মহামারী করোনাভাইরাসে আজ রোববার (১৭ মে) দেশে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সাথে আজ আক্রান্তের সংখ্যা ১২৭৩জন। এ নিয়ে দেশে মোট মৃত্যু হলো ৩২৮জন এবং মোট আক্রান্ত হয়েছেন ২২ হাজার ২৬৮জন।
আজকের মৃতদের মধ্যে ঢাকা বিভাগের ৯জন, চট্টগ্রাম বিভাগের ৫জন। জেলাভিত্তিক ঢাকা সিটির ৬জন, চট্টগ্রামের ৪জন, শরীয়তপুর, কুমিল্লা, নারায়ণগঞ্জ’র ১জন করে। এছাড়া আজকের মৃতদের ১৩জনই পুরুষ এবং ১জন নারী।
আজ রোববার (১৭ মে) দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত সংবাদ বুলেটিনের ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানিয়েছেন আইইডিসিআর এর মহাপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা।
ডা. নাসিমা সুলতানা জানিয়েছেন, গত ২৪ ঘন্টায় ঢাকা ও ঢাকার বাইরে মোট ৪২ ল্যাবের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। নতুন করে যুক্ত হয়েছে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
৪২টি ল্যাবে সর্বমোট ৮৫৭৪টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এরমধ্যে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৮১১৪। এ নিয়ে দেশে মোট পরীক্ষা হয়েছে ১ লাখ ৭৫ হাজার ৪০৮জন।
এর মধ্যে নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৬৭৮২ টি। এ নিয়ে দেশে মোট নমুনা পরীক্ষা করা হলো ১ লাখ ৬৭ হাজার ৩০৩টি। এদিন সুস্থ হয়েছে ২৫৬জন, মোট সুস্থ হয়েছেন ৪৩৭৩জন।
সারাদেশে বর্তমানে আইসোলেশন বেড আছে ৯১৩৪টি। এছাড়া আরো ২০০টি বেড প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন ডা. নাসিমা সুলতানা।
তিনি আরো জানান, দেশে বর্তমানে কোয়ারেন্টাইনে আছে ১ লাখ ৯১ হাজার ১৩১জন এবং ছাড় ৪৯ হাজার ৪১৭জন। এছাড়াদেশে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন প্রতিষ্ঠান আছে ৯১৭টি।
উল্লেখ্য : বাংলাদেশে গত ৮ ই মার্চ করোনাভাইরাস প্রথম ধরা পড়ে। এরপর হুহু করে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। গতকাল (১৫ মে) দেশে সর্বোচ্চ আক্রান্ত এবং সর্বোচ্চ মৃতের রেকর্ড হয়।
করোনাভাইরাসে বিশ্বব্যাপী মৃতের সংখ্যা এই মূহুর্তে তিন লাখ পার হয়ে গেছে। প্রতিমূহুর্ত বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। ১৬ মে দুপুর ২ টা পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী করোনায় মৃতের সংখ্যা ৩ লক্ষ ৮ হাজারেরও বেশি। এরমধ্যে শুধুমাত্র আমেরিকাতেই প্রায় ৮৮ হাজার মানুষ মারা গেছে
বাংলাদেশেও প্রতিদিন বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। বিশেষ করে পরীক্ষা যতো বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে হু হু করে। বাড়ছে ঝুঁকি।
উল্লেখ্য, আইইডিসিআর এর মহাপরিচালক এর অবর্তমানে নাসিমা সুলতানা বর্তমানে মহাপরিচালক এর দায়িত্বে রয়েছেন। তবে ডা. মীরজাদী সেব্রিনার ব্যাপারে কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি।
তবে তিনি সুস্থ, স্বাভাবিক আছেন বলে জানা গেছে। এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহে কোয়ারেন্টাইনে গেলেও তার মধ্যে করোনার কোনো লক্ষণ-উপসর্গ ছিল না। ২২ এপ্রিল থেকে আবারো নিয়মিত অফিস করা শুরু করেন।
এ বিষয়ে আইইডিসিআর’র প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ এইচ এম আলমগীর বলেন, ফ্লোরা ম্যাডাম ভালো আছেন, সুস্থ আছেন। তার পরিবারের সবাই সুস্থ আছেন। তিনি নিয়মিত অফিসও করছেন।
