ড. রাগিব সারজানী :
ইসলামি ইতিহাসের গতিপথে রমজান মাসে ঘটে যাওয়া ঘটনাপ্রবাহের প্রতি চিন্তাশীল সুগভীর দৃষ্টি দিলে; কিছু অদ্ভুত অকল্পনীয় তথ্যের সন্ধান পাওয়া যায়। যেগুলো আসলে কাকতালীয় কিংবা আকস্মিক ঘটে যাওয়া কোনো বিষয় নয়। বরং, এসব কিছু মহান আল্লাহ তাআলা কর্তৃক পূর্ব পরিকল্পিত এবং আগাম নির্ধারিত ফায়সালা।
ইতিহাসের অমলিন ডাইয়েরিতে দেখা যায়, পবিত্র রমজান মাসেই মুসলমানরা উন্নতির নিম্ন পর্যায় থেকে চূড়ান্ত পর্যায়ে, চরম দুর্বলতা থেকে পরম সবলতা এবং লাঞ্ছনা-বঞ্চনার স্তর পেরিয়ে চির সৌভাগ্য এবং মর্যাদার শীর্ষ আসনে সমাসীন হয়েছে। রমজান মাস এবং জিহাদের পথ ধরে মুসলমানদের বিজয়ধারা- উভয়ের মাঝে এক অভাবনীয়, অদ্ভুত যোগসাজশ খুঁজে পাওয়া যায়।
পবিত্র কোরআনে সূরা বাকারার যে আয়াত থেকে রোজার ধারাবাহিক আলোচনা শুরু হয়, তা হলো:
يٰٓأَيُّهَا الَّذِينَ ءَامَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ
হে মুমিনগণ, তোমাদের উপর রোজা ফরয করা হয়েছে, যেভাবে ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর। (সূরা বাকারা-১৮৩)
রোজার আলোচনা শেষে এর এক আয়াত পর থেকেই কিন্তু জিহাদ, কিতাল এবং বিজয় অর্জনে উদ্বুদ্ধ করে, অনুপ্রাণিত করে বেশ কয়েকটি আয়াত আমরা দেখতে পাই। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, "আর তোমরা আল্লাহর রাস্তায় তাদের বিরুদ্ধে লড়াই কর, যারা তোমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং সীমালঙ্ঘন করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদেরকে পছন্দ করেন না। আর তাদেরকে হত্যা কর যেখানে তাদেরকে পাও এবং তাদেরকে বের করে দাও যেখান থেকে তারা তোমাদেরকে বের করেছিল। আর ফিতনা হত্যার চেয়ে কঠিনতর এবং তোমরা মাসজিদুল হারামের নিকট তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করো না, যতক্ষণ না তারা তোমাদের বিরুদ্ধে সেখানে লড়াই করে। অতঃপর তারা যদি তোমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে, তবে তাদেরকে হত্যা কর। এটাই কাফিরদের প্রতিদান। তবে যদি তারা বিরত হয়, তবে নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। আর তাদের বিরুদ্ধে লড়াই কর যে পর্যন্ত না ফিতনা খতম হয়ে যায় এবং দীন আল্লাহর জন্য হয়ে যায়। সুতরাং তারা যদি বিরত হয়, তাহলে যালিমরা ছাড়া (কারো উপর) কোন কঠোরতা নেই।" (সূরা বাকারা-১৯০-৯৩)
আয়াতগুলিতে খেয়াল খেয়াল করলে আমরা দেখতে পাই, এখানে খুব জোরালোভাবে জিহাদ, কিতাল এবং বিজয় অর্জনে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। এ আয়াত সমূহ এবং তার পূর্ববর্তী রোজার আয়াতের মাঝে সম্পর্ক খুবই নিবিড় ও সুস্পষ্ট। জিহাদের প্রস্তুতি মানেই হলো নিজেকে বিজয় অর্জনের জন্য শারীরিক এবং মানসিকভাবে প্রস্তুত করা; বরঞ্চ সমগ্র উম্মাহকে প্রস্তুত করা।
