
ভারতে করোনাভাইরাস ইস্যুতে মুসলিমদের টার্গেট করে যারা বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন মুসলিম নেতা ও বুদ্ধিজীবীরা। মুসলিম নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে বিদ্বেষ ছড়ানো বন্ধ করার দাবি জানিয়েছেন।
বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রের পাশাপাশি একশ্রেণির গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এসব ক্ষেত্র থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়াতে জনস্বাস্থ্যের বিষয়টিতে সাম্প্রদায়িক রূপ দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ।
এ প্রসঙ্গে মুসলিম নেতারা এক যৌথ বিবৃতিতে প্রেসিডেন্ট রামনাথ কোবিন্দ এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন করেছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দিল্লির নিজামুদ্দিনে তাবলিগের মারকাজে যোগ দেওয়া ব্যক্তিদের সম্পর্কে ব্যাপকভাবে এক উগ্র প্রচার চলছে যে মুসলিমরা দেশের বর্তমান মহামারী পরিস্থিতির জন্য দায়ী। সুসংহত পদ্ধতিতে ‘তাবলিগি ভাইরাস’, ‘করোনা জিহাদ’ ইত্যাদির মতো অনেক আপত্তিকর ও অবমাননাকর শব্দগুলোকে প্রচার করা হচ্ছে।
মুসলিম নেতাদের বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, একটি স্বাগতযোগ্য লক্ষণ দেখা গেছে যে, কয়েকটি রাজ্য সরকার পরিস্থিতি গুরুত্বসহকারে নিয়েছে এবং বিদ্বেষ ছড়ানো অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক যে, আজ অবধি ভারত সরকার আমাদের ধর্মনিরপেক্ষ দেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক কাঠামো থেকে সাম্প্রদায়িক ভাইরাসের এই হুমকি প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি।
১৫ জনের যৌথ বিবৃতিতে সই করা বিশিষ্টদের রয়েছেন মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মাদ ওয়ালি রহমানি (সাধারণ সম্পাদক, অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল’বোর্ড), মাওলানা কে আর সাজ্জাদ নোমানী (ইসলামিক স্কলার), জাফরইয়াব জিলানী (সিনিয়র অ্যাডভোকেট), মুজতবা ফারুক (পরিচালক, জনসংযোগ ও সদস্য, কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা কাউন্সিল, জামায়াতে ইসলামী হিন্দ), নাভেদ হামিদ (সভাপতি, অল ইন্ডিয়া মুসলিম মজলিস-ই-মুশাওয়ারাত), সৈয়দ সরওয়ার চিশতী (গদ্দীনশীন খাদিম, দরগাহ হযরত খাজা মঈনুদ্দিন চিশতী, আজমীর শরীফ) ও অন্যরা।
এ সম্পর্কে আজ (সোমবার) ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কোলকাতার ঐতিহ্যবাহী যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের বিশিষ্ট অধ্যাপক আব্দুল মাতীন রেডিও তেহরানকে বলেন, ‘সারা দেশে যেভাবে মুসলিমবিদ্বেষ (ইসলামোফোবিয়া) দিনের পর দিন বেড়ে চলেছে এটা খুব চিন্তার কারণ। এই বিদ্বেষ মাত্রা অতিক্রম করলে ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউশনের উপর থেকে আস্থা উঠে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল হয়। এই বিদ্বেষ একটি ধর্মকে কেন্দ্র করে যেভাবে মিডিয়া ও সামাজিক মাধ্যম এমনি বেশ কিছু রাজনৈতিক নেতা-নেত্রী যেভাবে বিদ্বেষমূলক ও সংবিধান বিরোধী মন্তব্য করে চলেছে যাতে করে সমাজের মধ্যে ঘৃণা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রীর কাছে ওই আবেদন শুধুমাত্র মুসলিম আলেম-ওলামাদের নয় বরং এই আবেদন সাধারণ মুসলিম নাগরিকেরও বটে। সেজন্য দেশের সাংবিধানিক গণতন্ত্র ও ফ্রেটারনিটি রক্ষা খুব আশু প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। আর প্রধানমন্ত্রীর এটা সাংবিধানিক কর্তব্য।
এমএম/পাবলিকভয়েস