এদিকে করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে সংক্রমণরোধে সতর্কতার অংশ হিসেবে আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজের জামাত ঈদগাহ বা খোলা জায়গার পরিবর্তে স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্থানীয় মসজিদে আদায় করার জন্য অনুরোধ করেছে সরকার।
গত বৃহস্পতিবার, ১৪ মে ধর্মমন্ত্রণালয় থেকে এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে এই অনুরোধ জানানো হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনে একই মসজিদে একাধিক জামায়াত আয়োজনের কথাও বলা হয়েছে।
ধর্মমন্ত্রণালয়ের জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে সারা দেশে জনসমাগমে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। সম্প্রতি সরকার সার্বিক বিবেচনায় কিছু ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করেছে।
এ সময় দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেম-ওলামারা পবিত্র রমজান মাসের গুরুত্ব বিবেচনা করে মসজিদে নামাজ আদায়ের শর্ত শিথিল করার জন্য প্রধানমন্ত্রী বরাবর দাবি জানান। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৭ মে থেকে কিছু শর্তে মসজিদে সুস্থ মুসল্লিদের উপস্থিতিতে জামাতে নামাজের অনুমতি দেওয়া হয়।
ইতিমধ্যে (আজ বৃহস্পতিবার) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে উন্মুক্ত স্থানে বড় পরিসরে ঈদের জামায়াত পরিহারের নির্দেশনা দিয়ে বিদ্যমান বিধিবিধান অনুযায়ী ঈদের জামাত আয়োজনের বিষয়ে নির্দেশনা দেয়। ইসলামি শরিয়তে ঈদগাহ বা খোলা জায়গায় পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজের জামাত আদায়ের ব্যাপারে উৎসাহিত করা হয়েছে।
কিন্তু বর্তমানে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে মুসল্লিদের জীবনের ঝুঁকি বিবেচনা করে এ বছর ঈদগাহ বা খোলা জায়গার পরিবর্তে ঈদের নামাজের জামাত নিকটস্থ মসজিদে আদায় করার জন্য অনুরোধ করা হলো।
এ ক্ষেত্রে বেশ কিছু নির্দেশনা মানতে বলা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে। এর মধ্যে রয়েছে ঈদের নামাজের জামাতের সময় মসজিদে কার্পেট বিছানো যাবে না। নামাজের আগে সম্পূর্ণ মসজিদ জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। মুসল্লিরা প্রত্যেকে নিজ নিজ দায়িত্বে জায়নামাজ নিয়ে আসবেন।
এছাড়াও করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে মসজিদে অজুর স্থানে সাবান বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখা, মসজিদের প্রবেশমুখে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করা, প্রত্যেককে নিজ নিজ বাসা থেকে অজু করে আসা এবং অজুর সময় কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছে, ঈদের নামাজের জামাতে আসা মুসল্লিকে অবশ্যই মাস্ক পরে মসজিদে আসতে হবে। মসজিদে সংরক্ষিত জায়নামাজ ও টুপি ব্যবহার করা যাবে না। ঈদের নামাজ আদায়ের সময় কাতারে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে দাঁড়াতে হবে ও এক কাতার অন্তর কাতার করতে হবে।
শিশু, বয়োবৃদ্ধ, যেকোনো অসুস্থ ব্যক্তি এবং অসুস্থ ব্যক্তিদের সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তি ঈদের নামাজের জামাতে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। এ ছাড়া স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণকারী বাহিনীর নির্দেশনা অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে। মসজিদে জামায়াত শেষে কোলাকুলি এবং পরস্পর হাত মেলানো পরিহারের অনুরোধ করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।