রমজান এবং জিহাদের মাঝে অত্যন্ত সুগভীর-সুদৃঢ় সম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে। ইসলামের চির ভাস্বর ইতিহাসে এ সম্পর্কের অনেক জোরালো সমর্থন এবং নজির পাওয়া যায়।
যেমন : কোরাইশী মুশরিকদের বিরুদ্ধে মুসলমানদের সর্বপ্রথম যুদ্ধযাত্রা ছিল রমজান মাসে। না, এটি প্রসিদ্ধ বদর যুদ্ধ নয়। বরং, তার-ও আগের কথা। রমজানের রোজা তখনো ফরজ হয়নি। হিজরী প্রথম সনে যুদ্ধের অনুমতি লাভের পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চাচা হামযা বিন আব্দুল মুত্তালিবের নেতৃত্বে একটি মুসলিম সৈন্যদল মুশরিকদের বিরুদ্ধে প্রথমবারের মতো যুদ্ধ যাত্রা করেন। 'সাইফুল বাহর' নামক জায়গায় উভয়পক্ষ জমায়েত হয়। কিন্তু ''মাজদি বিন 'আমর জুহানি''-এর প্রচেষ্টায় এই যাত্রায় বিনা যুদ্ধে উভয় দল ঘরে ফিরে আসে। সুতরাং, এই থেকে প্রতীয়মান হয় অধিকার আদায় এবং জানের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে মুসলমানরা সর্বপ্রথম তরবারী হাতে তুলে নিয়েছিল রমজান মাসে। সময় গড়িয়ে আসলো দ্বিতীয় হিজরীর রমজান মাস। এ মাসে শুধুমাত্র মুসলমানদের ইতিহাস নয়; বরং পুরো বিশ্বের ইতিহাসে ঘটে যায় এক অভূতপূর্ব ঐতিহাসিক আশ্চর্যজনক ঘটনা।
দ্বিতীয় হিজরির ১৭ রমজান সংঘটিত হয় বদরের যুদ্ধ। নিরঙ্কুশ বিজয় নিয়ে ঘরে ফিরে ছিল মুসলমানরা। আরব উপদ্বীপে যে কুরাইশরা ছিল শিরিকের ঝান্ডাবাহী। বদরের যুদ্ধ ছিল সেসব কোরাইশী মুশরিকদের বিরুদ্ধে মুসলমানদের সর্বপ্রথম সশস্ত্র লড়াই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জিন্দেগীর সকল বিষয়-ই প্রাক পরিকল্পিত এবং পূর্ব নির্ধারিত ছিল। তাতে কাকতালীয়তা এবং আকস্মিকতার কোন স্থান ছিল না। তাই বদরের যুদ্ধ রমজান ভিন্ন অন্য কোন সময় হওয়াও সম্ভবপর ছিল এমন কথা বলা ভুল হবে। কেননা, রমজান মাসে মুশরিকদের বিরুদ্ধে মুসলমানদের তরবারী হাতে তুলে নেওয়াটা আল্লাহর পক্ষ থেকে পূর্ব নির্ধারিত ছিল। এটি কোন কাকতালীয় ঘটনা ছিল না। এতে অনেক গুঢ় রহস্য আর তাৎপর্য নিহিত ছিল। যার কিছু আমাদের জানা আছে। আবার অনেক কিছুই আমাদের অজানা রয়ে গেছে।
ইসলামের প্রথম যুদ্ধ রমজানেই কেন সংঘটিত হলো? মুশরিকদের সাথে সর্বপ্রথম সংঘর্ষ রমজানে হওয়ার রহস্য কী? মুসলমানদের এই নিরঙ্কুশ অভাবনীয় বিজয় অন্য কোন মাসে না হয়ে রমজান মাসেই কেন হল? নিশ্চয় এর পিছনে অনেক হেকমত অন্তর্নিহিত আছে।
আমি (লেখক) এই মাসকে উম্মতের জন্য রাজনীতির বিশ্বমঞ্চে চালকের আসনে সমাসীন হওয়ার এবং ভবিষ্যৎ বিনির্মাণের একটি সুবর্ণ সিঁড়ি জ্ঞান করি। শুধুমাত্র এই একটি মাস-ই উম্মতের পরিস্থিতি পরিবর্তন, টেকসই ভবিষ্যৎ বিনির্মাণ এবং লাঞ্ছনা-গঞ্জনার বাঁধন ছিঁড়ে ইজ্জত সম্মানের স্বর্ণ শিখরে আরোহন করার সোনালী সোপান। আল্লাহ তা'আলা বলেন,
