বিশেষ প্রতিবেদন, পাবলিক ভয়েস: ১০ এপ্রিল থেকে ৮ মে। মোট পাঁচটি জুমাবার গেছে। অর্থাৎ করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে ধারাবাহিক লোক সমাগম পরিহারের অংশ হিসেবে মসজিদে জামাত সীমিত করার পর থেকে আজ ৮ মে শুক্রবারসহ মোট ৫টি জুমা হয়েছে।
এরমধ্যে ৪ জুমা শেষে আজকেই প্রথম উন্মুক্তভাবে মুসুল্লিরা মসজিদে গিয়ে জামাতের সাথে জুমার নামাজ পড়তে পেরেছে। গত ৬ এপ্রিল দেশের সব মসজিদে মুসুল্লিদের প্রবেশ সংখ্যা সীমিত করে জামাত করার নির্দেশনা দেয় ধর্মমন্ত্রণালয়। এরপর গত ১০, ১৭, ২৪ এপ্রিল ও ১ মেসহ মোট পাচটি জুমায় প্রবেশ সীমিত ছিলো।
এরপর গত পরশু বুধবার (৬ মে) ধর্মমন্ত্রণালয় ঘোষণা করে ৬ দফা শর্তে মসজিদে মুসুল্লিরা প্রবেশ করতে পারবেন এবং জুমাহসহ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে জামাতে নামাজ পড়তে পারবেন। নির্দেশনা অনুযায়ী গতকাল বৃহস্পতিবার জোহর নামাজের জামাতে মুসুল্লিদের জন্য মসজিদ উন্মুক্ত হয়। এরপর আজকেই (৮ মে) প্রথম জুমার নামাজ হলো।
রাজধানীর শনিরআখড়া খাদেমুল ইসলাম জামে মসজিদে এই প্রতিবেদকসহ আমরা দু’জন জুমার নামাজ আদায় করি। নামাজ শেষে কথা বলি কয়েকজন মুসুল্লি এবং খতিব হাফেজ মাওলানা আজিজুর রহমান এর সাথে।
[caption id="attachment_76677" align="alignnone" width="571"] জামাতের সময় কাতারের মাঝে ফাঁকা রেখে মুসুল্লিদের নামাজে দাঁড়ানোর চেষ্টা[/caption]
এসময় মুসুল্লিরা আমাদেরকে জানান তাদের আবেগ-অনুভূতির কথা। কেউ কেউ ক্ষোভ প্রকাশও করেন। তবে সতর্কতা ও সচেতনতার কথা বলতে কেউ ভুল করেননি।
এমনই একজন মুসুুল্লি হারিস আল হাসান। তার গ্রামের বাড়ি খুলনায়। তিনি থাকেন পাশের শেখদি এলাকায়। তিনি জানিয়েছেন জীবনে প্রথমার জুমার নামাজ না পড়তে পারার কষ্টের কথা।
হারিস আল হাসান বলেন, ‘জীবনে এই প্রথম তিনদিন জুমার নামাজ পড়তে পারিনি এর আগে কখনো এরকম হয়নি’।
সরকারি নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন সময়ে মোট চার জুমা হয়েছে উল্লেখ্য করলে তিনি বলেন, ‘গত ৩ মে শুক্রবার পাশে একটি মাদরাসায় জুমার নামাজ পড়ার সুযোগ হয়েছিলো। এরপর আজকে মসজিদে এসে পড়লাম’।
হারিস আল হাসান বলেন, ‘গত শুক্রবার জুমার নামাজ পড়ার পর কতোটা তৃপ্তি পেয়েছি তা আমি আপনাদেরকে বলে বুঝাতে পারবো না। এটা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না। আমি শিওর জীবনে এর আগে কখনো টানা তিন শুক্রবার জুমার নামাজ মিস হয়নি। এবারই প্রথম হয়েছে সরকারি নিষেধাজ্ঞার কারণে’। মুসুল্লিদের জন্য এরচেয়ে আর কষ্টের কিছু নেই বলেও তিনি উল্লেখ্য করেন।
হারিস আল হাসান আরো বলেন, ‘মসজিদে যেসব মুসুল্লিরা আসেন তারা কিন্তু স্বাস্থ্যবিধির ঘোষণা ছাড়াই অযু করে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে মসজিদে প্রবেশ করেন। এমনকি গোসল করে পবিত্রতার সাথে মসজিদে আসেন। তো সেক্ষেত্রে মসজিদে নিষেধাজ্ঞা থাকা কখনোই উচিত না’।
এটিও পড়ুন: উন্মুক্ত মসজিদ: ৩২ দিনের আক্ষেপ জানালেন মুসুল্লিরা
রাজধানীর কাপ্তান বাজারে লাইটিং দোকানে কাজ করেন মো. হাবিব। তিনি জানালেন, ‘লকডাউনকালীন দুই জুমা পড়া হয়নি তার। তবে উন্মুক্তভাবে মসজিদে প্রবেশ করে আজকেই প্রথম জুমা পড়লাম। আসলে মসজিদে এসে নামাজ পড়তে পারার অনুভূতিই আলাদা’ বলেন হাবিব।
মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা আজিজুর রহমান এর কাছে জানতে চাই, ‘জামাতে নির্দিষ্ট দূরত্ব রেখে নামাজ পড়া সম্ভব হচ্ছে কিনা কিংবা সম্ভব না হলে এতে আশংকার কিছু আছে কিনা?’।
জবাবে তিনি বলেন, ‘যেটা বলা হয় বাস্তবে সেটা পরিপূর্ণ মেনে চলা খুবই কঠিন এবং ক্ষেত্র বিশেষে অসম্ভব হয়ে ওঠে। তবে আলহামদুলিল্লাহ মুসুল্লিরা যথেষ্ঠ সচেতন। মসজিদে জামাতের ক্ষেত্রে অন্যান্য সব ক্ষেত্র থেকে বেশি সচেতনতার সাথে দূরত্ব বজায় রাখা হচ্ছে। যতটুকু হচ্ছে তাতে আলহামদুলিল্লাহ শঙ্কিত নই’।
[caption id="attachment_76679" align="alignnone" width="570"] প্রায় সব মুসুল্লিই স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাস্ক পড়ে মসজিদে প্রবেশ করেন[/caption]
মাওলানা আজিজুর রহমান বলেন, মসজিদে যারাই আসেন তারা মোটামুটি স্বাস্থ্য সচেতন। আমাদের মসজিদে থেকে নিয়মিত সচেতনতার বার্তা দেয়া হয়। মুসুল্লিদেরকে সতর্ক করা হয়। সেই জায়গা থেকে মুসুল্লিরা যথেষ্ঠ সচেতনার সাথেই নামাজ আদায় করেন। তাছাড়া আমরা বারবার সতর্ক করে দেই যারা অসুস্থতা অনুভব করেন তারা যেন নিজেকে হেফাজত করেন এবং অন্যকেও আশঙ্কমুক্ত রাখেন।
এছাড়াও আমরা বেশ কয়েজন মুসুল্লির সাথে কথা বলি। সবার কথা একটাই, এখন যেভাবে চলছে মসজিদগুলো এভাবেই চালু থাকুক সব সময়। স্বাস্থ্য সচেতনতার সাথেই সব মসজিদ সব সময় উন্মুক্ত থাকুক এমনটাই চাওয়া ধর্মপ্রাণ মুসুল্লিদের।
ঘটনাপ্রবাহ : বাংলাদেশে মসজিদে ‘লকডাউন’ ও খুলে দেওয়া
পায়খানার সাথে রক্ত গেলে রোজা ভেঙ্গে যায়?
/এসএস