দীর্ঘ এক মাসের বেশি সময় (৩২ দিন) পর দেশের মসজিদগুলো সব মুসল্লীদের নামাজের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে শর্তসাপেক্ষে গতকালই মসজিদে নামাজের অনুমতি দিয়েছে সরকার।
লকডাউনের পর প্রথম জুমা আজ। মসজিদে মসজিদে মানুষে ভরে উঠবে। মুমিন হৃদয়ে প্রশান্তির দোলা দেবে। দীর্ঘ দিন মসজিদে না যেতে পারার কষ্ট দুর হবে মুসলমানদের। করোনাভাইরাসের এই পরিস্থিতিতে ভয়কে জয় করেই মসজিদে যাচ্ছে মুসুল্লীরা।
তবে এ পরিস্থিতিতেও সবাইকে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধী মেনে মসজিদে নামাজ আদায় করার অনুরোধ জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষ করে ধর্ম মন্ত্রনালয় থেকে ঘোষিত যে সব শর্ত দেওয়া হয়েছে তা যথাযথ পালন করার পরামর্শ দিয়েছেন ডাক্তার ও সচেতন মহলের বিজ্ঞরা।
এমনকি আলেমরাও বলেছেন যথাযোগ্য নিয়ম মেনেই নামাজ পড়ার জন্য। বাংলাদেশের বিশিষ্ট আলেম ও ফকিহ শায়খ যাকারিয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার এর মহাপরিচালক মুফতী মিযানুর রহমান সাঈদ এ বিষয়ে এক ভিডিও বার্তায় বলেন সবাইকে অবশ্যই সর্তকতা মেনে এবং নিয়মের মধ্য থেকে মসজিদে নামাজ আদায় করতে হবে।
মসজিদে নামাজের জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বেঁধে দেওয়া ১২ দফা শর্তের মধ্যে রয়েছে-
১. মসজিদে কার্পেট বিছানো যাবে না। ২. পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আগে সম্পূর্ণ মসজিদ জীবাণুনাশক দ্বারা পরিষ্কার করতে হবে। ৩. প্রত্যেকে নিজ নিজ দায়িত্বে জায়নামাজ নিয়ে আসবেন। ৪. মসজিদের প্রবেশদ্বারে হ্যান্ড স্যানিটাইজার/হাত ধোয়ার ব্যবস্থাসহ সাবান-পানি রাখতে হবে এবং আগত মুসল্লিকে অবশ্যই মাস্ক পরে মসজিদে আসতে হবে। ৫. প্রত্যেককে নিজ নিজ বাসা থেকে ওজু করে, সুন্নাত নামাজ আদায় করে মসজিদে আসতে হবে এবং ওজু করার সময় কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে।
অন্য শর্তগুলো হচ্ছে- ৬.কাতারে নামাজে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব অর্থাৎ তিন ফুট পরপর দাঁড়ানো। এক কাতার অন্তর অন্তর কাতার করা। ৭. শিশু, বয়বৃদ্ধ, যে কোনো অসুস্থ ব্যক্তি এবং অসুস্থদের সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তি জামাতে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। ৮. সংক্রমণ রোধ নিশ্চিতকল্পে মসজিদের ওজুখানায় সাবান/হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখতে হবে। ৯. মসজিদে সংরক্ষিত জায়নামাজ ও টুপি ব্যবহার করা যাবে না। ১০. সর্বসাধারণের সুরক্ষা নিশ্চিত কল্পে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, স্থানীয় প্রশাসন এবং আইনশৃংখলা নিয়ন্ত্রণকারী বাহিনীর নির্দেশনা অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে; ১১. মসজিদে ইফতার ও সেহরির আয়োজন করা যাবে না।
এসব শর্ত পালন সাপেক্ষে প্রত্যেক মসজিদে সর্বোচ্চ পাঁচজন নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে ইতেকাফ-এর জন্য অবস্থান করতে পারবেন; করোনাভাইরাস মহামারি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নামাজ শেষে মহান আল্লাহর দরবারে দোয়া করার জন্য খতিব ও ইমামদেরকে অনুরোধ করা হয়েছে এবং খতিব, ইমাম এবং মসজিদ পরিচালনা কমিটি বিষয়গুলো বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবে বলে শর্তে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়- এসব নির্দেশনা লংঘিত হলে স্থানীয় প্রশাসন ও আইন শৃংখলা নিয়ন্ত্রণকারী বাহিনী সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। প্রাণঘাতি করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃংখলা নিয়ন্ত্রণকারী বাহিনী, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সংশ্লিষ্ট মসজিদের পরিচালনা কমিটিকে এসব নির্দেশনা বাস্তবায়ন করার জন্য অনুরোধ জানানো হয় ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে।
প্রসঙ্গত : গত বুধবার (৬ মে) ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাসহ শর্তসাপেক্ষে গতকাল থেকে দেশের সব মসজিদে সুস্থ মুসল্লিদের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত এবং তারাবির নামাজ জামাতে আদায় করার অনুমতি দেওয়া হয়। এর আগে গত ৬ এপ্রিল থেকে বাংলাদেশে মসজিদে জামাত ও তারাবী নামাজের ক্ষেত্রে জামাত সীমিতকরণ করে ফেলা হয়েছিলো।
আরও পড়ুন :
উন্মুক্ত মসজিদ: ৩২ দিনের আক্ষেপ জানালেন মুসুল্লিরা
ঘটনাপ্রবাহ : বাংলাদেশে মসজিদে ‘লকডাউন’ ও খুলে দেওয়া
#এইচআরআর/পাবলিক ভয়েস