وَلَقَدْ نَصَرَكُمُ اللَّهُ بِبَدْرٍ وَأَنتُمْ أَذِلَّةٌ ۖ
"আর অবশ্যই আল্লাহ তোমাদেরকে বদরে সাহায্য করেছেন অথচ তোমরা কি ছিলে? লাঞ্ছিত বঞ্চিত, নিগৃহীত নিষ্পেষিত, হীনবল ছিলে।" (সূরা নিসা-১২৩)
বদর যুদ্ধের পর মুসলমানদের পরিস্থিতি সমূলে পরিবর্তন হয়ে গিয়েছিল। বদরের পর মুসলমানদের জন্য একটি সর্বজন স্বীকৃত স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হল। মাথাগোঁজার, পরিচয় দেওয়ার এবং উচ্চকণ্ঠে দাবি করার মতো একটি মজবুত, শক্তিশালী, স্থায়ী অবস্থান তৈরি হলো। সমগ্র বিশ্ব চিনলো এক নতুন রাষ্ট্রকে। ইহুদীরা থরথরিয়ে কাঁপতে শুরু করলো। মুশরিকরা হয়ে গেল পর্যদুস্ত। প্রকাশ্যে এসে গেল মুনাফিক গাদ্দার গুষ্টির কুকীর্তি। দুনিয়ার সব কিছুতে খুব দ্রুত ব্যাপক পরিবর্তন আসা শুরু হয়েছিল বদরের যুদ্ধের পরপর-ই। এ যুদ্ধের সাথে অন্য কোন যুদ্ধের তুলনা চলে না। এটি ছিল ইতিহাসের গতি-মোড় পরিবর্তনকারী যুদ্ধ। তাইতো আল্লাহ তায়ালা এই দিনের নাম দিয়েছেন "আল-ফুরক্বান" তথা "সত্য-মিথ্যা, হক-বাতিলের প্রভেদকারী দিবস"।
ছোট-বড়, নারী-পুরুষ সকল মুসলমান-ই জানে বদর যুদ্ধ হয়েছিল রমজান মাসে। তাই বদর যুদ্ধের সাথে রমজান মাসের নিবিড় সম্পর্কের কারণ নিয়ে চিন্তাভাবনা করা প্রত্যেক মুসলমানের একান্ত কর্তব্য। কেন বদর যুদ্ধ এত বহুল আলোচিত? কেনইবা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অন্যান্য যুদ্ধের চেয়েও বদর যুদ্ধ অতি গুরুত্ব এবং মর্যাদার অধিকারী?
এর কারণ হলো, বদর যুদ্ধের মাধ্যমেই বিশ্ব ইতিহাসে মুসলিম জাতি বিনির্মাণের যাবতীয় মূলনীতি, রূপরেখা সংবিধিবদ্ধ হয়েছে । বদরের মাধ্যমে মুসলমানরা বুঝতে পেরেছে, বিজয় একমাত্র আল্লাহর পক্ষ থেকেই হয়ে থাকে। শক্তি-সামর্থ্য এবং জনবল দিয়ে কখনো বিজয় অর্জন করা যায় না। ফলে রবের বিরাগভাজন হয়ে এবং ধর্ম বিচ্যুত হয়ে কখনো বিজয় অর্জনের আশা করা নিতান্ত বোকামি। সূরাতুল আনফালে আল্লাহ তা'আলা বদরের বিজয় সম্পর্কে বলেন,
"আর সাহায্য তো আল্লাহর পক্ষ থেকেই হয়ে থাকে। নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।" (সূরা আনফাল-১০)
কিভাবে ৩১৩ অথবা ৩১৪ জনের অপ্রস্তুত ছোট্ট একটি বাহিনীর পক্ষে ১০০০ সৈন্যের বিশাল দুর্ধর্ষ বাহিনীকে পরাভূত করা সম্ভব হয়েছিল? মুসলমানদের সাথে ছিল মাত্র ৭০ টি উট আর তাদের সাথে আছে ৭০০ উট। এক বাহিনীর সাথে ছিল মাত্র দুইটি ঘোড়া আর অপর বাহিনীর সাথে ২০০টি ঘোড়া। এই ক্ষুদ্র বাহিনী বের হয়েছিল মুসাফিরের সামান্য সরঞ্জাম নিয়ে আর সেই বাহিনী বের হয়েছিল যুদ্ধের বিপুল অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে। তারপরও বস্তুগত প্রস্তুতিতে সার্বিক পিছিয়ে থাকা এই ছোট্ট বাহিনীটি কোন অদৃশ্য শক্তি বলে সে বিশাল, পাওয়ারফুল পরাক্রমশালী বাহিনীকে পরাজিত করতে সক্ষম হলো?!
