মহামারী করোনাভাইরাসে আজে সোমবারও (৮ জুন) দেশে আবারো রেকর্ড সর্বোচ্চ ৪২ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং শনাক্ত হয়েছে ২৭৩৫জন।
এ নিয়ে দেশে মোট মৃত্যু হলো ৯৩০ জনের এবং শনাক্ত হলো ৬৮ হাজার ৫০৪জন। মৃতদের মধ্যে ৩৩জন পুরুষ এবং ৯জন নারী।
আজ সোমবার (৮ জুন) দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত সংবাদ বুলেটিনের ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানিয়েছেন, আইইডিসিআর এর মহাপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা।
আজকেও ৫২টি ল্যাবের তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে জানিয়েছেন ডা. নাসিমা সুলতানা জানান।
নাসিমা সুলতানা জানান, গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১৩ হাজার ৯৬১টি। পরীক্ষা করা হয়েছে ১২ হাজার ৯৪৪টি। এ নিয়ে দেশে মোট নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৪ লাখ ১১ হাজার ১২৭টি।
এছাড়াও গত ২৪ ঘন্টায় আইসোলেশনে গেছে ২৯৭জন, ছাড় পেয়েছে ১৪৪জন। এ নিয়ে মোট আইসোলেশনে গেছে ১১৮৭১জন এবং মোট ছাড় পেয়েছে ৪৩১৯জন।
প্রসঙ্গ : বাংলাদেশে গত ৮ ই মার্চ করোনাভাইরাস প্রথম ধরা পড়ে। এরপর হুহু করে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। করোনাভাইরাসে বিশ্বব্যাপী মৃতের সংখ্যা এই মূহুর্তে চার লাখের বেশি। প্রতিমূহুর্ত বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। আজ ৮ জুন দুপুর ২টা পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী করোনায় মৃতের সংখ্যা ৪ লক্ষ ৬ হাজারেরও বেশি। এরমধ্যে শুধুমাত্র আমেরিকাতেই প্রায় ১ লাখ সাড়ে ১২ হাজার মানুষ মারা গেছে।
বাংলাদেশেও প্রতিদিন বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। বিশেষ করে পরীক্ষা যতো বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে হু হু করে। বাড়ছে ঝুঁকি। এরইমধ্যে উঠে গেছে লকডাউন। স্বাস্থ্যবিভাগ থেকে বারবার সতর্কবার্তা এবং নাগরিকদের সচেতনতার আহ্বান জানানো হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত ৩১ মে রোববার স্মরণকালের সর্বোচ্চ ৪০জনের মৃত্যু ২৫৪৫জন শনাক্তের রেকর্ড হয় দেশে। এরপর প্রতিদিনই ৩০ এর উপরে উঠানামা করছে মৃতের সংখ্যা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে সর্বশেষ গতকার রোববার (৭ জুন) আবারো মৃতের সংখ্যা নতুন সর্বোচ্চ ৪২জনের রেকর্ড হয় দেশে।
এদিকে ফের কার্যত পুরো বাংলাদেশে আবারো লকডাউনের কবলে পড়লো। দেশে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) বিস্তার ঠেকাতে এলাকাভিত্তিক লকডাউনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
এই উদ্যোগে গতকাল শনিবার হালনাগাদকৃত স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী সারাদেশের ৫০ জেলা পুরোপুরি রেড জোন তথা লকডাউনের আওয়তায় এবং ১৯ জেলা ইয়োলে জোনে আংশিক লকডাউন। অন্যদিকে লকডাউন মুক্ত নিরাপদ জেলা গ্রিণ জোন মাত্র একটি। অর্থাৎ দেশেরে একমাত্র নিরাপদ জেলা ‘ঝিনাইদহ’।
এছাড়া রাজধানী ঢাকার ৩৮টি এলাকাকে ইয়েলো জোন ঘোষণা করে আংশিক লকডাউন করা হয়েছে। তবে গ্রিন জোন হিসেব লকডাউন নয় ওয়েবসাইটে এমন এলাকা দেখানো হয়েছে ১১টি এলাকাকে। এছাড়া এখন পর্যন্ত পুরোপুরি লকডাউন তথা রেড জোন হিসেবে কোনো এলাকাকে দেখানো হয়নি।
শনিবারই চূড়ান্ত খবর আসে যে, আক্রান্তের আধিক্য বিবেচনায় রেড জোন, ইয়েলো জোন ও গ্রিন জোনে চিহ্নিত করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বাস্তবায়ন হবে স্বাস্থ্যবিধি ও আইনি পদক্ষেপ।
সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে এ কথা জানানোর পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেশের তিনটি বিভাগ, ৫০টি জেলা ও ৪০০টি উপজেলাকে পুরোপুরি লকডাউন (রেড জোন বিবেচিত) দেখানো হয়েছে আংশিক লকডাউন (ইয়েলো জোন বিবেচিত) দেখানো হচ্ছে পাঁচটি বিভাগ, ১৩টি জেলা ও ১৯টি উপজেলাকে। আর লকডাউন নয় (গ্রিন জোন বিবেচিত) এমন জেলা দেখানো হয়েছে মাত্র একটি এবং উপজেলা দেখানো হয়েছে ৭৫টি।
বরিশাল:
মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে শনিবার (৬ জুন) সর্বশেষ আপডেট করা তালিকায় বরিশাল বিভাগের মধ্যে পুরোপুরি লকডাউন বলা হয়েছে বরগুনা, বরিশাল, পটুয়াখালী ও পিরোজপুরকে। এই বিভাগে আংশিক লকডাউন ভোলা ও ঝালকাঠি।
