(১)
আল্লামা শাহ আহমাদ শফি দেশের আলেম সমাজের মুরব্বি। সেরেতাজ। তিনি একজন বর্ষিয়ান আলেম ও প্রশাসক। তিনি তাঁর মাদ্রাসার মাহফিলে অভ্যাগতদেরকে রাজী করিয়েছেন, তাদের মেয়েদের স্কুল কলেজে না পাঠাতে। বিভিন্ন নিউজ মাধ্যমে এ বাক্যটাই এসেছে। মূলতঃ তাঁর এ খন্ডিত বাক্য নিয়ে মিডিয়াপাড়া গরম। তিনি অবশেষে তাঁর বক্তব্যের ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। কিন্তু সমালোচনা থামছে না।
রাস্তায় ব্যানার নিয়ে কতক মহিলা আল্লামা শফীর বিরুদ্ধে মানববন্ধন করে প্রতিবাদ জানাচ্ছে। প্রতিবাদ করাটা গণতান্ত্রিক অধিকার। এ অধিকার তাঁরা পাবেন কিন্তু আমরা নারীদেহের গণতান্ত্রায়ন চাই না।
আমার প্রশ্ন, তিনি একজন বেসরকারী পারসন। তাঁর কথায় কি ই বা আসে যায়! কেন এত হইচই? তিনি এমপি নন, মন্ত্রী নন স্পীকারও নন। স্পীকার ছিলেন তাঁর মাদ্রাসার মাহফিলে।
এবারে আসুন, তাঁর বাকী কথাগুলো কি ছিলো বা সংশোধনীতে তিনি কি বলেছেন! তিনি মূলতঃ স্কুল কলেজের পরিবেশের কথা বলেছেন, যেখানে মেয়েরা নিরাপদ নন। তিনি অভ্যাগতদের সামনে বলেছেন দেখেন না! ওখানে কিসব চলছে! ওখানে গেলে আপনাদের মেয়ে আর ফিরে পাবেন না। অর্থাৎ চরিত্র ঠিক থাকবে না।
তিনি এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা উহ্য রেখেছেন। সেটা হলো, তিনি মাদ্রাসায় পড়ুয়াদের ব্যাপারে কোন অভিযোগ করেন নি। অর্থাৎ আপনাদের মেয়েদেরকে মাদ্রাসায় পাঠায়েন। ওখানে দিতে আয়েব নাই। মাদ্রাসায় পাঠালে আপনার মেয়ের চারিত্রিক নিরাপত্তাটা নিশ্চিত থাকবে।
গত দু তিন দিনে যা ঘটেছে সেটা ইস্যু হিসেবে নির্বাচনের চেয়ে মোটেই কম না।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন যে, আল্লামা শফীর বক্তব্য সঠিক না। ইসলাম মেয়েদেরকে পড়ানোর ব্যাপারে অন্তরায় নয়।
হাসানুল হক ইনু সেই আগের মতই সমালোচনা করেছেন। তিনি তেঁতুল হুজুর উল্লেখ করতে ভুল করেন নাই।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডঃ কামাল হোসেনও আল্লামা শাহ আহমদ শফীর উপর গোস্সা হয়ে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।
আমরা যারা একটু রক্ষণশীল টাইপের মানুষ, তারাও এখন নড়েচড়ে উঠছি। কারণ, হাটহাজারী হযরতে কি বলেছেন আর তারা তাকে কেন একতরফা অভিযুক্ত করছেন?
আল্লামা শাহ আহমদ শফী হোসাইন আহমাদ মাদানী রঃ এর খলীফা। তিনি নাকি তাঁকে বিশেষ দোয়া করেছিলেন, এই বলে, একদিন তোমার কথায় বাংলাদেশে হরকত হবে- সবাই নড়াচড়া করবে। অর্থাৎ তাঁর কথা সবচেয়ে প্রভাবক হিসেবে কাজ করবে। আজ আল্লামা শফী যে কথাই বলুক না কেন, রাষ্ট্র প্রধান থেকে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। শেষ জীবনে তিনি এ সম্মানটা পাচ্ছেন।
ইলেকশনের রাত থেকে মিডিয়ায় ধর্ষণের কাহিনী প্রকাশ পাচ্ছে। নতুন বছরের প্রতিটি দিনই শিশু নির্যাতন ও খুন করার সংবাদ ভাসছে। এটা কি কোন সুস্থ সমাজের চিত্র হতে পারে?