এটা আর কিছুই নয়। কেবলমাত্র মুসলমানদের প্রতি আল্লাহ তায়ালার সহযোগিতার কারণেই হয়েছে। দুর্বল, অসহায় স্বল্পসংখ্যক ঈমানদারদেরকে তিনি বিজয়ে সহযোগিতা করেছেন। সহযোগিতা করেছিলেন প্রথাগত কোন অস্ত্রশস্ত্রের বহর জুগিয়ে নয়। ক্ষেপণাস্ত্র, আধুনিক কামান কিংবা বিস্ফোরক সরঞ্জাম দিয়ে নয়। বরং মদদ জুগিয়েছিলেন বৃষ্টি, তন্দ্রা, সঠিক সিদ্ধান্ত, কাফিরদের বেঠিক সিদ্ধান্ত এবং তাদের অন্তরে ভীতি সঞ্চারের মাধ্যমে। সাহায্য করেছিলেন আসমানী সৈন্য ফেরেশতাদের মাধ্যমে। ফেরেশতাকুলের সরদার জিবরীল আলাইহিস সালামের নেতৃত্বে বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল অসংখ্য ফেরেশতা।
আল্লাহর ফরমান,
"আর সাহায্য তো আল্লাহর পক্ষ থেকেই হয়ে থাকে। নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।" (সূরা আনফাল-১০)
"যখন আপনি নিক্ষেপ করেছিলেন (শত্রুদের উদ্দেশ্যে), তখন আপনি নয় স্বয়ং আল্লাহ তাআলা তাদের দিকে নিক্ষেপ করেছিলেন।" (সূরা আনফাল-১৭)
বদরের যুদ্ধ মুসলমানদের অন্তরে কিয়ামত পর্যন্তের জন্য বিজয়ের আকাঙ্ক্ষা-বীজ বুনে দিয়েছে। সুস্পষ্ট সবক দিয়েছে, ''সংখ্যায় তুমি অসহায়! শক্তিতে তুমি দুর্বল! কোন সমস্যা নেই। আল্লাহ সাথে থাকলে বিজয় তোমার সুনিশ্চিত। তুমিই বিজয়ী।"
- বদরের যুদ্ধ আমাদের শিক্ষা দেয়,
১) বিজয় অর্জন করতে হলে আমাদের সবসময় একতাবদ্ধ থাকতে হবে, আল্লাহ তা'আলা বলেন,
"এবং তোমরা পরস্পর ঝগড়া করো না, তাহলে তোমরা সাহসহারা হয়ে যাবে এবং তোমাদের শক্তি নিঃশেষ হয়ে যাবে। আর তোমরা ধৈর্য ধর, নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন।" (সূরা আনফাল-৪৬)
২) বিজয়ের জন্য জান, মাল, সময়, প্রচেষ্টা সবকিছু একনিষ্ঠতার সাথে বিনিয়োগ করতে হবে।
৩) শত্রুর মোকাবেলায় সাধ্যানুযায়ী প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে আল্লাহ তায়ালার এরশাদ,
"আর তাদের (শত্রুদের) মুকাবিলার জন্য তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী শক্তি ও অশ্ব বাহিনী প্রস্তুত কর, তা দ্বারা তোমরা ভয় দেখাবে আল্লাহর শত্রু ও তোমাদের শত্রুদেরকে....।" (সূরা আনফাল-৬০)
৪) সকল বিষয়ে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ মেনে চলতে হবে,
"তোমরা আল্লাহ ও রাসূলের ডাকে সাড়া দাও; যখন তিনি তোমাদেরকে আহবান করে তার প্রতি, যা তোমাদেরকে জীবন দান করে।" (সূরা আনফাল-২৪)
ইসলামী জাতি গঠনের উল্লিখিত সকল মূলনীতি আমরা বদর যুদ্ধ থেকে রমজান মাসেই পেয়েছি। তাই বিজয় যে সত্তার হাতে, রমজান মাসে আমাদের সে সত্তার নৈকট্য হাসিল করার খুব বেশি চেষ্টা করতে হবে। রমজান মাসে মুসলমানদের মাঝে পারস্পরিক সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য এবং ভালোবাসা বৃদ্ধি করতে হবে। ইসলামী জাতি বিনির্মাণে এটি অন্যতম মূলভিত্তি। রমজানে মাল, সম্পদ, সময় এবং প্রচেষ্টা আল্লাহর পথে ব্যয় করতে হবে। শারীরিক মানসিক, আধ্যাত্বিক এবং স্বাস্থ্যগত সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে আমাদের এই রমজান মাসেই। সর্বাত্মক জিহাদি চেতনা আমরা রমজান মাস থেকেই পাই।
