মৃত্যুর পর ৪৪দিন ধরে হিমাগারে পড়ে ছিলো কিশোর আরাফাত হোসেনের (১৭) লাশ। অপরাধ করোনা উপসর্গে মারা গেছে। এজন্য লাশ নিতে অস্বীকার করে পরিবার-স্বজনরা। এমন রোমহর্ষক ঘটনাটি ঘটেছে মোমেনশাহীতে।
জানা যায়, আরাফাতের বাড়ি মোমেনশাহীর ত্রিশাল পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডে। গত ২০শে এপ্রিল বাবা মজনু মিয়া করোনা উপসর্গ থাকায় ছেলে আরাফাত হোসেনকে নগরীর এসকে (সূর্য কান্ত) হাসপাতালে ভর্তি করেন।
ভর্তির দু’দিন পর ২২শে এপ্রিল চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরাফাত হোসেনের (১৭) মৃত্যু হয়। আশ্চার্যজনক হলেও করোনা সন্দেহের কারণে লাশ নিতে রাজী হয়নি বাবা-মা বা পরিবারের কেউই। মৃত্যুর পর দাফনের আগ পর্যন্ত মোমেনশাহী মেডিকেল কলেজের মর্গে পড়েছিলো আরাফাতের লাশ। একবারের জন্য খোঁজ নিতে যায়নি পরিবারের কোনো সদস্য।
অবশেষে ত্রিশাল পৌরসভা মেয়রের বিশেষ অনুরোধে ৪৪দিন পর আজ শুক্রবার মধ্যরাত (বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত) আরাফাতের লাশ দাফন করে সামাজিক সেবামূলক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ইকরামুল মুসলিমীন ফাউন্ডেশন মোমেনশাহী জেলা শাখা কাফন-দাফন টিম।
ত্রিশাল পৌরসভা মেয়র এবি এম আনিছুজ্জামান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান এর বরাতে ইকরামুল মুসলিমীন ফাউন্ডেশন মোমেনশাহী জেলা টিম প্রধান মুহাম্মাদ এহসানুল হককে ফোন করে লাশ দাফনের ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করেন উপজেলা পরিষদ মসজিদের ইমাম মুফতী মোস্তফা আল-হোসাইনী।
ইকরামুল মুসলিমীন ফাউন্ডেশন মোমেনশাহী জেলা টিম প্রধান মুহাম্মাদ এহসানুল হক, গতকাল (বৃহস্পতিবার) উপজেলা পরিষদ মসজিদের ইমাম মুফতী মোস্তফা আল-হোসাইনী আমাকে ফোন করে ৪৪দিন ধরে আরাফাতের লাশ হিমগরে থাকার কথা জানান এবং পৌরসভা মেয়র ও ইউএনও স্যারের বরাতে আমাদেরকে লাশ দাফনের অনুরোধ করেন। পরে আমরা লাশ গোসল-জানাযা ও কাফন-দাফনের ব্যবস্থা গ্রহণ করি।
এসময় স্থানীয় প্রশাসন ও দায়িত্বশীলগণ সার্বিক সহযোগিতা করেছেন। বিশেষ করে পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মেহেদি হাসান নাসিম সার্বক্ষিণ কাফন-দাফন টিমকে সার্বক্ষণিক সঙ্গ দিয়েছেন বলে জানান মুহাম্মাদ এহসানুল হক।
তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সারদিনই গুরি গুরি বৃষ্টি হচ্ছিলো তাই কাফন-দাফনে দেরি হয়। পরে বৃষ্টিতে ভিজেই রাত ১২টার দিকে ত্রিশাল পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ড সরকারি কবরস্থানে দাফন সম্পন হয়।
ত্রিশাল পৌরসভার মেয়র এবি এম আনিছুজ্জামান জানান, ছেলেটি মারা যাওয়ার পর করোনা সন্দেহে তার লাশ গ্রহণ করেনি বাবা ও অন্যান্য স্বজনরা। এতোদিন ছেলেটির লাশ মোমেনশাহী মেডিকেলের মর্গেই ছিলো। স্থানীয় সাংবাদিকরা বিষয়টা ঘেঁটে বের করেন যে তার করোনা পজিটিভ ছিলো না।
তিনি বলেন, সাংবাদিক ফারুকসহ কয়েকজন আমাকে বিষয়টা জানালে থানা পুলিশের মাধ্যমে গতকালকে তার বাবাকে ডেকে ৫হাজার টাকা দিয়ে হাসপাতাল থেকে লাশ আনাই। তারপর ইমাম সাহেবকে বলি। কাউন্সিলর মেহেদি হাসানের নেতৃত্বে আমাদের পৌরসভার লোক দিয়ে কবরখনসহ সার্বিক ব্যবস্থা করি। ইমাম সাহেবের আহ্বানে জানাযা ও কাফন-দাফন সম্পন্ন করে সামাজিক সেবামূলক সংগঠনের দায়িত্বশীলরা।
মুহাম্মাদ এহসানুল হক এর ইমামতিতে জাোযা নামাজে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা পরিষদ মসজিদের ইমাম মুফতী মোস্তফা আল-হোসাইনী, ত্রিশালের স্থানীয় সংগঠন আত-তাকওয়া ফাউন্ডেশন-এর টিম প্রধান হাফেজ মোঃ আরিফুল ইসলাম, মোঃ আবুবকর সিদ্দিক (রানা), মোঃ তৈয়ব উদ্দিন (সুমন) প্রমুখ।
এদিকে গত বুধবার শেষ রাতে (মঙ্গলবার দিবাগত রাত) ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধক্ষ রওশন আলীর কাফন দাফন করে ইকরামুল মুসলিমীন ফাউন্ডেশন ঠাকুরগাঁও জেলা শাখা টিম।
ঠাকুরগাঁও জেলা শাখা টিমের সদস্যরা মাওলানা আনাস মাদানীর নেতৃত্বে কাফন-দাফনে অংশ গ্রহণ করেন। হাফেজ মো. গাজী হাবিবের ইমামতিতে জানাযা নামাজে উপস্থিত ছিলেন, হাফেজ ফয়সাল মুরাদ, মাওলানা ইব্রাহিম সাঈদ, এফ আর খালিদ, মোঃ একরামুল ইসলাম ও মোঃ আবু হানিফ প্রমুখ।
সংশ্লিষ্ট আরো খবর:
আরো ৬ লাশ দাফন করলো ইকরামুল মুসলিমীন ফাউন্ডেশন
দুই দিনে করোনায় মৃত ৫জনের লাশ দাফন করেছে ইকরামুল মুসলিমীন
শ্রীমঙ্গলে মুক্তিযোদ্ধা বিকাশ দত্তসহ তিন লাশ সৎকার ও দাফনে ইকরামুল মুসলিমীন
আম্পানে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ইকরামুল মুসলিমীনের ত্রাণ বিতরণ
পানিবন্দী খৃস্টানদের পাশে দাঁড়িয়ে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন ইকরামুল মুসলিমীনের
/এসএস