষয়ে মুখ খুলেছেন তালেবান প্রধান হায়বাতুল্লাহ। একই সাথে তিনি এবং কয়েকজন তালেবান নেতা আফগান সরকারের সাথে আলোচনা নিয়েও কথা বলেছেন -
তালেবানদের সর্বোচ্চ নেতা হায়বাতুল্লাহ আখুন্দজাদে বলেছেন - মোল্লা ওমরের বড় ছেলে মোল্লা ইয়াকুবকে তালেবানের সামরিক কমিশনের প্রধান হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এবং তাকে নিয়োগ দেওয়ার উদ্দিশ্য হলো - আফগান সরকারের সাথে তালেবান সরকারে মূল আলোচনার আগে সকল বিষয়ে তার নিয়ন্ত্রণ আরও জোরদার করা। তালেবান ও আফগান রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, পাকিস্তানি সংবাদপত্র ডেইলি টাইমস বুধবার এক তালেবান সদস্যের বরাত দিয়ে এ খবর জানিয়েছে। খবর - টোলো নিউজের।
এছাড়াও তালেবানের সিনিয়র এক সদস্য আরও বলেছিলেন যে তালেবানের শক্তিশালী যে "রাহবারী শূরা" বা নেতৃত্ব কাউন্সিল রয়েছে তারা আন্তঃ-আফগান আলোচনার জন্য একটি নতুন দল গঠনের পরামর্শ নিয়ে আলোচনা করছেন। এবং যারা কাতারের রাজধানী দোহায় এসব নিয়ে বৈঠকে বসবেন বলেও জানা গেছে। তবে এই শূরার সাথে মোল্লা ইয়াকুব বিষয়ে কিছুটা মতনৈক্য রয়েছে। কিন্তু আফগান সরকারের সাথে আলোচনা বিষয়ে তারা একমত অবস্থায় আছেন এখনও।
তালেবানের একজন সিনিয়র সদস্য আরও বলেছিলেন, হাইবাতুল্লাহর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে থাকা ‘রাহবারী শূরা’ (নেতৃত্ব কাউন্সিল) এর সদস্যদের সমন্বয়ে একটি নতুন আলোচনার দল গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
“তিনি বলেছিলেন যে আলোচনার দলে নতুন লোককে যুক্ত করার জন্য আরও একটি প্রস্তাব রয়েছে। এই প্রস্তাবের পিছনে ধারণাটি হল দলটি কারও প্রভাবের বাইরে থাকা উচিত।
এছাড়াও এই “তালেবান নেতারা আন্তঃ-আফগান আলোচনার আগে আফগানিস্তানে তালেবানের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পথ পরিস্কার করে নিতে আগ্রহী,” বলেছেন পাকিস্তানের সাংবাদিক তাহির খান।
তবে আফগান সরকারের সাথে আলোচনার ক্ষেত্রে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তালেবান নেতা বলেছেন - "এখনও কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়নি এবং আগামী দিনের বৈঠকে এই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হবে বলে আশা করা হচ্ছে"
এছাড়াও মোল্লা ইয়াকুবকে নিয়োগের জন্য আখুনজাদার সিদ্ধান্ত শুরার সদস্যদের অবাক করে দিয়েছিল কারণ আগে তাদেরকে এ বিষয়টি জানানো হয়নি। তবে তাকে নিয়োগের ক্ষেত্রে মতামত দিতে গিয়ে সাবেক তালেবান কমান্ডার সাঈদ আকবর আগা বলেন - "আমি মনে করি সামরিক বিষয়ক প্রধান হিসাবে মোল্লা ইয়াকুবকে নিয়োগের বিষয়ে আগে আলোচনা হয়েছিল"।
এছাড়াও সূত্রটি জানায়, তালিবান প্রধান সাধারণত সকল সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে নেতৃত্ব পরিষদ, উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সংস্থার সদস্যদের পরামর্শ নেন। কিন্তু মোল্লা ইয়াকুবের ক্ষেত্রে সেভাবে আলোচনা করা হয়নি।
তবে মোল্লা ইয়াকুব পরবর্তিতে শূরার সদস্যদের তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে তার অ্যাপয়েন্টমেন্ট সম্পর্কে অবহিত করতে এবং তাদের সহযোগিতা চাইতে গিয়েছিলেন।
প্রসঙ্গত : গত প্রায় মাস খানেক ধরেই তালেবান বিষয়ে বিভিন্ন গুঞ্জন ডালপালা মেলেছিলো। কারণ তালেবানের গত কয়েকটি বৈঠকে তালেবান-আমেরিকা শান্তিচুক্তিতে নেতৃত্ব দেওয়া তালেবানদের সর্বোচ্চ নেতা হায়বাতুল্লাহ আখুন্দজাদে অংশগ্রহণ করেননি বরং তাঁর স্থানে সিরাজুদ্দিন হাক্কানিকে দেখা গেছে বলে।
সিরাজুদ্দিন হক্কানী হায়বাতুল্লাহর ডেপুটি হলেও তিনি আল কায়েদা-সংশ্লিষ্ট হাক্কানি নেটওয়ার্কের নেতা। এই নেটওয়ার্কটি তালেবানদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও আফগান কর্তৃপক্ষের চুক্তির বিরুদ্ধে। ফলে হায়বাতুল্লাহ চুক্তির পক্ষে থাকলেও তার অনুপস্থিতি নতুন করে সংকটের সৃষ্টি করেছে।
কাবুলের এক গোয়েন্দা সূত্র ফরেন পলিসিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানায়, তালেবানদের শীর্ষস্থানীয় বেশ কয়েকজন নেতা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে হায়বাতুল্লাহ আছেন কি না তা নিশ্চিত করা যায়নি।
তবে গতকাল তালেবান প্রধানের বিবৃতি অনেক গুঞ্জনকেই পরিস্কার করে দিয়েছে বলেও মতামত দিয়েছেন আফগান বিশ্লেষক পাকিস্তানী সাংবাদিক তাহির খান।
আফগান গণমাধ্যম অবলম্বনে।
বিজ্ঞাপন
[caption id="attachment_80017" align="aligncenter" width="492"] বিজ্ঞাপন | আহমদ অ্যাডুকেশন[/caption]