অষ্টম হিজরীতে ঘটেছিল ইতিহাসের অন্যতম একটি স্মরণীয় ঘটনা- মক্কা বিজয়। মুশরিকদের সাথে মুসলমানদের সর্বশেষ এবং চূড়ান্ত সাক্ষাৎ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবায়ে কেরাম অষ্টম হিজরির ১০ই রমজান মদিনা থেকে মক্কার উদ্দেশ্যে রওনা হন। ২১শে রমজান মক্কা বিজয় হয়। মক্কা বিজয়ের প্রেক্ষাপট ছিল বদর এর প্রেক্ষাপটের চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন। রমজানে বদর যুদ্ধের উদ্দেশ্যে বের হওয়া ছিল মুসলমানদের অনিয়ন্ত্রণাধীন এবং অনিচ্ছাধীন।
আবু সুফিয়ান এর নেতৃত্বে মুশরিক কাফেলা রমজান মাসে বের হয়েছিল বিধায় মুসলমানদেরও তখন বের হতে হয়েছিল। কিন্তু মক্কা বিজয়ের উদ্দেশ্যে যাত্রা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবায়ে কেরামের নিয়ন্ত্রণাধীন ছিল। তাঁরা চাইলে রমজান শেষ করে তিন সপ্তাহ পরে শাওয়াল মাসে মক্কা বিজয়ের উদ্দেশ্যে বের হতে পারতেন। রোজা পালন, রাত্রি জাগরন এবং ইবাদত-বন্দেগীর মাধ্যমে রমজান কাটিয়ে তিন সপ্তাহ পর জিহাদের জন্য তারা বের হতে পারতেন। না তারা এমনটি করেননি। বরং, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সৈন্যবাহিনী নিয়ে মক্কার নিকটবর্তী হয়েছিলেন; তখন তিনিও রোজাদার ছিলেন এবং সাহাবায়ে কেরামও রোজা অবস্থায় ছিলেন। সুতরাং, মক্কা বিজয় হয়েছিল রমজান মাসে। এটা কি কোন কাকতালীয় ব্যাপার যে, কোরাইশের মুশরিকদের সাথে সর্বপ্রথম যুদ্ধ বদর সংঘটিত হয়েছিল রমজান মাসে; আবার তাদের সাথেই সর্বশেষ যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল মক্কা বিজয়ের মাধ্যমে- সেটাও ছিল রমজান মাসে?!
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
নিশ্চয় আমি সব কিছু সৃষ্টি করেছি নির্ধারিত পরিমাণ অনুযায়ী। (সূরাতুল ক্বমর-৪৯)
এ মাসে মুসলিম মিল্লাতের সার্বিক অবস্থা অবনতি থেকে অস্বাভাবিক হারে ক্রমশ উন্নতির দিকে অগ্রসর হয়েছে।
এ মাসেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম "হুবল" মূর্তিসহ কাবা শরীফের ভিতরে থাকা আরও ৩৬০ টি মূর্তি ধূলিসাৎ করে দিয়েছিলেন। এই মূর্তিগুলো রাসূলের নবুয়ত প্রাপ্তির পর সুদীর্ঘ ২১ বছর ধরে কাবা শরীফের ভিতরে বিরাজ করছিল। তারও আগে অনেক বছর ধরে এগুলো এখানে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে ছিল। মূর্তিগুলো স্থাপিত হওয়ার পর থেকে গত হওয়া প্রতিটি সপ্তাহ, প্রতিটি মাস আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছা ছিল, এগুলোকে রমজান মাসেই ভাঙ্গা হবে। এগুলোর পতন রমজানেই হবে।
রমজান মাসেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খালিদ বিন ওয়ালিদকে 'উজ্জা' মূর্তি ভাঙার জন্য পাঠিয়েছিলেন। আর তিনি (খালিদ) এ মাসেই সেটি গুঁড়িয়ে দিয়েছিলেন।
একই মাসে আমর ইবনুল আসকে 'সুয়া'ই' মূর্তি ভাঙার নির্দেশ দিয়েছিলেন। আর তিনি তা করেছিলেন।
