পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান জনপ্রিয়তা হারাচ্ছেন। পাশাপাশি গত কয়েক মাস ধরে সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ শুরু করেছে সেনাবাহিনী। এমনকি ‘সেনাবাহিনীর সহযোগিতায়’ ক্ষমতায় আসা ইমরান খানও সরকারের কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদে বর্তমান ও অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিয়েছেন। আর এই ঘটনা দেশটিতে সামরিক প্রভাব বৃদ্ধি পাওয়ারই লক্ষণ বলে দাবি করছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক বিশ্লেষক।
তাদের মতে, আর্থিক সঙ্কট, মূল্যবৃদ্ধি-সহ একাধিক ইস্যুতে ইমরানের জনপ্রিয়তা ধীরে ধীরে হ্রাস পাচ্ছে। সেই সুযোগে সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে প্রবেশ করছেন সেনা কর্মকর্তারা। ইমরানের বিভিন্ন সিদ্ধান্তেও তারা প্রভাব বিস্তার করছেন।
ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির বরাতে জানা যায়, ২০১৮ সালে পাকিস্তানের ৪৮ শতাংশ মানুষের জনমত নিয়ে ক্ষমতায় আসেন ইমরান খান। ‘নয়া পাকিস্তান’ এই স্লোগান নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসার তিন বছর পার হয়ে গেলেও পাকিস্তানের জনগণের মধ্যে হারাতে বসেছেন নিজের জনপ্রিয়তা। গত কয়েক বছর ধরে চলমান অর্থনৈতিক সংকটের লাগাম টেনে ধরতে পারেননি তিনি, পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে। তার ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহচরদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও তিনি এর বিরুদ্ধে কোনো কঠোর ব্যবস্থা নেননি বলেও অভিযোগ আছে। যার কারণে পাকিস্তানিদের মধ্যে এক ধরনের হতাশা তৈরি হয়েছে।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, জনগণের এই হতাশা যত বৃদ্ধি পাবে পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তারা তত বেশি সরকারের ওপর হস্তক্ষেপ শুরু করবেন। এটি দেশটির পুরানা ঐতিহ্যের অংশ। ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্তি লাভের পর থেকেই বিভিন্ন মেয়াদে পাকিস্তানে সেনা শাসন অব্যাহত থেকেছে।
নিউইয়র্কের বিজিয়ার কনসাল্টিং প্রেসিডেন্ট ও মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার কূটনৈতিক গবেষক আরিফ রফিক বলেন, ইমরানের জনপ্রিয়তা যত কমবে, সরকারে সেনাবাহিনীর উপস্থিতি ও প্রভাব তত বাড়বে। ভবিষ্যতে পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রীর ওপর সেনাবাহিনীর চাপ আরো বাড়বে। এর কারণ করোনাভাইরাসের কারণে দেশটি ইতোমধ্যে বেশ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।
এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, পাকিস্তানে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার পর লকডাউন নিয়ে সেনাবাহিনীর সঙ্গে ইমরানের মতবিরোধ স্পষ্ট হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার সঙ্গে অমত থাকার পরও খোলাখুলি কড়া লকডাউন জারি করে সেনাবাহিনী।
এসব কারণে নতুন করে আন্তর্জাতিক মহলে গুঞ্জন উঠেছে যে, পাকিস্তানের ক্ষমতা ফের দখল করতে যাচ্ছে দেশটির প্রভাবশালী সেনাবাহিনী।
এনডিটিভি বলছে, এ প্রসঙ্গে পাকিস্তানি সরকারের ঊর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি। ইমরান খানের মুখপাত্র নাদিম আফজারের সঙ্গে স্থানীয় গণমাধ্যম যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এমএম/পাবলিকভয়েস