বিশেষ প্রতিবেদন
কারাগারে মাওলানা দেলোওয়ার হোসেন সাঈদীর প্রায় ১০ বছর পূর্ণ হতে চলছে। ২০১১ সালে অক্টোবরে মা গুলনাহার ইউসুফ এবং ১২ সালের জুনে ছেলে রফিক সাঈদীর মৃত্যুতে জানাযা পড়ানোর জন্য প্যারোলে মুক্তি পেয়েছিলেন কিছু সময়ের জন্য। এছাড়া দীর্ঘ দশ বছর ধরে তিনি কারাগারেই রয়েছেন।
গত ফেব্রুয়ারিতে ৮০ বছর পূর্ণ হয়ে ৮১ বছরে পা দিয়েছেন মাওলানা সাঈদী। এই বৃদ্ধ বয়সে কারাগারে তিনি কেমন আছেন? কীভাবে কাটছে তার সময়, কেমন আছে তার পরিবার। সেসব বিষয়ে কথা হয় মাওলানা সাঈদীর ছোট ছেলে মাসুদ সাঈদীর সাথে।
সম্প্রতি বিশ্বব্যাপী মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে সৃষ্ট বিপর্যয়ের মুখে আদালতে দণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এক নির্বাহী আদেশে মুক্তি দেয়া হয়েছে। এরপর থেকে আলোচনায় আসে মানবিক বিবেচনায় মাওলানা সাঈদীর মুক্তির ব্যাপারেও।
এ নিয়েও আমরা পাবলিক ভয়েসের পক্ষ থেকে কথা বলেছি মাসুদ সাঈদীর সাথে। পাঠকের জন্য বিস্তারিত তুলে ধরা হলো।
শুরুতেই জানতে চাই কারাগারে আল্লামা সাঈদী কেমন আছেন। জবাবে মাসুদ বিন সাঈদী জানান, এমনিতেই বার্ধক্যের কারণ অসুস্থ আছেন তিনি। ৪০ বছরের ডায়বেটিক পেশেন্ট। হার্টে পাঁচটি রিং পরানো হয়েছে। এছাড়াও নানান দূর্বলতা ভর করছে শরীরে। একা একা হাঁটতে পারেন না। হাঁটুর ব্যাথায় দাঁড়াতেও পারেন না। এমনকি কারাগারে নিজের খাট থেকে উঠে দাঁড়াতেও পারেন না। মারাত্মক অসুস্থতায় ভুগছেন তিনি।
মাসুদ সাঈদী বলেন, আমরা কারা কর্তৃপক্ষের কাছে বাবার উন্নত চিকিৎসার আবেদন করেছিলাম। কর্তৃপক্ষ সাড়া দেননি বা ওপরের নির্দেশে সাড়া দিতে পারেননি। ৪০ বছর ধরে ডায়বেটিসে ভুগছেন, হার্টের সমস্যা রয়েছে। সাধারণত একটা-দুটো রিং পরানো হলেই খুব খারাপ অবস্থা হয়; সেখানে আব্বার হার্টে ৫টি রিং পরানো হয়েছে। এছাড়াও বার্ধক্যজনিত অসুস্থতা রয়েছে। সব মিলিয়ে আব্বার স্বাস্থ্যের অবস্থা ভালো নেই।
অসুস্থতা নিয়ে কারাগারে চলেন কীভাবে? কারা কর্তৃপক্ষ কাউকে সহযোগিতার জন্য দিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, শারীরিক অসুবিধার কারণে কারা কর্তৃপক্ষ একজনকে নির্দিষ্ট দায়িত্ব দিয়েছেন। একজন খাদেম আছেন যিনি নিজেও আসামী। তিনি সকালে এবং দুপুরে বা বিকেলে আব্বার কাছে আসেন। তখন একটু উঠে দাঁড়াতে পারেন। এছাড়া অন্যান্য আসামীরা মাঝে মাঝে আসেন। কেউ কেউ দোয়া চান, কথা বলেন, পাশে বসেন। এভাবেই কারাগারে তার সময়গুলো কাটছে।
খাবার-দাবার এর ব্যাপারে তিনি বলেন, কারাগারে বাইরে থেকে রান্না করা খাবার নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সেজন্য আমরা কখনো রান্না করা খাবার নিতে পারি না। শুকনো খাবার নেওয়ার অনুমতি আছে। সুগার ফ্রি বিস্কিট বা এ জতাীয় খাবার আমরা নেই সাক্ষাতে গেলে। এছাড়া কারাগারে প্রত্যেক আসামীর একটা পার্সোনাল একাউন্ট থাকে। পিসি বলা হয়। একাউন্টে টাকা দিয়ে আসি। কারা ক্যান্টিন থেকে খাবার দেওয়া হয়। এছাড়া কারাগারের নিয়মিত খাবার যা হয় তাই খেতে হয়।
সর্বশেষ কবে এবং কে কে দেখা করছিলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আম্মা, আমার দুই ভাই এবং আমাদের পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা দেখা করি আব্বার সাথে। সর্বশেষ গত একমাস আগে দেখা করেছিলাম। গতকালকে একমাস পূর্ণ হয়েছিলো। একমাস পর পর অনুমতি পাওয়া যায়। গতকালকেও (রোববার) গিয়েছিলাম। তবে দীর্ঘ সময় বসে থেকেও সাক্ষাতের অনুমতি পাইনি।
সম্প্রতি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে করোনাভাইরাস সৃষ্ট বিপর্যয় পরিস্থিতে মুক্তি দিয়েছে সরকার। তার সাজা ছয় মাসের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাহী আদেশে মুক্তি পেয়ে বাড়ি ফিরেছেন বেগম জিয়া। এই বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, আইনমন্ত্রী যেটা বললেন- শর্তসাপেক্ষে বিএনপি নেত্রীকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
