রাত তখন ১০টা। এই শহরে কেবল সন্ধা নামার পালা। রাজধানী ঢাকার মানুষগুলো এমনিতে রাত করে ঘুমায়। তাদের সন্ধা নামেই যেন রাত ৯টার পরে। শবে মেরাজ, শবে বরাত, শবে ক্বদর। এই শব্দগুলো মুসলিম প্রধান বাংলাদেশে বহুল পরিচিত।
মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের প্রধান দুই পবিত্র উৎসব ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আজহার আগে উল্লিখিত পবিত্র রাত্রিগুলোতে প্রতিটি মুসলমানের ঘরে ঘরে, পাড়ায়-মহল্লায়, মসজিদগুলো ঈদের উৎসব নেমে আসে। আসে ইবাদাতের অন্যরকম প্রতিযোগিতা।
গ্রামের প্রতিবেশী নারীর এক বাড়িতে একত্র হয়ে ইবাদাতে কাটিয়ে দেয়া সারা রাত। মসজিদগুলোতে থাকে ছোট বড় ঠক-ঠকে পায়ে হেঁটে বেড়ানো বৃদ্ধদের সরব উপস্থিতি। শহরের মসজিদগুলোতে থাকে পুরো ঈদের আমেজ।
[caption id="attachment_73235" align="alignright" width="571"] যাত্রাবাড়ী মাদরাসা ও মসজিদ কমপ্লেক্সের মূল গেট,ছবি: মাহিন মহসিন[/caption]
মসজিদের শহর ঢাকায় যেন ঈদের আগে আরো তিন তিনটি ঈদ হয়ে যায় এই পবিত্র রাত্রিগুলোতে। বিশেষ করে শবে বরাত আর শবে ক্বদর। ক্বদরের রাত আসতে আসতে ঢাকার অধিবাসীরা কেউ কেউ গ্রামমুখি হলেও শবে বরাতে থাকে ভিন্ন চিত্র।
রাত ১০টায় শবে বরাতের রাতে মসজিদে গিয়ে জায়গা পাওয়া কথা না। কিন্তু এই শবে বরাতে ছিলো ভিন্ন চিত্র। রাজধানীর মসজিদের চিত্র সরেজমিনে দেখতে রাতে রাস্তায় বের হই। সাথে ছিলো পাবলিক ভয়েসের ফটো জার্নালিস্টমাহিন মহসিন।
দনিয়া কলেজ রোডস্থ অফিস থেকে বের হয়ে যাত্রাবাড়ীর দিকে যেতে শুরুতেই খাদিমুল ইসলাম মসজিদ চোখে পড়ে আমাদের। অন্যান্য সময়ের চেয়ে এই রাতের চিত্রটা ছিলো আলাদা যেটা দেখার জন্য আমরা প্রস্তুত কখনো ছিলাম না। কিন্তু আমাদের দেখতে হয়েছে পৃথিবীজুড়ে সৃষ্ট করোনাভাইরাস বিপর্যয়ের কারণে।
[caption id="attachment_73234" align="aligncenter" width="570"] শেখদী, মাসজিদুল মাদীনা, শনিরআখড়া বাসস্টান্ড ছবি: মাহিন মহসিন[/caption]
সামনে এগোতে থাকলাম। জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদানিয়া, যাত্রাবাড়াী ঢাকা। যাত্রাবাড়ী বড় মাদরাসা বলা হয় সংক্ষেপে। দেশের সর্বজন শ্রদ্ধেয় অন্যতম শীর্ষ আলেম যাত্রাবাড়ী শায়খ মাহমুদুল হাসান পরিচালিত মাদরাসা। মাদরাসার অভ্যন্তরে বিশাল মসজিদ। গিয়ে দেখলাম সেখানেও চিত্রটা একই। মাদারসার মূল গেট থেকেই তালাবদ্ধ। ভিতরে ঢুকতে চেয়েও পারলাম না।
[caption id="attachment_73231" align="aligncenter" width="571"] যাত্রাবাড়ী থানা মসজিদে, ছবি: মাহিন মহসিন[/caption]
সামনে এগোতে থাকলাম যাত্রাবাড়াী থানা মসজিদ, শনিরআখড়া বাসস্টান্ড মসজিদ, শনিরআখড়া বাজার কেন্দ্রীয় মসজিদ ঘুরলাম। কোথাও কেউ নেই। যেন ধু ধু মরুভূমির শহর।
কোনো মসজিদেই মুসুল্লি পাইনি। কেবল যাত্রাবাড়ী থানা মসজিদে দু’জন পেয়েছিলাম। যারা দু’জনই পুলিশ সদস্য। কথা হয় পুলিশ কনস্টেবল ইয়লিয়াস এর সাথে। আবেগতাড়িত কন্ঠে তিনি জানালেন, অন্যান্য বছর মসজিদে জায়গা হয় না।
অন্যান্য শবে বরাতে মসজিদ ভর্তি হয়ে বাহিরের প্রাঙ্গনে মুসুল্লিরা জড়ো হয়ে প্রভুর প্রেমে মগ্ন হতেন। কিন্তু এবারের দৃশ্যটা আলাদা। এবার কোনো মুসুল্লি আসেননি বাহির থেকে।
[caption id="attachment_73232" align="aligncenter" width="571"] যাত্রাবাড়ী থানা মসজিদে দুই মুসুল্লি ছবি: মাহিন মহসিন[/caption]
পুলিশ সদস্যরা নামাজ শেষে যার যার মতো নিরাপদ দূরত্বে চলে গেছে। জানতে চাইলাম এশার নামাজের জামাত কয়টায় হয়েছে? নামাজের পর সবাই সাথে সাথে চলে গেছে? ইমাম সাহেব কখন গেছেন?
কনস্টেবল ইলিয়াস বলেন, জামাত নির্ধারিত সময়েই হয়েছে। নামাজে বাহিরের মুসুল্লি ছিলো না। ইমাম সাহেব কিছুক্ষণ ছিলেন। তারপর চলে গেছেন।
[caption id="attachment_73234" align="aligncenter" width="571"] শেখদী, মাসজিদুল মাদীনা, শনিরআখড়া বাসস্টান্ড ছবি: মাহিন মহসিন[/caption]
পুরো শহর ঘুরতে পারিনি আমরা। কিন্তু খুব সহজেই অনুমান করা যায় পুরো শহরের চিত্রটা এমনই ছিলো। খুব দ্রুত অবসান হউক এই নিরবতার দৃশ্যের এমনটাই মসজিদের শহরের বাসিন্দাদের।
/এসএস