সাগরে আটকে থাকা রোহিঙ্গা মুসলমানদের জীবনহানিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব আল্লামা কাসেমী।
বঙ্গোপসাগরের কাছে ভাসমান দু’টি নৌকায় ক্ষুৎপীপাসা ও জীবনহানির মুখে পড়া পাঁচ শতাধিক রোহিঙ্গা মুসলমানের প্রতি প্রতিবেশী দেশসমূহ ও ওআইসি’র নির্লিপ্ততায় গভীর হতাশা ও উদ্বেগ প্রকাশ করে জমিয়তে মহাসচিব বলেন, ‘আমরা গভীর উদ্বেগ ও বেদনার সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে- আরাকানের বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা মুসলমান আবারও গভীর সমুদ্রে জীবনহানির গুরুতর সংকটে পড়েছেন। বিশ্বের কোন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা কার্যকরভাবে তাদের রক্ষায় এগিয়ে আসছে না। করোনা আশংকার কথা বলে এমন আচরণ চরম অমানবিকতা বলে আমরা মনে করি’।
আজ মঙ্গলবার (২৮ এপ্রিল) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।
আল্লামা কাসেমী বলেন, অনেক রোহিঙ্গা মুসলমান মাসের পর মাস সাগরে ভেসে ক্ষুধা ও রোদ-বৃষ্টিতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন বলে একের পর এক খবর প্রকাশিত হচ্ছে প্রচার মাধ্যমে। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম সূত্রে এও দেখা যাচ্ছে, মিয়ানমারে অত্যাচার থেকে বাঁচতে এবং জীবিকার খোঁজে সম্প্রতি নতুন করে রোহিঙ্গা মুসলমানরা মালয়েশিয়াসহ আশে-পাশের দেশগুলোতে আশ্রয়ের জন্য গেলেও সংশ্লিষ্ট দেশের নৌরক্ষীরা তাদের উপকূলে ভীড়তে না দিয়ে বরং আবার সাগরে ঠেলে দিচ্ছে।
ঐসব দেশের রক্ষীরা করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে নিজ নিজ অঞ্চলকে মুক্ত রাখার নামে এই অমানবিক ও বর্বর কৌশল নিয়েছে বলে তিনি বিবৃতি ক্ষোভ এবং হতাশা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, এভাবে অনেক রোহিঙ্গা মুসলমান এখন ছোট ছোট কাঠের ট্রলারে সপ্তাহের পর সপ্তাহ সাগরে ভাসছে। এইরূপ ভাসমান অবস্থায় তাদের অনেকেই খাদ্য ও পানির অভাবে মারা যাচ্ছেন এবং জীবিতরা মৃতদের সাগরে ফেলে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। এভাবে বিশ্ব বিবেকের সামনেই অসহায় রোহিঙ্গা মুসলমানরা স্মরণকালের ভয়াবহতম এক মানবিক বিপর্যয়ের শিকার।
আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী বলেন, গত ১৫ এপ্রিল এইরূপ একটি ট্রলার থেকে বাংলাদেশের উপকূল রক্ষীরা কয়েক শত রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করারও খবর প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যতীত অন্য কোনো দেশ বা সংস্থা সাগরে ভাসতে থাকা বাকি রোহিঙ্গাদের উদ্ধার ও রক্ষায় এখনও কোনো উদ্যোগ নেয়নি দেখে আমরা গভীরভাবে হতাশ ও ক্ষুব্ধ।
তিনি বলেন, পবিত্র রমজান মাসে বিশ্বের এক অঞ্চলে এমন গণমৃত্যুর মুখে থাকা মুসলমানদের রক্ষায় অন্যান্য মুসলিম প্রধান দেশগুলোর নেতৃবৃন্দের দায়িত্ব রয়েছে। আমরা মনে করি করোনাভাইরাসের অজুহাতে শত শত মানুষকে তাদের জীবনের অধিকারকে এভাবে সচেতনভাবে বঞ্চিত করা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সনদসমূহের লঙ্ঘন।
আল্লামা কাসেমী বলেন, ওআইসিভুক্ত সকল দেশের নেতৃবৃন্দের কাছে আমাদের আবেদন, অবিলম্বে সাগরে ভাসতে থাকা রোহিঙ্গাদের উদ্ধার ও পুনর্বাসনে তাঁরা যেন সাধ্যের সবটুকু করেন। এ বিষয়ে তাঁদের নীরবতা উম্মাহ’র চেতনাবোধকেই কেবল মারাত্মকভাবে অবজ্ঞা করছে না, বরং পবিত্র রমজান মাসের আহ্বান ও শিক্ষার সঙ্গেও সাংঘর্ষিক।
জমিয়ত মহাসচিব আরো বলেন, আমরা বাংলাদেশ সরকারকে অভিনন্দন জানাই একটি ট্রলার থেকে সম্প্রতি প্রায় চার শ’ রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করার জন্য। অতীতেও বাংলাদেশ রোহিঙ্গা মুসলমানদের রক্ষায় সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছে যা পুরো বিশ্বের জন্য শিক্ষণীয় হয়ে আছে।
আমরা আশা করবো, আগামীতেও বাংলাদেশ সাগরে ভাসতে থাকা রোহিঙ্গাদের প্রাণরক্ষায় গৌরবময় ভূমিকা ও অবদান অব্যাহত রাখবে এবং নতুন করে তাদের করুণ অবস্থার বিষয়টি ওআইসিসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছে কূটনীতিকভাবে উপস্থাপন করবে।
/এসএস