ঢাকা-সহ সারাদেশে টিম গঠন করার পরও ঢাকায় করোনায় মৃতদের কাফন-দাফনের অনুমোদন না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ইকরামুল মুসলিমীন ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষ।
আজ বুধবার সংগঠনের কেন্দ্রীয় টিমের অনলাইন সভায় এ ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। জানা যায়, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতব্যক্তির কাফন-দাফনে সারাদেশে টিম গঠন করে ‘ইকরামুল মুসলিমীন ফাউন্ডেশন’।
[caption id="attachment_74872" align="aligncenter" width="440"] করোনাভাইরাসে কাজ করছে ইকরামুল মুসলিমীন ফাউন্ডেশনের আহবায়ক ও কর্মীরা।[/caption]
ইকরামুল মুসলিমীন ফাউন্ডেশনের আহ্বায়ক, পাবলিক ভয়েস টোয়েন্টিফোর ডটকম এর সম্পাদক মুফতী হাবিবুর রহমান মিছবাহ জানান, সারাদেশে ৬৪ জেলায় একজন করে নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে ঢাকা, সাভার-আশুলিয়া, গাজীপুর, টঙ্গী, কাপাসিয়া, কালীগঞ্জ, শ্রীপুর, রুপগঞ্জ, বি.বাড়িয়া, মানিকগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, নোয়াখালী, ভোলা, লক্ষ্মীপুর, চট্টগ্রাম, পটিয়া, চন্দনাইশ, মিরসরাই, সিতাকুন্ড, ফটিকছড়ি, টাংগাইল মোমেনশাহী, ধোবাউড়া, গৌরীপুর, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সিলেট, শেরপুর, ঠাকুরগাঁও, রুহিয়, রানীশংকৈল, পীরগঞ্জ, হরিপুর, নাটোর, নেত্রকোনা, হাজীগঞ্জ, রাজবাড়ি, রংপুর, জামালপুর, লালমনিরহাট, নরসিংদী, মাধবদী, মোমেনশাহী সিটি, ত্রিশাল, নান্দাইল, মাদারীপুর, দিনাজপুর ও কুড়িগ্রাম জেলা-সহ দেশের অধিকাংশ জেলা টিম প্রস্তুত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে টিমগুলোতে ব্যক্তিগত সুরক্ষা পোশাক পিপিই-সহ যাবতীয় সরঞ্জামাদি এসএ পরিবহনে পার্সেল করা হয়েছে এবং স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় করোনায় মৃতের কাফন-দাফনে অংশগ্রহণও করছেন তারা।
[caption id="attachment_74873" align="aligncenter" width="440"] যৌথভাবে কাজ করছেন আল মাদানী ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ইমতিয়াজ উদ্দীন সাব্বির।[/caption]
তিনি বলেন, আমাদের জেলা স্বেচ্ছাসেবক টিমগুলো স্ব স্ব জেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন। তারা জেলা স্বেচ্ছাসেবক টিম ও কেন্দ্রীয় তদারকি টিমকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। সবাই স্বেচ্ছাসেবী টিমে কাজ করতে মুখিয়ে আছেন। মানবতার এ দূর্দিনে তারা নিঃস্বার্থভাবে মানবসেবা করতে দৃঢ়তার সঙ্গে প্রস্তুতি নিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, আমরা পরিকল্পিতভাবে এগোচ্ছি। ঢাকায় শক্তিশালী একাধিক টিম গঠন করেছি। কিন্তু একসপ্তাহ ধরে দৌড়াদৌড়ির পরও সরকারী অনুমোদন পাচ্ছি না। দায়িত্বরত মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর ও সচিব বরাবর দরখাস্ত করেছি। কিন্তু ইকরামুল মুসলিমীন ফাউন্ডেশন নিবন্ধন সংস্থা নয় বলে কাফন-দাফনের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। বিশ্বব্যাপী এই মহাসঙ্কটে নিবন্ধিনের অযুহাত তুলে অনুমোদন না দেওয়ায় গোছালো একটি কমিউনিটি ভেঙ্গে যাচ্ছে। ঢাকার টিমগুলো ইতোমধ্যে এলোমেলো হয়ে গেছে। প্রচুর ফোন আসে মৃতের পরিববার থেকে। আমরা চরম বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে গেছি।