রমজান মাসেই সাদ ইবনে যাইদকে 'মানাফ' মূর্তি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। আর সেটাও বাস্তবায়িত হয়েছিল।
রমজান মাসেই উল্লেখিত সকল মূর্তির পতন ঘটেছিল। এটা কি কাকতালীয় কোন ঘটনা ছিল? না, বরং এটি ছিল আল্লাহ তা'আলার নেওয়া পূর্ব সিদ্ধান্ত, প্রাক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন।
রমজান হল ইসলামের শক্তিমত্তার মাস। মুমিনের বিজয় এবং দীনের চূড়ান্ত মজবুতির মাস। শক্তি, সাহস, উদ্দীপনা, চেতনা এবং সামগ্রিক শক্তিতে বলিয়ান হওয়ার মাস রমজান। নতুন নতুন প্রযুক্তিগত কর্মকাণ্ড, ক্রীড়া কর্মশালা এবং ইফতার পার্টিতে মেতে ওঠার মাস রমজান নয়। এমন রমজান আল্লাহ তাআলা আমাদের কাছ থেকে চান না, তাঁর কাছে গৃহীত নয় এরকম রমজান।
হিজরী ১৩ সনে মুসলমানরা বিরলপ্রজ ইসলামী বীর মুসান্না ইবনে হারেস-এর নেতৃত্বে 'বুয়াইব' জয় লাভ করতে সক্ষম হয়। এ যুদ্ধে মুসলমানদের সৈনিক ছিল মাত্র ৮,০০০। অপরদিকে পারসিকরা পারস্যের সর্বাধিক যুদ্ধ কুশলী 'মাহরান'-এর নেতৃত্বে ছিল ১ লাখ দুর্ধর্ষ সৈনিকের বিশাল বাহিনী। হিজরী ১৩ সালের রমজান মাসের শেষ সপ্তাহে উভয় বাহিনী যুদ্ধে মিলিত হয়। এক রক্তক্ষয়ী, মারাত্মক যুদ্ধ সংঘটিত হয়। মুসলমানদের উপর আল্লাহর আসমানী রহমত, নুসরাত নেমে আসে। তাঁরা লাভ করে এক প্রশান্তিদায়ক বিশাল বিজয়। কতজন পারস্য সৈনিক এ যুদ্ধে নিহত হয়েছে জানেন কি? পারস্য বাহিনী পুরোপুরিভাবেই পর্যুদস্ত হয়ে গিয়েছিল। তাদের এক লাখ সৈনিক থেকে ৯০ হাজার সৈনিক এ যুদ্ধে মারা পড়েছে। 'জিসর' যুদ্ধে মুসলমানদের পরাজয়ের এক মাসের মাথায় মুসলমানদের হাতে পারস্য বাহিনীর শোচনীয় পরাজয় ঘটে।
সংখ্যায় স্বল্প, অস্ত্রশস্ত্রে অপ্রতুল, অসহায় প্রবাসী মানুষের সমন্বয়ে গঠিত ৮০ হাজারের একটি ক্ষুদ্র দল কিভাবে অমিত পরাক্রম, বিপুল আধুনিক সমরাস্ত্রে সজ্জিত, অতি শক্তিশালী ৯০ হাজারের তেজোদ্দীপ্ত সৈনিককে ধরাশায়ী করতে পেরেছিল- এর নিগূঢ় রহস্য কোরআনের এ আয়াতে আমাদের জানান দিচ্ছে,
সুতরাং তোমরা তাদেরকে হত্যা করনি বরং আল্লাহই তাদেরকে হত্যা করেছেন। (সূরা আনফাল-১৭)
সময় পেরিয়ে মুসলমানদের কাছে আসলো হিজরী ৫৩ সালের নতুন রমজান মাস। বিজিত হলো ভূমধ্যসাগরের রোডস দ্বীপ। বিখ্যাত সাহাবী হযরত মুয়াবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ান রাজি. ইয়ামানের 'আজদ' গোত্রের জুনাদা ইবনে আবী ওমাইয়া আজদিকে এই দ্বীপ জয়ের লক্ষ্যে প্রেরণ করেন। সমুদ্র সমর অনেক কষ্টের কাজ হওয়া সত্ত্বেও মুসলমানরা এই যুদ্ধযাত্রাকে রমজানের পর পর্যন্ত বিলম্ব করেননি। হাদিসে আছে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “সমুদ্রপথের একটি জিহাদ স্থলপথের দশটি জিহাদ অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। যে ব্যক্তি সমুদ্র অতিক্রম করে সে যেন সমস্ত উপত্যকা অতিক্রম করে। আর সমুদ্র মাঝে যার মাথা ঘোরে, সে ব্যক্তি রক্তমাখা (মুজাহিদের) মত।” (অর্থাৎ এরা সওয়াবে সমান।) (হাকেম ২৬৩৪, সহীহুল জামে’ ৪১৫৪ নং)