এ ছাড়া করোনাভাইরাস মহামারি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ঈদের নামাজ শেষে মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে দোয়া করতে খতিব ও ইমামদের অনুরোধ করা হয়েছে।
খতিব, ইমাম ও মসজিদ পরিচালনা কমিটি উল্লিখিত বিষয়গুলো বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবে। এসব নির্দেশনা লঙ্ঘিত হলে স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণকারী বাহিনী সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
প্রসঙ্গত : মহামারী করোনাভাইরাসে পুরো পৃথিবাটাই বিপর্যস্ত মৃত্যুপুরী। প্রতিদিনই ভয়ঙ্কর এ ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বেড়ে চলছে লাগামহীনভাবে।
এক লাখ, দুই লাখ করে করে করোনায় মৃতের সংখ্যা ৩ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। আজ রোববার বাংলাদেশ সময় ২টা পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী মৃতের সংখ্যা ৩ লাখ ১৩ হাজার ৩৮৪ জন। এই সময় পর্যন্ত আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৪৭ লাখ ৩৩ হাজার ৩৪৯জন। এই সময়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৮ লাখ ১৭ হাজার ৯০৬জন।
করোনায় আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যার দিক দিয়ে শীর্ষ অবস্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্র। আজকে পর্যন্ত দেশটিতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯০ হাজার ১১৩জন। আর আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১৫ লাখ ৭ হাজার ৯২৪জন। সুস্থ হয়েছে ৩ লাখ ৩৯ হাজার ২৩২জন। গত ২৪ ঘন্টায় যুক্তরাষ্ট্রে রেকর্ড সর্বোচ্চ ২৫ হাজার আক্রান্ত মানুষ হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পরেই আক্রান্তের দিক থেকে সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে স্পেন। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ২ লক্ষ ৭৬ হাজার ৫০৫জন আক্রান্ত হয়েছে। এবং মৃত্যুর দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পরে অবস্থান করছে ব্রিটেন তথা যুক্তরাজ্য। যুক্তরাজ্যে পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা ৩৪ হাজার ৪৬৬ জন। দেশটিতে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ২ লক্ষ ৪০ হাজার ৪৬৬ জন।
এছাড়াও রাশিয়াতে নতুন করে করোনার বাড়ছে লাগামহীনভাবে। প্রাথমিক দিকে রাশিয়ায় করোনার প্রভাব তেমন সৃষ্টি না হলেও সম্প্রতি দেশটিতে হু হু করে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। এবং বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। এ পর্যন্ত পুতিন নেতৃত্বাধীন এই দেশটিতে আক্রান্ত হয়েছে ২ লাখ ৮১ হাজার ৭৫২জন। মারা গেছেন ২ হাজার ৬৩১জন। সুস্থ হয়েছেন ৬৭ হাজার ৩৭৩জন।
এছাড়াও ইতালি, ব্রাজিল, ফ্রান্স, জার্মানি, তুর্কি এবং ইরান এই দেশগুলোতে আক্রান্তের সংখ্যা লক্ষাধিক এবং সম্প্রতি আক্রান্তের দিক থেকে হু করে উপরের দিকে উঠে আসছে হিন্দুত্ববাদী দেশ ভারত। দেশটিতে এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্ত হয়েছে ৯০ হাজার ৯২৭জন। মারা গেছে ২ হাজার ৮৭২জন। সুস্থ হয়েছে ৩৪ হাজার ২২৪জন।
সংশ্লিষ্ট খবর:
খোলা মাঠের পরিবর্তে মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় ও দোয়ার অনুরোধ
২০০ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম শোলাকিয়ায় হবে না ঈদের জামাত
মহামারী করোনা: বিশ্বব্যাপী মৃত্যু ছাড়ালো ৩ লাখ, আক্রান্ত ৪৫ লাখ!