খেলার মাঠ দখল এবং চারা লাগানোর বিবাদকে কেন্দ্র করে মালিক পক্ষের বাড়াবাড়ির কারণে গত ৪ মার্চ থেকে দীর্ঘ প্রায় ৩ মাস ধরে বন্ধ থাকা হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের রেমা চা-বাগানের শ্রমিকদের পাশে দাড়িয়েছেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ও সমাজসেবক ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।
এ ছাড়াও মালিকপক্ষ ঠিক না হওয়া পর্যন্ত এই বাগানের চা শ্রমিকদের পাশে সর্বাত্মকভাবে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন ব্যারিস্টার সুমন। তিনি বলেছেন- যতদিন এই সমস্যা ঠিক না হবে ততদিন আমি চা শ্রমিকদের পাশেই থাকবো। সাধ্যমত তাদের খাবারের ব্যবস্থা করবো।
পূর্ব প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবেই ব্যারিস্টার সুমন চা রেমা চা বাগানের অসহায় শ্রমিকদের পাশে দাড়িয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। অসহায় শ্রমিকদের মাঝে তিনি প্রায় দুই টন চাল, চার বস্তা ডালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন জিনিস বিতরণ করেছেন এবং এ ধারবাহিকতা চলমান থাকবে।
এর আগে ব্যারিস্টার সুমন কয়েকবারই চা শ্রমিকদের দুর্দশা নিয়ে কথা বলেছেন এবং তাদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বিশেষ করে গত তিন চার দিন আগে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া চা শ্রমিক সন্তানদের সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয় চা ছাত্র সংসদ (উৎস) এর মাধ্যমে ৪৮০টি অসহায় ও কর্মহীন চা শ্রমিক পরিবারের মাঝে ত্রাণ উপহার দিয়েছিলো।
সেখানে ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন নিজে উপস্থিত থেকে এইসব চা শ্রমিক সন্তানদের উৎসাহ দিয়েছেন। একই সাথে তিনি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট সকলকেই এই শ্রমিকদের দিকে নজর দেওয়ার আহবান জানিয়েছেন।
অপরদিকে চুনারুঘাট উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির লস্কর মাস খানেক আগে বাগানের শ্রমিকদের সাথে দেখা করেছেন। তিনি বাগান কতৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে দ্রুত সমস্যার সমাধান করার আশ্বাস প্রদান করছিলেন গত ২২ মার্চ। তবে দীর্ঘ ৩ মাসের কাছাকাছি সময়েও এ সমস্যার সমাধান হয়নি।
রেমা চা বাগানের সাথে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র থেকে জানা যায় - রেমা চা বাগানের মালিকদের বিরুদ্ধে শ্রমিক শোষণ-নিপীড়নের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। শুধু তাই নয়, মজুরি এবং উৎসব ভাতা বাবদ প্রায় প্রতিটি শ্রমিকের ৫০০০ টাকা করে বকেয়া রয়েছে বাগান কর্তৃপক্ষের কাছে।
এরই মধ্যে গত ৪ মার্চ, চা শ্রমিকদের খেলার মাঠ দখল করে বাগান ব্যবস্থাপক চারা গাছ রোপণ করতে উদ্যত হলে চা শ্রমিকদের সঙ্গে তার বিরোধ হয়। এই বিরোধের জের ধরে বাগান ব্যবস্থাপক চুনারুঘাট থানায় অভিযোগ করলে ৫ মার্চ পুলিশ তদন্ত করতে বাগানে আসে।
এতে ক্ষেপে যায় শ্রমিকরা। এরপর ৬ মার্চ বাগান ব্যবস্থাপকের সাথে কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে শ্রমিকদের সাথে এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ঘটে।
এ ঘটনায় বাগানের সাবেক পঞ্চায়েত মানিক দাস ও ইউপি সদস্য নির্মল দেবসহ ২৪ জনকে আসামি করে বাগান কর্তৃপক্ষ মামলা দায়ের করেন এবং একইসাথে বাগান বন্ধ করে দিয়ে তালা দিয়ে চলে যান।
বাগান কর্তৃপক্ষের এ সিদ্ধান্তে চরম দুরবস্থায় পড়েছেন শ্রমিকরা। কর্ম হারিয়ে অনাহার আর অর্ধাহারে দিন কাটছে তাদের। অচলাবস্থা না কাটলে অন্য বাগানের শ্রমিকদের নিয়ে আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষনার পরিকল্পনা করছেন শ্রমিক নেতৃবৃন্দ।
কিন্তু করোনা লকডাউনে তাদের খাবারের দুরবস্থা এবং জীবন ধারণের ক্ষেত্রে বেশ অসহায় অবস্থায় পড়েছে তারা।
এর আগে গত ৮ মার্চ, শ্রমিকদের খেলার মাঠ দখল, বকেয়া বেতন ও মামলা দিয়ে হয়রানি বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন চা শ্রমিকরা। ওইদিন সকালে রেমা চা বাগান থেকে প্রায় ১৫ মাইল রাস্তা হেঁটে উপজেলা সদরে এসে এ বিক্ষোভ করেন তারা।
বিক্ষোভে অংশ নেন ছয় শতাধিক বিভিন্ন বাগানের চা শ্রমিক নারী-পুরুষ। বিক্ষোভ শেষে চা শ্রমিকরা উপজেলা পরিষদ এলাকায় অবস্থান নিলে চুনারুঘাট থানার ওসি শেখ নাজমুল হক ও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান লুৎফুর রহমান মহালদারসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ তাদের বিষয়টি বাগান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে সমাধান করার আশ্বাস দেন এবং ফিরে যেতে বলেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোন সুরাহা হয়নি।
এর মধ্যে বেশ কয়েকবারই ব্যারিস্টার সুমন চা শ্রমিকদের পাশে দাড়িয়েছেন এবং তাদেরকে সহযোগিত করার জন্য সবার প্রতি উদাত্ত আহবান জানিয়েছেন। সম্প্রতি তিনি চা শ্রমিকদের মাঝে ত্রাণ বিতরণের কাজও করেছেন।
আরআর/পাবলিক ভয়েস