চট্টগ্রাম বিভাগ:
চট্টগ্রাম বিভাগে পুরোপুরি লকডাউন বলা হচ্ছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, কুমিল্লা, কক্সবাজার, ফেনী, খাগড়াছড়ি, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালীকে। এই বিভাগে আংশিক লকডাউন বান্দরবান, চট্টগ্রাম ও রাঙ্গামাটি।
ঢাকা বিভাগ:
ঢাকা বিভাগের মধ্যে পুরোপুরি লকডাউন বলা হচ্ছে গাজীপুর, গোপালগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, মাদারীপুর, মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর ও টাঙ্গাইলকে। এই বিভাগে শুধু ঢাকা ও ফরিদপুর আংশিক লকডাউন।
খুলনা বিভাগ:
খুলনা বিভাগের মধ্যে চুয়াডাঙ্গা, যশোর, খুলনা, মেহেরপুর, নড়াইল ও সাতক্ষীরাকে পুরোপুরি লকডাউন বলা হচ্ছে। এই বিভাগে আংশিক লকডাউন বলা হচ্ছে বাগেরহাট, কুষ্টিয়া ও মাগুরাকে।
খুলনা বিভাগেই দেশের একমাত্র গ্রিন জোন চিহ্নিত জেলা ঝিনাইদহ, অর্থাৎ এটি লকডাউন নয়।
রাজশাহী বিভাগ:
রাজশাহী বিভাগের মধ্যে পুরোপুরি লকডাউন বলা হচ্ছে বগুড়া, জয়পুরহাট, নওগাঁ, নাটোর ও রাজশাহীকে। এই বিভাগে আংশিক লকডাউন চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ।
রংপুর বিভাগ:
রংপুর বিভাগের আটটি জেলাকেই পুরোপুরি লকডাউন বলা হচ্ছে। জেলাগুলো হলো- দিনাজপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী, পঞ্চগড়, রংপুর ও ঠাকুরগাঁও।
সিলেট বিভাগ:
সিলেট বিভাগের সব ক’টি জেলাকেই বলা হচ্ছে পুরোপুরি লকডাউন। বিভাগের জেলাগুলো হলো- হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ ও সিলেট।
ময়মনসিংহ বিভাগ:
ময়মনসিংহ বিভাগেরও সব ক’টি জেলাকে পুরোপুরি লকডাউন বলা হচ্ছে। এ চারটি জেলা হলো জামালপুর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা ও শেরপুর।
এদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে ঢাকা মহানগরীর ৩৮টি এলাকাকে আংশিক লকডাউন (ইয়েলো জোন বিবেচিত) হিসেবে দেখানো হচ্ছে। তবে লকডাউন নয় (গ্রিন জোন বিবেচিত) বলে দেখানো হচ্ছে ১১টি এলাকাকে। এখন পর্যন্ত পুরোপুরি লকডাউন (রেড জোন বিবেচিত) হিসেবে ঢাকার কোনো এলাকাকে দেখানো হচ্ছে না।
মহানগরীর আংশিক লকডাউন বলে চিহ্নিত ৩৮টি এলাকা হলো- আদাবর, থানা, উত্তরা পূর্ব, উত্তরা পশ্চিম, ওয়ারী, কদমতলী, কলাবাগান, কাফরুল, কামরাঙ্গীরচর, কোতয়ালী, খিলক্ষেত, গুলশান, গেন্ডারিয়া, চকবাজার, ডেমরা, তেজগাঁও, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল, দক্ষিণখান, দারুসসালাম, ধানমন্ডি, নিউমার্কেট, পল্টন মডেল, পল্লবী, বংশাল, বাড্ডা, বিমানবন্দর, ভাটারা, মিরপুর মডেল, মুগদা, মোহাম্মদপুর, যাত্রাবাড়ী, রমনা মডেল, লালবাগ, শাহআলী, শাহজাহানপুর, শেরেবাংলা নগর, সবুজবাগ, সুত্রাপুর ও হাজারীবাগ থানা এলাকা।
আর লকডাউন নয় বলে চিহ্নিত ১১টি এলাকা হলো- উত্তরখান থানা, ক্যান্টনমেন্ট থানা, খিলগাঁও, তুরাগ, বনানী, ভাষানটেক, মতিঝিল, রামপুরা, রূপনগর, শাহবাগ ও শ্যামপুর থানা এলাকা।
স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে জানা যায়, আজ রোববার (৭ জুন) থেকেই কিছু জায়গায় জোনিং ব্যবস্থার মাধ্যমে লকডাউন শুরু হচ্ছে।
বেশি আক্রান্ত এলাকাকে রেড, অপেক্ষাকৃত কম আক্রান্ত এলাকাকে ইয়োলো ও একেবারে কম আক্রান্ত বা সংক্রমণমুক্ত এলাকাকে গ্রিন জোন হিসেবে চিহ্নিত করে স্বাস্থ্যবিধি বাস্তবায়ন করা হবে।
গ্রিন জোনে সতর্কতা এবং ইয়েলো জোনে সংক্রমণ যেন আর না বাড়ে সেজন্য পদক্ষেপ থাকলেও রেড জোনে করোনার বিশেষ গাইডলাইন অনুযায়ী কঠোর হবে পুলিশ।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের সর্বশেষ বুলেটিন অনুসারে, দেশে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৬৩ হাজার ২৬ জন। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায়ই আক্রান্ত হয়েছেন দুই হাজার ৬৩৫ জন। আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন ৮৪৬ জন। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায়ই মারা গেছেন ৩৫ জন।
রোববার: স্মরণকালের সর্বোচ্চ রেকর্ড ৪০ জনের মৃত্যু, শনাক্ত সর্বোচ্চ ২৫৪৫
রোববার: ফের সর্বোচ্চ মৃতের রেকর্ড, আজ শনাক্ত ২৭৪৩জন
/এসএস