নারী-পুরুষের অবাধ চলাফেরা তথা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে পাশাপাশি নারী পুরুষের অবস্থান ইসলাম অনুমোদন করেনা। এটা পর্দার মত ফরজিয়াত রক্ষিত হয় না। নারী-পুরুষের পর্দা করা ফরজ। এ ফরজিয়াতকে ভিন্ন উপায়ে মান্য করা যায়। কর্মক্ষেত্রে নারী ও পুরুষরা আলাদা থেকে কাজ করবে। আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সহশিক্ষার পরিবর্তে মেয়েদের জন্য আলাদা প্রতিষ্ঠান নিশ্চিত করতে হবে। এখনো তো গার্লস স্কুল, উইমেন কলেজ চালু আছে।
এটা জাতীয়ভাবে ঘোষণা আসতে পারে- মেয়েরা আলাদা, ছেলেরা আলাদা প্রতিষ্ঠান বা পরিবেশে লেখাপড়া করবে। এবং সে অনুযায়ী অবকাঠামো নির্মাণ করবে। একটা জাতীয় ফেতনার তখনি অবসান ঘটবে।
বর্তমানে দেশের কওমী মাদ্রাসা গুলোতে তিন লক্ষ মেয়ে লেখাপড়া করছে। কওমী বোর্ড বেফাক, ও উচ্চ শিক্ষা বোর্ড হায়াতুল উলইয়ার চেয়ারম্যান হলেন আল্লামা শাহ আহমদ শফী। তিনি মেয়েদের লেখাপড়া বিলুপ্ত করতে বলছেন, এটা ডাহা মিথ্যা কথা।
তিনি মেয়েদের লেখাপড়ার উপযোগী পরিবেশের কথা বলেছেন। তিনি লক্ষ লক্ষ ছাত্রীর গার্ডিয়ান। তিনি সম্যক জানেন, কোন পরিবেশে ছাত্রীদের ইজ্জত আব্রু রক্ষা হয় আর কোন পরিবেশে লংঘিত হয়। মেয়েদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করেই তিনি অমন বক্তব্য দিয়েছেন।
(২)
নারী নির্যাতনের ঘটনাবলী পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে, পর্দানশীনদের নিরাপদে থাকার হার বেশী, সাধারণদের থেকে। অর্থাৎ বোরকা একটি নিরাপত্তা কবজ। একটি বোরকা একজন নারীর ইজ্জত রক্ষায় ভূমিকা পালন করে। নানা গবেষণায় এটা প্রমাণিত। পুরুষরা যদি নারীর চেহারা বা শরীর দেখতেই না পায়, তাহলে তার প্রতি আকর্ষিত হবার কথা না। সেজন্য বোরকা পরিধানকারীরা কম হেনস্থা হন।
আজকাল মেয়েদের চারিত্রিক নিষ্কলুষতার ব্যাপারটা চরমভাবে উপেক্ষিত। এর মূল কারণ হচ্ছে, শরীয়ত সম্মত পন্থায় চলাফেরা না করা। পৃথিবীতে এমন কোন ধর্ম নেই, যাতে মহিলাদের পরিধেয় হিসেবে শালীন পোশাকের কথা বলা হয় নাই।
ইসলামের দৃষ্টিতে শালীন পোষাক হিসেবে সমাদৃত হয়েছে "আবায়া" তথা প্রচলিত "বোরকা"। এটা মহিলারা পরে বাইরে বের হওয়ার ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠ পোশাক হিসেবে বিবেচিত। পবিত্র কুরআনে নারীদেহ সবটা ঢেকে রাখতে যে পরিচ্ছেদের কথা বলা হয়েছে তার নাম "জিলবাব"। 'বোরকা' এর আধুনিক সংস্করণ।
মেয়েদের চলাফেরা শালীন পোশাকে হবে এটাই মূলকথা। তবে বোরকা ও হিজাব ব্যবহারেও আজকাল বিশেষ ফ্যাশন চলছে। মুখ না ঢেকে হিজাব করার কোন মানে নাই। আবার অনেককে দেখা যায়, আধুনিক পোশাক ঠিক রেখে মাথায় একটা হিজাব লাগায়।
শরয়ী দৃষ্টিতে- এসব শালীন পোশাক নয়। এ ছাড়া আঁটসাঁট বোরকা পরেও মেয়েরা বাইরে বের হয় তাও কাম্য নয়। অনুরূপভাবে, শরীরের সাথে মিশে থাকা পোশাকের সাথে হিজাব পরা মেয়েদেরকে ফ্যাশনাবল বলতে পারেন। তবে তা "জিলবাব" থেকে অনেক দূরে। বড়জোড়- "জিলবুবস" বলতে পারেন।
লেখক, অ্যাক্টিভিস্ট, বিশ্লেষক