ফলে তারা যুদ্ধকে বিলম্ব করেননি। কারণ, যুদ্ধে দেরি করতে নেই। আর মুসলমানরা সার্বক্ষণিক যুদ্ধক্ষেত্রে থাকে। ফলে তারা রমজান শেষ হওয়ার অপেক্ষা করেন নি। রমজান মাসেই সমুদ্র সমরে তারা ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। আল্লাহর সাহায্যে ৫৩ হিজরির রমজান মাসে রোডস দ্বীপ মুসলমানদের করতলগত হয়ে যায়।
ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় মুসলমানদের কাছে আগমন করে ৯১ হিজরির রমজান মাস। বিশাল স্পেন রাজ্য মুসলমানদের করায়ত্ত হওয়ার মাস। ৯১ হিজরীর রমজান মাসে উমাইয়া খলীফা ওয়ালিদের সেনাপতি মূসা বিন নুসাইর তুরাইফ বিন মালেককে স্পেনের রাস্তা আবিস্কারের জন্য পাঠান। তারপর ৯২ হিজরির রমজান মাসে তারেক বিন যিয়াদের কৌশলী নেতৃত্বে মাত্র ১২ হাজার মুসলিম সৈনিক রড্রিকের নেতৃত্বাধীন এক লক্ষ স্পেনীয় খ্রিস্টান ধর্মযোদ্ধার বিরুদ্ধে স্পেনের মাটিতে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। লাগাতার আটদিন কঠিন যুদ্ধ চলার পর মুসলমানদের জন্য স্পেনের ভূমিতে সূচিত হয় এক নতুন ইতিহাস। স্পেন ভূখন্ডে মুসলমানদের ৮০০ বছরের গৌরবময় রাজত্বকালের শুভ সূচনা হয় ৯২ হিজরীর রমজান মাসে।
এরপর আসে হিজরি ৯৬ সালের রমজান মাস। এ বছর মুহাম্মাদ বিন কাসিমের হাতে অত্যাচারী সিন্ধু রাজা দাহির পরাজিত হয় এবং উমাইয়া শাসক ওয়ালিদ বিন আব্দুল মালেকের শেষ আমলে সেখানে মুসলিম শাসন কায়েম হয়। এই বিজয় ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলামের প্রচার প্রসারের সূচনা করে।
২১২ হিজরির রমজান মাসে যিয়াদ বিন আগলাবের হাতে ইতালির সিসিলি দ্বীপ জয় হয়। ২২৩ হিজরির ৬ রমজান, রোববার আব্বাসি খলিফা মু‘তাসিম বিল্লাহ বাইজানটাইন সম্রাটকে পরাজিত করে আমুরিয়া জয় করেন। ৫৩২ হিজরীর রমজান মাসে ইমাদুদ্দিন জেনকি’র নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনী উত্তর সিরিয়ার আলেপ্পো শহর জয় করেন এবং খ্রিস্টান ক্রুসেডারদেরকে পরাজিত করেন। সিরিয়া তখন রোম সম্রাটের অধীন ছিল।
১১৮৭ খ্রিস্টাব্দ মোতাবেক ৫৮৩ হিজরির রমজান মাসে মিসরের সুলতান সালাহুদ্দিন ইউসুফ বিন আইউব বাইতুল মাকদিস উদ্ধারের লক্ষ্যে হিত্তিন ময়দানে পৌঁছেন এবং ১ লাখ ৬৩ হাজার খ্রিস্টান অশ্বারোহীকে পরাজিত করেন। মুসলিম বাহিনী জেরুজালেমের খৃস্টান রাজাকে বন্দী, ৩০ হাজার সৈন্য আটক ও অন্য ৩০ হাজার সৈন্যকে হত্যা করে বিজয় লাভ করেন। কোনো কোনো ঐতিহাসিক রমজানে নয় বরং রজব মাসে জেরুজালেম বিজয় হয় বলে উল্লেখ করেছেন।
৬৫৮ হিজরির সফর মাসে তাতারদের নেতা হালাকু খানের হাতে বাগদাদের ইসলামি খেলাফতের পতন হয়। ৬৫৮ হিজরির ২৫ রমজান মোতাবেক ১২৬২ খ্রিস্টাব্দে তাতারিদের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনের নাবলুস ও সিরিয়ার বিসানের মাঝামাঝি আইনে জালুত নামক স্থানে উপস্থিত হন। জাহের বাইবারস জেরুজালেমের ওপর তাতারিদের আক্রমণ প্রতিহত করে বায়তুল মাকদিসকে রক্ষা এবং তাদের মিসর অগ্রাভিযান প্রতিহত করেন। এই যুদ্ধে মুসলমানরা জয়লাভ করেন।