দাফন-কাফনে নিবন্ধিত সংস্থা কেন হতে হবে এমন প্রশ্নও তোলেন মুফতী হাবিবুর রহমান মিছবাহ। সারাদেশে কোনো স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এতগুলো টিম প্রস্তুত করতে পারেনি বলেও দাবি তার।
তিনি বলেন, আমাদের দুটি এ্যাম্বুলেন্সও প্রস্তুত রয়েছে। কাজে অংশগ্রহণ করতে পারলে হয়তো আরও এ্যাম্বুলেন্স ব্যাবস্থা হয়ে যেত। তবুও চেষ্টা অব্যহত রেখেছি, সরকারী অনুমোদন ছাড়া ঢাকায় কাজ করবো না আমরা।
অনলাইন সভায় অংশগ্রহণ করেন মুফতী মুহিব্বুল্লাহ, মাওলানা জিয়াউল আশরাফ, মাওলানা এহসান সিরাজ, মুফতী আব্দুর রহমান কোব্বাদী, মাওলানা এম সামসুদ্দোহা তালুকদার, মাওলানা সিরাজুল ইসলাম আকন, ইমতিয়াজ উদ্দীন সাব্বির প্রমূখ।
ইল্লেখ্য : ইকরামুল মুসলিমীন ফাউন্ডেশন কাফন-দাফনের পাশাপাশি সামাজিক সেবায়ও কাজ করে যাচ্ছে সমানভাবে৷ এ ব্যাপারে প্রচার সম্পাদক মাওলানা এহসান সিরাজ পাবলিক ভয়েসকে সামাজিক সেবার বিবরণ দিতে গিয়ে বলেন, শুধু কাফন-দাফনই নয়, লকডাউনের শুরু থেকেই সামাজিক সেবায় অবদান রেখে চলেছে ইকরামুল মুসলিমীন ফাউন্ডেশন।
[caption id="attachment_74874" align="aligncenter" width="440"] উপকুলীয় অঞ্চলে ত্রাণ বিতরণ করছে ইকরামুল মুসলিমীন ফাউন্ডেশন।[/caption]
তিনি আরও জানান, চাল, ডাল, আলু ও সয়াবিন-সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দিয়ে ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করি আমরা। বর্তমানে জেলাভিত্তিক টিম থেকে ডাটা গ্রহণ করে গরীব, দিনমজুর ও বলতে না পারা অসহায় পরিবারের বিকাশ একাউন্টে নগদ অর্থ পাঠাচ্ছি। উপকূলীয় অঞ্চল থেকে শুরু করে সাভার, মুগদা, সাইনবোর্ড, হবিগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, টাঙ্গাইল, জামালপুর, শেরপুর নোয়াখালী লক্ষীপুর, হাতিয়া ইত্যাদি এলাকায় প্রায় দেড় হাজার মানুষের কাছে অনুদান পৌঁছিয়েছি।
ফাউন্ডেশনের অর্থ সম্পাদক মাওলানা জিয়াউল আশরাফ বলেন, এই মুহূর্তে আমাদের কাছে প্রায় পাঁচ-ছয় হাজার মানুষের বৃত্তান্ত জমা রয়েছে। কিন্তু এত মানুষকে সহায়তা করার মতো ফান্ড আমাদের নেই।
[caption id="attachment_74875" align="aligncenter" width="440"] রাতের আধারে মানুষের বাড়ি বাড়ি ত্রাণ পৌঁছে দিচ্ছে ইকরামুল মুসলিমীন ফাউন্ডেশন।[/caption]
ইতোপূর্বে হৃদয়বান ও বিত্তশালী লোকদের পক্ষ থেকে আমাদের কাছে আসা অনুদান আমানতের সঙ্গে প্রাপ্য পরিবারে পৌঁছে দিয়েছি। বর্তমানে যেভাবে আবেদন আসতেছে এবং সেসব পরিবারের যে করুণ অবস্থা তা সহ্য করার মতো নয়। আমাদেরও ফান্ড খালি। হৃদয়বান ও বিত্তশালী ব্যক্তিরা এগিয়ে না এলে আমাদের কিছুই করার থাকবে না।
পবিত্র রমযান উপলক্ষ্যে কোনো আয়োজন আছে কী না জানতে চাইলে তিনি বলেন, রমযান উপলক্ষ্যে প্রতি পরিবারের জন্য ২ হাজার টাকার প্যাকেজ করেছি আমরা। বিত্তবানরা এগিয়ে এলে আমাদের কাজগুলো সুষ্ঠুভাবে করতে পারব বলে আশাবাদী।
আরআর/পাবলিক ভয়েস