করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে নাইজেরিয়ায় পবিত্র রমজানে রোজা পালন হচ্ছে না অনেকের। তাদের ঘরেই নেই পর্যাপ্ত খাদ্য। অনেক নাইজেরিয়ানদের কাছে সহরী ও ইফতার করা অনেকটা দুঃসাধ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দেশটির রাজধানী আবুজায় এবার অনেকেরই ভিন্ন একটি রমজান কাটছে। মহামারি ঠেকাতে দেয়া লকডাউনের কারণে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন অনেকে। পরিবারেরে সদস্যদের মুখে ঠিকমত দুই বেলার আহার তুলে দেয়া সম্ভব হয়ে উঠছে না।
খাবাররের দোকানগুলো সপ্তাহে দুইদিন মাত্র কয়েক ঘণ্টার জন্য খোলা হয়। যারা এই সময়ের মধ্যে খাবার কিনতে ব্যর্থ হন তাদের বাকি সপ্তাহ অনাহারে কাটাতে হয়। আবুজায় বসবাসরত আব্দুস সালাম সাইদাত আদেনিকে নামে এক নারী ব্যবসায়ী বলেন, সংক্রমণ থেকে বাঁচতে আমরা বাড়িতে থাকছি। কিন্তু সেখানে থেকে খাবো কী?
তিনি বলেন, যাদের টাকা আছে তারা দোকানে গিয়ে খাবার কিনে আনছেন। যাদের নেই তাদের কথা একবার ভাবুন। অনেকের ঘরে এক কাপ পরিমাণ চাল নেই। কিনে আনবে সে পয়সা পর্যন্ত নেই। এই অবস্থায় তারা পবিত্র রমজান মাসের হুকুম কীভাবে পালন করবে। নিয়ম করে ভোরে সাহরী ও সন্ধ্যায় ইফতারি করতে পারছে না তারা। আমার অবস্থাও ঠিক সেরকমই। এই অবস্থায় আমি রোজা রাখতে পারছি না।
মহামরী ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব বাড়তে থাকায় আবুজায় গত ৩০ এপ্রিল লকডাউন জারি করা হয়। এ কারণে সেখানকার অসংখ্য মানুষ জীবিকা হারিয়ে পথে বসেছেন। তাদের পরিবারগুলো অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। তবে চলতি মে মাসের শুরু থেকে নাইজেরিয়ান সরকার লকডাউন শিথিল করার পদক্ষেপ নিয়েছে। সংকটে পড়া পরিবারদের আর্থিক সহায়তা ও ত্রাণ সরবরাহ করা হবে বলে ঘোষণা দেয়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এ সংক্রান্ত একটি তালিকা তৈরি করে সাহায্য সামগ্রী বিতরণ শুরু হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আফ্রিকা মহাদেশের সবচেয়ে বৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্রটি লকডাউনে কারণে ভঙ্গুর হয়ে গেছে। বিলয়ামিনু নামের এক মেকানিক বলেন, এই লকডাউন আমাদের খুব ভুগিয়েছে। আমার কোনো চাকরি নেই এখন। বাড়িতে বৌ আছে, একটা বাচ্চা আছে। পবিত্র এই রমজান মাসে তাদের মুখে খাবার তুলে দিবো কি করে? এখন আমার ঘরে কোনো খাবার নেই, নেই কোনো টাকা।
তিনি বলেন, আমাদের কাজ করতে বাধা দেয়া হয়েছে। তা বন্ধ করে দিয়ে ঘরে থেকেছি। জমানো টাকা খরচ করেছি। এখন টাকা শেষ। ক্ষুধায় বাচ্চাটা সারাদিন কান্না করে। ঘরে তার জন্য কোনো খাবার নেই। সরকার থেকে আমাকে কী সাহায্য করা হয়েছে? তারা বলছে বিপদে পড়া লোকদের সাহায্য করা হচ্ছে। আমিও তো বিপদে আছি আমার কাছে সাহায্য এলো না কেন?
আল-আরাবিয়া বলছে, রমজান মাস এলে নাইজেরিয়ার শহরগুলো লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। এই একটি মাসকে ঘিরে অনেকেরই ব্যবসা আছে। যা উপার্জন হয় তা দিয়ে সারাবছর চলেন। কিন্তু করোনার মহামারিতে এবারে চিত্র সম্পূর্ণই আলাদা।
মহাসারী এই ভাইরাসটিতে নাইজেরিয়ায় এখন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ৪ হাজার ১৫১ জন এবং মারা গেছে ১২৮ জন।
এমএম/পাবলিকভয়েস