দিল্লিতে তাবলীগ জামাতের মারকাজ নিজামউদ্দিন মসজিদ থেকে ব্যাপকহারে করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে দাবি করে ভারতের হিন্দুত্ববাদী সরকার তাবলীগ জামাতের উপর কঠোর নজরদারী চালাচ্ছে।

ইতোমধ্যেই দিল্লির মারকাজে আসা বিদেশীদের বড় একটা অংশকে কালো তালিকাভূক্ত করেছে ভারত সরকার। ভারতীয় মিডিয়া সূত্রে জানা গেছে, মোট ৯৬০ জন বিদেশি মুসল্লিকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়।

এ তালিকার অর্ধেকই বাংলাদেশি ও ইন্দোনেশিয়ান। সব চেয়ে বেশি এক তৃতীয়াংশ কালো তালিকাভুক্তই ইন্দোনেশিয়ার। এরপরই যথাক্রমে বাংলাদেশ, মাালয়েশিয়া ও কিরগিস্তানের তাবলীগে যোগ দেয়া মুসল্লীরা আছেন ওই তালিকায়।

ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ৬৭ দেশের ওই ৯৬০ জনের ভারতীয় ভিসা বাতিল করা হয়েছে। তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর পাশাপাশি আইনিব্যবস্থা নেয়া হবে। ভবিষ্যতে তাবলীগ জামাতে অংশগ্রহণ করতে চেয়ে ভিসার আবেদন করলে তাদের আর ভিসা দেয়া হবে না বলেও জানানো হয়েছে।

আরও পড়ুন : নিযামুদ্দিনের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও মামলাকে ষড়যন্ত্র বললেন ভারতের আলেমগণ

এ কালো তালিকায় সবচেয়ে বেশি ৩৯৭ জন ইন্দোনেশিয়ার, এরপর ১১০ জন বাংলাদেশি, ৭৭ জন কিরগিস্তানের, ৭৫ জন মাালয়েশিয়ার, ৬৫ জন থাইল্যান্ডের ও ৬৩ জন মিয়ানমারের, শ্রীলংকার ৩৩ জন, ইরানে ২৪ জন, ভিয়েটনামের ১২ জন, ফিলিপাইনের ১০ জন, কাজাকিস্তানের ১৪ জন,চীনের ৯ জন, যুক্তরাজ্যর ৯ জন, ফ্রান্সের ৩ জন, তাঞ্জানিয়ার ৮ জন, আলজেরিয়ার ৭ জন, দক্ষিণ আফ্রিকার ৪ জন, যুক্তরাষ্ট্রের ৪ জন এবং তিনজন ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর নাগরিক আছেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের অফিসের পক্ষ থেকে টুইটারে বলা হয়েছে, ট্যুরিস্ট ভিসায় এসে তাবলিগ জামাতের কার্যক্রমে জড়িত থাকার অভিযোগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ৯৬০ বিদেশি প্রতিনিধির ভিসা বাতিল করা হয়েছে।

মন্ত্রণালয় সূত্রের বরাতে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকা জানিয়েছে, ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশ, মাালয়েশিয়া, কিরগিস্তান, চীন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশের প্রায় ২ হাজার বিদেশি মুসল্লি যোগ দিয়েছিলেন তাবলীগ জামাতে।

সেসব প্রতিনিধি এবং তাদের সংস্পর্শে আসা মিলিয়ে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মোট ৫৫০ জনের কোভিড-১৯ পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে বলে দাবি তাদের। এর মধ্যে ৯টি দেশের কালো তালিকাভুক্ত ৪০০ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলেও দাবি তাদের।

তবে এই দাবির সত্যতা কতটুকু তা যাচাই করার সুযোগ রাখা হয়নি। একই সাথে ভারতের মোদি-অমিত শাহ্ নেতৃত্বাধীন হিন্দুত্ববাদী সরকারের মুসলিমবিরোধী মনোভাবের বিষয়টিও আসছে আলোচনায়। যে দোষে তাবলীগ মারকাজকে দোষী করা হচ্ছে তা নিয়েও আছে বিতর্ক। খোদ ভারতীয় অনেক মিডিয়াতেই বলা হয়েছে, তাবলীগের সেই গণজমায়েত আইন অমান্য করে ছিলো না। কারণ যখন সেই জমায়েত হয়েছিলো তখন ভারতে করোনাভাইরাসকে 'হেলথ ইমার্জেন্সি' ঘোষণা করা হয়নি।

ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় থেকে আরও দাবি করা হয়েছে তাবলীগের সেই গণজমায়েতে করোনাভাইরাসের উৎপত্তিস্থল হিসেবে চিহ্নিত চীন থেকে আসা ৬ জনের দেহেও এ ভাইরাস পাওয়া গেছে। আরও অনেকে ভর্তি দিল্লিসহ দেশের ২৩টি রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে। কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন আরও অনেকে। ফলে এই আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। সুস্থ হযে উঠলে তাদের কোয়ারেন্টিন সেন্টার থেকে ডিটেনশন সেন্টারে পাঠানো হবে বলেও জানান তারা।

ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ৬৭ দেশের ওই ৯৬০ জনের ভারতীয় ভিসা বাতিল করা হয়েছে। তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর পাশাপাশি আইনিব্যবস্থা নেয়া হবে। ভবিষ্যতে তাবলিগ জামাতে অংশগ্রহণ করতে চেয়ে ভিসার আবেদন করলে তাদের আর ভিসা দেয়া হবে না বলেও জানানো হয়েছে।

ভিসা বাতিলের পর তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনিব্যবস্থা নেয়া হবে। সবাইকে নিজের নিজের দেশে ফেরত পাঠানো হবে। ফরেনার্স অ্যাক্টের ১৪ নম্বর ধারা অনুযায়ী ভিসার অপব্যবহারের অভিযোগ আনা হবে। কারণ ট্যুরিস্ট ভিসায় এসে কোনো ধর্মীয় কার্যকলাপে যোগ দেয়া যায় না। তাদের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য রাজ্যগুলোকে নির্দেশ পাঠানো হবে। এ ছাড়া বিপর্যয় মোকাবেলা আইনেও অভিযোগ করা হবে কালো তালিকাভুক্তদের বিরুদ্ধে।

ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আপাতত সবাই কোয়ারেন্টিন সেন্টারে আছেন। সুস্থ হয়ে ওঠার পর রাজ্যগুলোর ডিটেনশন সেন্টারে পাঠানো হবে। সেখানে রেখেই বাকি আইনি প্রক্রিয়া করা হবে।

কালো তালিকাভুক্তদের তালিকা সংশ্লিষ্ট দেশে পাঠানোর জন্য এবং ভারত সরকারের সিদ্ধান্ত তাদের জানানোর জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। কীভাবে তাদের ফেরত নেবে সংশ্লিষ্ট দেশ, সে বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আলোচনা চালাচ্ছে।

সূত্র : যুগান্তর, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ইন্ডিয়া টুডে।

আরও পড়ুন : তাবলীগের মারকাজ ‘নিজামউদ্দিন মসজিদ’ বন্ধ ও কর্তৃপক্ষের নামে মামলার নির্দেশ

আরআর/পাবলিক ভয়েস