আজ মঙ্গলবার (২৮ এপ্রিল) মহামারী করোনাভাইরাসে দেশে নতুন করে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত সবাই ঢাকার বাসিন্দা। প্রত্যেকেই ষটোর্ধ্ব বয়সী।

এছাড়া এদিন নতুন আক্রান্ত হয়েছে ৫৪৯ জন। এ নিয়ে দেশে মোট মৃত্যু হলো ১৫৫ জনের এবং মোট আক্রান্ত হয়েছে ৬৪৬২ জন।

আজ ‍মঙ্গলবার দুপুরে সংবাদ বুলেটিনের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানিয়েছেন আইইডিসিআর এর অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা

তিনি জানান, গত ২৪ ঘন্টা সুস্থ হয়েছেন ৮ জন, এখন পর্যন্ত মোট ১৩৯ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। এছাড়া অধিকাংশ আক্রান্তরা বাড়ি থেকেই সুস্থ হচ্ছেন, যাদে তথ্য আমরা আপডেট করতে পারিনি ‘বলেন ডা. নাসিমা সুলতানা’।

করোনাভাইরাসে বিশ্বব্যাপী মৃতের সংখ্যা দুই লাখ ছাড়িয়ে সোয়া দুই লাখ ছুঁই ছুঁই। প্রতিমূহুর্ত বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। ২ লক্ষ ১১ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা গেছে আজ মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত। এরমধ্যে শুধুমাত্র আমেরিকাতেই ৫৬ হাজার ছাড়িয়েছে মৃতের সংখ্যা।

বাংলাদেশেও প্রতিদিন বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। সেই সাথে পরীক্ষা যতো বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে হু হু করে। বাড়ছে ঝুঁকি।

ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, গত ২৪ ঘন্টায় দেশে ৪৩৩২টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এতে ৫৪৯ জন শনাক্ত হয়েছেন। এ নিয়ে মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৫০৪০১টি।

২৪ ঘন্টায় আইসোলেশনে গেছেন ১১১ জন. মোট আইসোলেশন সংখ্যা ১২৪৮ জন। এছাড়া আইসোলেশন থেকে ২৪ ঘন্টায় ছাড় পেয়েছেন ৪৮ জন এখন পর্যন্ত ছাড় পেয়েছেন ৭৮৫ জন।

এদিকে  মহামারী করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশের সব স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সোমবার (২৭ এপ্রিল) সকালে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে রাজশাহী বিভাগের জেলাগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে মতবিনিময়কাল তিনি এ কথা জানিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখনই স্কুল-কলেজ খুলে দেয়া হবে না। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকবে। যখন করোনা সংক্রমণ থামবে তখন খুলব।

তিনি বলেন, আলেমরা মসজিদে সীমিত আকারে জামাত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সবাই বাসায় বসে ইবাদত করুন। এই মহামারী যাতে কেটে যায় দোয়া করুন।

শেখ হাসিনা আরো বলেন, আমরা এ দুঃসময় কাটিয়ে উঠব। আবার কল-কারখানা খুলবে। আমাদের অর্থনীতি আবার সচল হবে। দুর্যোগ আসবে সেটা আবার চলে যাবে। আবার আলো আসবে।

আজ বগুড়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, জয়পুরহাট, নওগাঁ, নাটোর, পাবনা, রাজশাহী এবং সিরাজগঞ্জ জেলার প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী উল্লিখিত জেলার প্রশাসক, পুলিশ বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সিভিল সার্জন, নার্স, রাজনীতিক, সেনা সদস্য, মসজিদের ইমাম, শিক্ষকসহ বিভিন্ন পেশাজীবীর সঙ্গে করোনা পরিস্থিতি ও ত্রাণ বিতরণ নিয়ে মতবিনিময় করেন।

সংশ্লিষ্ট খবর: পরিস্থিতি উন্নতি না হলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশের সব স্কুল-কলেজ বন্ধ: প্রধানমন্ত্রী

প্রসঙ্গত: গত বছরের ডিসেম্বর মাসে চীনের উহান শহরে করোনাভাইরাস প্রথমে ধরা পরে। এরপর ধিরে ধিরে তা ইউরোপ আমেরিকাসহ বিশ্বের প্রায় ২০৫ টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিনিয়তই জ্যামিতিক হারে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা।

করোনাভারাসের নিয়মিত আপডেট প্রকাশ কছেরা যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় ও চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন। সম্মিলিত সংকলিত সর্বশেষ তথ্য অনুসারে বিশ্বব্যাপী আজ মঙ্গলবার দুপুর দুইটা পর্যন্ত করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা ৩০ লাখ ৭২ হাজার ৮৬৩ জন।

বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর সংখ্যা দাড়িয়েছে ২ লাখ ১১ হাজার ৭৩৮ জন। যা প্রতিমূহুর্তে বেড়েই চলছে। একই সাথে বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হয়ে ফিরেছেন ৯ লাখ ২৪ হাজার ৫৭৮ জন।

বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যায় সবার উপরে আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে মৃতের সংখ্যা ৫৬ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। স্থানীয় সময় আজ মঙ্গলবার (২৮ এপ্রিল) ভোর ৪টা পর্যন্ত (বাংলাদেশ সময় ২টা) দেশটিতে ৫৬ হাজার ৮০৩  জন মানুষ মারা গেছে। পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ১০ লাখ ১০ হাজার ৫০৭ জন। সুস্থ হয়ে ফিরেছেন ১ লাখ ৩৯ হাজার ১৬২ জন।

