আবদুল হাই (৬৫) অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন। তার মরদেহ নিয়ে বাড়িতে ঢুকলো অ্যাম্বুলেন্স। তখন রাত ১১টা। অ্যাম্বুলেন্সের আওয়াজ শুনে হাইয়ের আপন ভাই, চাচাতো-জেঠাতো ভাইয়েরা বেরিয়ে আসেন। প্রতিবেশীরাও হাজির।
না, তারা কেউ লাশ নামাতে আসেনি। এসেছে যেন কেউ লাশটি নামাতে না পারে! সবাই একবাক্যে বলে দিলো, আবদুল হাই করোনায় মারা গেছে। তার লাশ গ্রামে দাফন করা যাবে না।
হাইয়ের স্ত্রী ফিরোজা এবং ছেলে শাহজাহান বারবার চেষ্টা করেও বোঝাতে পারেন না। লাশ নামাতে উদ্যত হলে উপস্থিত লোকজন তাদের ওপর চড়াও। ফিরোজা কান্নাকাটি শুরু করলেন। আকুতি জানালেন, গ্রামের কবরস্থানে জায়গা না হলে নিজের ভিটেমাটিতে স্বামীকে কবর দেবেন।
ফিরোজার কান্নায় কারও মন গললো না। উল্টো উত্তেজিত লোকজন মা-ছেলেকে এসে মারপিট শুরু করলো। এই ‘বীরপুরুষের’ দল গ্রাম রক্ষা করতে চায়। সাফ জানিয়ে দেয়, মরদেহ এখানে দাফন হবে না!
মা-ছেলে অ্যাম্বুলেন্স ঘুরিয়ে চলে যান আরেক গ্রামে আত্মীয়ের বাড়ি। সেখানেও প্রত্যাখাত তারা। এভাবে রাত ২টা বেজে গেল। একটি ভ্যানগাড়ি জোগাড় করেন শাহজাহান। অ্যাম্বুলেন্স থেকে বাবার লাশ নামিয়ে ভ্যানে তোলেন। ছেলে ভ্যান টানছেন, বাবার মরদেহের পাশে মা বসে আছেন।
ঘটনাটি ময়মনসিংহের গৌরীপুরে। আবদুল হাইয়ের বাড়ি পৌরসভার সাতুতি গ্রামে। নানা গ্রাম ঘুরে হাইয়ের মরদেহ নিয়ে ভ্যানটি থামে পৌরসদরের একটি ধান মহালের সামনে।
গভীর রাতে থানায় এ খবর গেলে পুলিশ ছুটে আসেন। তারা আবদুল হাইয়ের মরদেহ নিয়ে সাতুতি গ্রামে যান। ওই গ্রামেই মরদেহ দাফনের ব্যবস্থা করেন।
প্রশাসনের সহেযোগিতা অনুরোধে লাশ দাফনের যাবতীয় দায়িত্ব সম্পন্ন করে ইকরামুল মুসলিমীন ফাউন্ডেশন। ইকরামুল মুসলিমীন ফাউন্ডেশন মোমেনশাহী জেলা টিম এর নেতৃত্বে ওই গ্রামেই জানাযা ও লাশ দাফন করা হয়।
/এসএস/পাবলিকভয়েস/