করোনাভাইরাসে বিশ্বব্যাপী মৃতের সংখ্যা দেড় লাখ ছুঁয়েছিলো গতকালকে। হু হু করে বেড়ে উঠা সংখ্যাটা আজকে পৌনে দুই লাখ ছুঁই ছুঁই। আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে তেইশ লাখ। বাংলাদেশেও প্রতিদিন বাড়ছে মৃত ও আক্রান্তের সংখ্যা।
আজ রোববার (১৯ এপ্রিল) দেশে ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। মোট মৃতের সংখ্যা হয়েছে ৯১ জন। গত ২৪ ঘন্টায় ২৬৩৪ টি পরীক্ষা হয়েছে। এতে আক্রান্ত হয়েছে ৩১২ জন। এ নিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা হলো ২৪৫৬ জনে। (আগের দিনের দুইদিনের হিসেবে সংধোশনীর আগে মোট হিসাবে ৩ জন কম ছিলো।)
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক আজ রোববার দুপুরে নিয়মিত ব্রিফিংয়ের শুরুতে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
সুস্থ হয়েছে ৯ জন। মোট সুস্থ হয়েছেন ৭৫ জন। এদিকে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ল্যাব স্থাপন সম্পন্ন হয়েছে। যশোর, ঝিনাইদ, কুষ্টিয়াসহ আশপাশের জেলা থেকে যেসব নমুনা সংগ্রহ করা হবে এখন থেকে সেগুলো যবিপ্রবিতে পরীক্ষা করা হবে।
আইইডিসিআর এর মহাপরিচালক মীরজাদদি সাব্রিনা ফ্লোরা আজকেও সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসেছেন। স্বেচ্ছা কোয়ারেন্টাইনে গেলেও গতকালকে তিনি সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসেছিলেন। এবং আজকেও তিনি সংবাদ ব্রিফিং করেছেন।
এছাড়া আজকে সংবাদ ব্রিফিংয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন, আইইডিসিআর এর অতিরিক্ত পরিচালক ডা. নাসিমা সুলতানা।
এদিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যাওয়ায় গোটা দেশকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এই আদেশ জারি করে।
আদেশে স্বাক্ষর করেছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ। সেইসঙ্গে নাগরিকদের উদ্দেশে তিনটি জরুরী নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এসব নির্দেশনা ভঙ্গ করলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে। নির্দেশনা তিনটি হলাে-
১. মরণঘাতী করােনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে জনগণকে অবশ্যই ঘরের ভেতর অবস্থান করতে হবে। অতি জরুরি প্রয়ােজন ছাড়া বাইরে যাওয়া যাবে না;
২. জনগণের এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় যাতায়াত কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হলাে; এবং
৩. সন্ধ্যা ছয়টা থেকে সকাল ছয়টা পর্যন্ত কেউ ঘরের বাইরে যেতে পারবে না।
আইইডিসিআর-এর তথ্য অনুসারে গত ৮ই মার্চ বাংলাদেশে প্রথম তিনজন করোনাভাইরাস রোগী শনাক্ত হয়। এরপর গত ৮ এপ্রিল থেকে এ সংখ্যা ধিরে ধিরে বড় আকারে বাড়ছে। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন স্থানে করোনারোগী শনাক্ত হচ্ছে। ইতিমধ্যে জেলায় জেলায় ছড়িয়ে পড়া শুরু হয়েছে করোনাভাইরাস। আক্রান্তের দিক থেকে ঢাকা ও ঢাকার আশপাশের জেলা সহ চট্টগ্রাম জেলা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে।
করোনা সংক্রামন ঠেকাতে সারাদেশে সকল ধরণের ‘গণজমায়েত’ বন্ধ করা হয়েছে এবং জরুরী সেবা ছাড়া সকল পরিবহণ চলাচলও বন্ধ রয়েছে। দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শপিংমলসহ বড় বড় সকল কোম্পানীর কার্যক্রমও বন্ধ রয়েছে। প্রধান দুই শহর ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং পর্যটন শহর কক্সবাজারসহ বেশির এলাকাতেই প্রবেশ ও বের হওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়াও দুই দফা বাড়িয়ে সরকারী বেসরকারী অফিসসমূহের ‘সাধারণ ছুটি’ ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে।
সারাদেশে সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পুলিশ, সেনাবাহিনীসহ উপকূলীয় অঞ্চলে নৌবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি নিয়মিত দেখাশোনা করছেন এবং ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের প্রতিটি অঞ্চলের খোঁজখবর রাখছেন।
একই সাথে করোনাভাইরাসের প্রকোপে দেশে কোন অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিলে আগামী ৩ বছরে কীভাবে দেশের মানুষকে তা থেকে রক্ষা করা হবে, সেই পরিকল্পনাও নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। করোনাভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্ত সবশ্রেণির মানুষদের সহযোগিতার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা ৫০ লাখ মানুষকে রেশন কার্ড দেব।
তিনি বলেন, ‘একটা অদৃশ্য শক্তি। এমন একটা ভাইরাস, যাকে কেউ চোখে দেখতে পারে না। কিন্তু তারই প্রভাবে সারাবিশ্ব যেন আজকে একটা জায়গায় চলে এসেছে। এই ভাইরাসের কারণে অর্থনীতির ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। সারাবিশ্ব, জাতিসংঘ থেকে শুরু করে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা বলছে, বিশ্বব্যাপী প্রচণ্ড অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেবে। এমনকি দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে আমাদের করণীয় আছে।’
প্রসঙ্গত: গত বছরের ডিসেম্বর মাসে চীনের উহান শহরে করোনাভাইরাস প্রথমে ধরা পরে। এরপর ধিরে ধিরে তা ইউরোপ আমেরিকাসহ বিশ্বের প্রায় ২০৫ টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিনিয়তই জ্যামিতিক হারে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা।
করোনাভারাসের নিয়মিত আপডেট প্রকাশ করা যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের সংকলিত সর্বশেষ তথ্য অনুসারে বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা ২৩ লাখ ৩৩ হাজার ২২৪ জন। বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর সংখ্যা দাড়িয়েছে ১ লাখ ৬০ হাজার ৮১৮ জন। যা প্রতিমূহুর্তে বেড়েই চলছে। একই সাথে বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়ে ফিরেছেন ৬০০,৩১৫ জন।
বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুসংখ্যায় সর্বাধিক তালিকায় প্রথম রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আজ রোববার পর্যন্ত দেশটিতে মারা গেছে ৩৯ হাজার ১৫ জন। এখন পর্যন্ত দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৭ লাখ ৩৮ হাজার ৯২৩ জন। সুস্থ হয়েছেন ৬৮ হাজার ২৮৫ জন।
দেশটিতে ১৬৬ জন বাংলাদেশি মারা গেছেন।
এর পরই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৩ হাজার ২২৭ জন মৃত্যুবরণ করেছে ইতালিতে। আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৭৫ হাজার ৯২৫ জন।
/এসএস