বিশ্বের যে কোনো দেশের তুলনায় মৃত্যুর সংখ্যায় যুক্তরাষ্ট্রেই সবচেয়ে বেশি। এর পরেই রয়েছে ইউরোপীয় দেশ ইতালির অবস্থান।আক্রান্ত ও মৃত উভয় দিক থেকেেই সবচেয়ে ভয়াভহ অবস্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্র।

এটিও পড়ুন: লকডাউনে জীবন পরিবর্তন: ইসলামের ছায়ায় বিশ্ববিখ্যাত বক্সার (ভিডিও)

এছাড়া এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যুবরণ করেছেন ইতালিতে ২৬ হাজার ৯৭৭ জন এবং সুস্থ হয়ে ফিরেছেন ৬৬ হাজার ৬২৪ জন। আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৯৯ হাজার ৪১৪ জন। ইতালিতে সর্বশেষ ২৪ ঘন্টায় মারা গেছে ১৩৩ জন। যা বিগত ৫১ দিনের মধ্যে সর্বনিম্ন মৃত্যুর রেকর্ড।

প্রতিনিয়ত আক্রান্ত এবং মৃত্যু সংখ্যার কমতির দিকে থাকায় আশার আলো দেখছে ইতালির সরকার ও জনগণ।

এরইমধ্যে গত রোববার (২৬ এপ্রিল) ইতালির প্রধামন্ত্রী জিউসেপ্পে কন্টে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া এক ভাষণে লকডাউন শিথিল করা ঘোষণা দিয়েছেন। আগামী ৪ মে থেকে ১৮ মে এর মধ্যে ধীরে ধীরে সীমিত পর্যায়ে লকডাউন তুলে নেওয়া হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন কন্টে।

স্থানীয় সময় রোববার রাত পৌনে ১০টার দিকে (বাংলাদেশ সময় সোমবার রাত ২টা) এ খবর দিয়েছে ইউরোপ ভিত্তিক জনপ্রিয় ইংরেজী দৈনিক ‘দ্য লোকাল ইতালি’।

‘দ্য লোকাল ইতালি’ অনলাইন জানায়, আগামী সপ্তাহে লকডাউন শিথিল কররা ব্যাপারে পূর্ণাঙ্গ বিবরণ ও ব্যাখ্যা তুলে ধরবেন প্রধানমন্ত্রী জিউসেপ্পে কন্টে।

ইতালির প্রধানমন্ত্রী কন্টে জানান, আগামী সপ্তাহে ৪ মে থেকে রেস্তোরা খোলা হবে এবং জানাযার অনুমতি দেওয়া হবে। তবে রেস্তোরাগুলোতে ভিড় জমানো যাবে না। নির্দিষ্ট সময়ে গিয়ে খাবার সংগ্রহ করতে হবে এবং ঘরে বসে খেতে হবে। এছাড়া জানাযায় নিকটাত্মীদের ১৫ জন অংশ নিতে পারবে।

তিনি আরো জানান, ১৮ মে থেকে সীমিত আকারে অর্থনৈতিক কিছু জোন, পার্ক, গ্রন্থাগার, জিম, জাদুঘরউৎপাদন শিল্প, নির্মাণ খাত ও পাইকারি দোকান ও ক্রীড়া প্রশিক্ষণের কিছু অংশ খুলে দেওয়া হবে। তবে পরিস্থিতি পুরোপুরি ভালো না হওয়ায় স্কুলগুলো আগামী সেপ্টেম্বরের আগে খোলা হবে না।

কন্টে বলেন, ‘আমরা আপনাকে আপনার দ্বিতীয় বাড়ি বা ভিলায় ফিরে যেতে বা পাবলিক পার্কগুলিতে ঘুরে দেখার অনুমতি দেব। তবে তার মানে এই নয় যে, আপনি অন্য কারো বাড়িতে বেড়াতে যাবেন’।

প্রধানমন্ত্রী কন্টে আরো জানান, আগামী ১ জুন থেকে বার, রেস্তোঁরা, হেয়ারড্রেসার এবং বিউটি পার্লার খোলা হবে। তবে গণপরিবহনে চলাচলের ক্ষেত্রে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় যেতে হলে সুনির্দিষ্ট কারণ দর্শাতে হবে এবং সেই সাথে স্বাস্থ্য পরীক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।

অন্যদিকে আক্রান্তের দিক থেকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যা স্পেনে ২ লাখ ৩৬ হাজার ১৯৯ জন। দেশটিতে মৃত্যুবরণ করেছেন ২৩ হাজার ৫২১ জন এবং সুস্থ হয়ে ফিরেছেন ১ লাখ ২৭ হাজার ৬০৯ জন।

ভাইরাসটিতে যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে গত ২৯ ফেব্রুয়ারি। এরপর গত ৬ এপ্রিল তা ১০ হাজারে পৌঁছায়। তখন থেকে মাত্র পাঁচ দিনের মাথায় সংখ্যাটি হয়ে যায় ২০ হাজার। এতো অল্প সময়ে এতো বেশি আনুপাতিক হারে মৃত্যু হয়নি আর কোনো দেশেই।

/এসএস