রমযানুল মোবারাক। সিয়াম-সাধনার মাস। মুমিনের আমলের ভরা বসন্ত। রমযানুল মোবারকের প্রতিটি জুম’আ যেন সে বসন্তে নতুন মাত্রা যোগ করে। রমযান-জুম’আর প্রতিটি আমলের পরতে পরতে মুমিন খুঁজে ফেরে আত্মার খোরাক।
আজ পবিত্র জুম’আর দিন। সপ্তাহের শ্রেষ্ঠতম দিন। পবিত্র রমযানের প্রথম জুমআর দিন। হাদীসের ভাষায় (সাপ্তাহিক) ‘ঈদের দিন’। জুম’আর দিনের বিশেষ ফজিলত ও করণীয় সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে বহু হাদীস। এদিনে যেসকল আমাল ও করণীয় সম্পর্কে প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সবিশেষ উৎসাহ প্রদান করেছেন সেগুলোর অন্যতম সূরা কাহাফ তিলাওয়াত করা।
সূরা কাহাফ কুরআনুল কারীমের অত্যান্ত ফজিলতপূর্ণ একটি সূরা। ১১৪ টি সূরার মধ্যে সূরাটি ১৮ তম। ১১০ আয়াত বিশিষ্ট সূরাটিতে বর্ণনা করা হয়েছে ঐতিহাসিক ঘটনাবলীসহ নানাবিধ শিক্ষা। জুম’আর দিন সূরা কাহাফ তিলাওয়াতের ফজিলতের ব্যাপারে নির্ভরযোগ্য একাধিক হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
عن أبي سعيد الخدري رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: من قرأ سورة الكهف في يوم الجمعة، أضاء له من النور ما بين الجمعتين.
অর্থঃ হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত— রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন—‘যে ব্যক্তি জুম'আর দিন সুরা কাহাফ পড়বে তার জন্য তা দুই জুম’আর মাঝে নূর হবে।
(মুসতাদরাকে হাকিমঃ ২/৩৯৯, বাইহাক্বীঃ ৩/২৪৯, সহীহুল জামে', আলবানীঃ ৬৪৭০)
عن أبي سعيد الخدري رضي الله عنه قال: من قرأ سورة الكهف يوم الجمعة أضاء له من النور ما بينه وبين البيت العتيق.
অর্থঃ হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন—'যে ব্যক্তি জুম'আর দিন সূরা কাহাফ পড়ল তা তার জন্য তার ও কাবা ঘরের মাঝে নূর হবে।
(শুয়াবুল ঈমানঃ ২/৯৫৯, সহীহুল জামে', আলবানীঃ ৬৪৭১।)
হাদীসটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দিকে সম্বন্ধযুক্ত হলেও মুহাদ্দিসীনে কেরাম তা আবু সাঈদ খুদরী রাযি. এর উক্তি হওয়ার মতকে প্রাধান্য দিয়েছেন।
عن ابن عمر رضي الله عنهما قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: من قرأ سورة الكهف في يوم الجمعة سطع له نور من تحت قدمه إلى عنان السماء يضيء له يوم القيامة، وغفر له ما بين الجمعتين.
অর্থঃ হযরত ইবনে উমর রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন— রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন— যে ব্যক্তি জুম’আর দিন সুরা কাহাফ পড়বে তার পায়ের তলদেশ থেকে আসমান পর্যন্ত একটি আলো উৎসারিত হবে, যা কিয়ামত দিবসে তার আলোর কাজ দিবে। আর তার দুই জুম’আর মাঝের গুনাহ (সগীরা গুনাহ) মাফ করে দেওয়া হবে।
(আত তারগীব ওয়াত তারহীবঃ ১/৩৫৪)
হানাফী, শাফেয়ী ও হাম্বলী মাযহাবের ইমামদের মতে জুমআর দিন সূরা কাহাফ তিলাওয়াত করা মুস্তাহাব। মালেকী মাযহাবের বড় কয়েকজন ইমামও এ মত ব্যক্ত করেছেন।
(দ্রষ্টব্য: আল মাওসূআতুল ফিকহিয়্যাহ, আদদুরারুস সানিয়্যাহ: জুমআ অধ্যায়)
তিলাওয়াতের সময়: বৃহস্পতিবার সূর্য অস্তমিত হওয়ার পর থেকে পরবর্তী দিন সূর্য অস্তমিত হওয়ার আগ পর্যন্ত পূর্ণ সময় জুম’আর দিন হিসেবে ধর্তব্য। হাদীসের মধ্যে ‘‘জুম’আর দিন’’–এর কথা রয়েছে, কোনো কোনো বর্ণনায় ‘‘জুম’আর রাত’’–এর কথা রয়েছে। সেই হিসেবে বর্ণিত ফযিলত লাভের জন্য উল্লিখিত সময়ের যে কোনো মুহূর্তে তিলাওয়াত করা যেতে পারে।
আল্লাহ রব্বুল আলামীন আমাদের সকল নেক আমলগুলো কবুল করুন। আমীন।
লেখক: মুহা. আল আমিন
শিক্ষার্থী, ফতোয়া বিভাগ, জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া।