করোনাভাইরাস মহামারি শুরু হওয়ার পর সারাদেশে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের তৎপরতায় করোনা আক্রান্ত হয়ে বা করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণ করা ব্যাক্তিদের লাশের জানাযা-দাফন বা সৎকারের কাজ করা হলেও রাজনৈতিক দল হিসেবে এককভাবে কেবল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সারাদেশে জানাযা-দাফনের কাজ করে যাচ্ছে।
এছাড়া কোন রাজনৈতিক দলই সারাদেশে করোনা মহামারির এ সময়ে এমন ধারাবাহিক কার্যক্রম অব্যহত রাখেনি। ত্রাণ বিতরণ থেকে শুরু করে লাশ দাফন-কাফনে সারাদেশেই কাজ করে যাচ্ছে পীর সাহেব চরমোনাই নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।
এর মধ্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ চাঁদপুর জেলা শাখার ব্যবস্থাপনায় প্রশাসনের অনুমতি ও সহযোগিতা নিয়ে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করা ১৫ জন নারী-পুরুষের জানাযা ও দাফনের কাজ করেছে বলে জানা গেছে।
এমনকি প্রতিবেদন লেখার সময়ও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে - ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ চাঁদপুর টিম ১৬ তম জানাযা ও দাফনের কাজে যাচ্ছে। এই প্রতিবেদনে চাঁদপুরে জানাযা ও দাফনের কাজ করা ১৫ জনের তালিকা দেওয়া হলো -
[এই তালিকা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ চাঁদপুর জেলা শাখা কমিটি থেকে পাবলিক ভয়েস কর্তৃক সংগ্রহিত]
দাফন ও জানাযা কার্যক্রম সম্পর্কে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ চাঁদপুর জেলা সভাপতি শেখ মুহা. জয়নাল আবেদিন পাবলিক ভয়েসকে বলেন - করোনা দুর্যোগের এই সময় আমরা পীর সাহেব চরমোনাইর আহবানে সাড়া দিয়ে মানুষের জন্য কাজ করে যাওয়ার ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছি।
সে ধারাবাহিকতায়ই করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করা নারী বা পুরুষদের জানাযা-দাফনে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। যেহেতু করোনা রোগীদের পাশে কেউ যেতে চায় না তাই তাদের জানাযা-দাফন নিয়ে বেশ মর্মান্তিক কথাও শোনা যায়। আমরা চাঁদপুরে ঘোষণা দিয়েছি যে - এই জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করা কেহই অবহেলায় জানাযা-দাফন হবে না। আমাদেরকে খবর দিলেই আমরা জানাযা দাফনের কাজে পৌঁছে যাবো।
একই সাথে প্রশাসন আমাদের বেশ সহযোগিতা করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন - আমরা প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাই যে তারা আমাদেরকে এ কাজে অনেক সহায়তা দিচ্ছেন একই সাথে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কমিটি তাদের নিয়মিত খোঁজ খবর নিচ্ছেন বলেও জানান তিনি।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ চাঁদপুর জেলা শাখার সদস্যদের ধন্যবাদ জানিয়ে সংগঠনের জেলা সেক্রেটারী ইয়াসিন রাশেদসানী পাবলিক ভয়েসকে বলেন - আমরা লাশ দাফন করতে গিয়ে অনেক তিক্ত ঘটনার মুখোমুখি হচ্ছি।
বিশেষ করে ১৫ তম লাশ দাফনের ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন - গত ২৭মে‘ ২০ রাত ৯টায় মতলব দক্ষিণ উপজেলার নায়েরগাও উত্তর ইউনিয়নের মোঃ হাসান পাটোয়ারি করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যান। মতলব দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও থানা নির্বাহী অফিসার (UNO) মেডামের কাছ থেকে ফোন আসে শামছুল হক মডেল মাদরাসার মুহতামিম ও ইসলামী যুব আন্দোলন মতলব দক্ষিনের সভাপতি, মাওঃ সিফাত উল্লাহ মজুমদারের কাছে। তারা জানান- একজন করোনায় মৃত ব্যাক্তির লাশ দাফনে যেতে হবে।
সাথে সাথেই মতলব দক্ষিণের সেচ্ছাসেবক টিম প্রধান, মাওঃ সিফাত উল্লাহর নেতৃত্বে ছয় সদস্য বিশিষ্ট টিম প্রস্তুত করে ঝড়তুফানের মধ্যেই রওয়ান হয়ে যায় জানাযা-দাফনের উদ্দেশ্যে।
কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো তারা লাশ গোসল দিয়ে দাফনের জন্য প্রস্তুত করলে লাশ নিয়ে মানুষ চলাচলের কোন রাস্তা দিয়ে যেতে দেয়নি প্রতিবেশীরা। তখন তারা বাধ্য হয়ে অচেনা জঙ্গল পাড়ি দেয় লাশ কবরস্ত করার জন্য। একদিকে চারদিকের কাটার আঘাত অপরদিকে নীছে পানি, গাঁয়ে জড়ানো পিপিএ ছিঁড়ে অরক্ষিত হয়ে যায় অনেকেই। তারপরও তারা প্রায় রাত ২ টা পর্যন্ত সময় নিয়ে ঝুঁকির মধ্যেই লাশ দাফন করে আসে।
এমন আরও অনেক ঘটনা আছে বলে জানান তিনি। এরপরও তাদের স্বেচ্ছাসেবক টিম ধারাবাহিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।
অপরদিকে করোনা আক্রান্তদের লাশ দাফন-কাফনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করেছে চাঁদপুরের কয়েকজন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও স্থানীয়রা। সোশ্যাল মিডিয়াতেও অনেকে তাদের প্রশংসায় ভাসিয়েছেন।
#এইচআরআর/পাবলিক ভয়েস