জাহের বাইবারস ৬৬৬ হিজরীর রমজান মাসে তাতারদের কাছ থেকে তুরস্ক দখল করেন। রমজান মাসে মুসলমানদের বিজয়ের ধারা অব্যাহত থাকে। ৭০২ হিজরী রমজান মাসে মিসরীয় বাহিনী তাতারদের আরেকটি অভিযানকে ব্যর্থ করে দেয় এবং দক্ষিণ দামেস্ক থেকে ১০ হাজার তাতার সৈন্যকে আটক করে।
দীর্ঘ তিন শতাব্দী যাবত খ্রিস্টানরা মুসলমানদের সাথে ক্রুসেডে লিপ্ত থাকে। পূর্ব বাইজাইনটাইন খৃষ্টান সাম্রাজ্য, স্পেন এবং পূর্ব আরব দেশসমূহে ঐ সকল যুদ্ধ সংঘটিত হয়। স্পেনে মুসলিম শাসনের অবসানের পর বিশ্বব্যাপী মুসলমানরা দুর্বল হয়ে পড়ে। তখন পুনরায় মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ করে শক্তিশালী করে তোলার প্রয়োজন দেখা দেয়। তুরস্কের উসমানি শাসক সুলতান মুহাম্মাদ আল-ফাতিহ দীর্ঘ ৫৯ দিন কনস্টান্টিনোপল অবরোধ করার পর তা জয় করেন। তিনি পবিত্র রমজানে ১৪০৩ খ্রিস্টাব্দের ৪ মে বিজয়ীর বেশে কনস্টান্টিনোপল প্রবেশ করেন এবং তাঁর নিজের প্রতিষ্ঠিত মসজিদ আয়াসুফিয়ায় নামায আদায় করেন। কনস্টান্টিনোপল বিজয়ের কারণে বুলগেরিয়া, রোমানিয়া, যুগোশ্লাভিয়া এবং অষ্ট্রিয়াসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ইসলামের প্রচার প্রসার শুরু হয়।
এভাবে ইতিহাস ঘাঁটাঘাঁটি করলে আমরা রমজান মাসে আরও বিজয়ের সন্ধান পাবো। যেমন : ২২২ হিজরির রমজানে খলিফা মু‘তাসিমের আমলে খোরাসানের ‘বাবাক’ শহর বিজয় হয়। ২২৩ হিজরির ৬ রমজান মু‘তাসিম বিল্লাহ’র নেতৃত্বে উমূরিয়্যাহ বিজয়, ৫৭০ হিজরির ১৪ রমজান সুলতান সালাহুদ্দিন আইউবি কর্তৃক শামের ‘বা‘লাবাক’ শহর বিজয় ইত্যাদি।
আমরা দেখলাম রমজানেই অর্জিত হয়েছে মুসলমানদের এক ঐতিহাসিক বিজয়ধারা। মুসলমানরা প্রায় সব ইসলামবিরোধী মতবাদ ও দলের বিরুদ্ধে রমজান মাসেই বিজয় লাভ করেছে। মূর্তিপূজারী মুশরিকদের বিরুদ্ধে বদর ও মক্কা বিজয়। অগ্নিপূজক পারস্যের বিরুদ্ধে বুওয়াইবের যুদ্ধে বিজয়। আন্দালুসের বারবাত উপত্যকায় ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে জয়। সুলতান সালাহুদ্দিনের সাফেদ বিজয়। তাতারিদের বিরুদ্ধে আইনে জালুতে বিজয়। অনুরূপভাবে ১৩৯৩ হিজরির ১০ রমজান (৬ অক্টোবর ১৯৭৩ খ্রি.) মুসলমানরা এক মহান স্বাধীনতার বিজয় লাভ করে। সেটা হলো সিনাই উপদ্বীপের স্বাধীনতা লাভ। এসব ঘটনাপ্রবাহ থেকে বুঝা যায়, ত্যাগের মাস রমজান মুসলমানদের মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার মাস। বিজয়ের চেতনায় প্রদীপ্ত হওয়ার মাস। আশা-ভরসা, শক্তি-সাহস, বুদ্ধিমত্তায় সামনে এগিয়ে যাওয়ার মাস। প্রতি বছর মাহে রমজান এসে এইসব বিজয়ের স্মৃতিগাঁথা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, যাতে ঈমানদার-মুসলিম বিজয়ের সেই চিরায়ত ধারায় অব্যাহত থাকার প্রেরণা পায়।
ভাষান্তর : হামেদ বিন ফরিদ। মুহাদ্দিস ও সিনিয়র শিক্ষক,
ইমাম মুসলিম রহ. ইসলামিক সেন্টার, কক্সবাজার। খতিব, পশ্চিম মেরংলোয়া মুন্সিপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ,রামু , কক্সবাজার।