খালেদা জিয়ার এই মুক্তির মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মানবিকতার একটি দৃষ্টান্ত রেখেছেন। আমাদের বিশেষ অনুরোধ হলো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আল্লামা সাঈদীর মুক্তির বিষয়টাও বিবেচনা করবেন। একজন বয়স্ক আলেম, বায়োবৃদ্ধ ও অসুস্থ একজন কোরআনের খাদেমকে মানবিক বিবেচনায় মুক্তি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবিকতার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রাখবেন এটা আমরা আশা করি।
পিতার মুক্তি চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে কোনো আবেদন করবেন কিনা জানতে চাইলে মাসুদ বিন সাঈদী বলেন, এখন তো করোনাভাইরাসের যেই পরিস্থিতি তাতে প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাতের সুযোগ নেই। তার একটা সিকিউরিটির ব্যাাপার আছে। চাইলেই সাক্ষাত করা যায় না। তাছাড়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজেই কোয়ারেন্টাইন করছেন। এ অবস্থায় তার সাথে আমরা সাক্ষাত করতে পারছি না। আবেদনের বিষয়টি নিয়ে আমরা ভাবছি। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে আবেদনের বিষয়টি নিয়ে আমরা আমাদের আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেব ইনশাআল্লাহ।
পরিস্থিতির উন্নতি হলে তো সরকার বিষয়টা বিবেচনা নাও করতে পারে, তাছাড়া আপনারা চাইলে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন পাঠাতে পারেন উল্লেখ্য করলে তিনি বলেন, হ্যাঁ এটাও ঠিক বলেছেন। এজন্য আমরা ভাবতেছি। কীভাবে কী করা যায় সেটা আমরা পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেবো।
সন্তান নয় একজন নাগরিক হিসেবে আল্লামা সাঈদীর মুক্তি চাইবেন কিনা প্রশ্নে মাসুদ সাঈদী বলেন, বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে আল্লামা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর মুক্তি তো আমি অবশ্যই চাইবো। আদালতে যুদ্ধাপরাধের দায়ে যে সাজা হয়েছে। সে বিষয়ে কিছু বলবো না। আপনারাই ভালো জানেন আসলে তিনি কেমন মানুষ ছিলেন। কত রকম অসত্য তথ্য দিয়ে বিচার চালানো হয়েছে। জনগণের আদালতে আল্লামা সাঈদী নির্দোষ। আদালতে ৯ জন মুক্তিযোদ্ধা আব্বার পক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছেন। ৯নং সেক্টরের সামসুল ইসলাম, ক্যাম্প কমান্ডার খসরুল আলম আব্বার পক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছেন। অথচ সরকার কিন্তু আব্বার বিপক্ষে কোনো মুক্তিযোদ্ধাকে সাক্ষী হিসেবে দাঁড় করাতে পারেনি। সুতরাং একজন নাগরিক হিসেবে আমিও মনে করি আল্লামা সাঈদী মুক্তি পেতে পারেন।
‘আপনি তো পিরোজপুরে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন, আপনার এলাকার জনগণ কী চায়? তারা কী মাওলানা সাঈদীর মুক্তি চায়?’ এমন প্রশ্নের জবাবে মাসুদ সাঈদী বলেন, আসলে ব্যাপারটা আমার থেকে আপনারা আলো ভালো জানেন। আব্বার বিচার প্রক্রিয়া চলাকালীন সময়ে জনগণ আমাকে নির্বাচিত করেছিলো।
আমি মনে করি শুধু আমার এলাকার জনগণ না, সারাদেশের জনগণ আল্লামা সাঈদীর মুক্তি কামনা করেন। ৫ পার্সেন্ট লোক হয়তো বিরোধীতা করবেন। কিন্তু দলমত নির্বিশেষে এমনকি আওয়ামী লীগেও শতকরা ৯৫ ভাগ মানুষ আল্লামা সাঈদীর মুক্তি কামনা করেন। দেশের মানুষ মন খুলে কথা বলতে পারছে না নানা কারণে। যেদিন খালেদা জিয়ার মুক্তি হলো সেদিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি আলোচিত ছিলো আল্লামা সাঈদীর মুক্তির দাবি।
খালেদা জিয়ার মুক্তির পর সম্প্রতি দেশের একজন প্রসিদ্ধ আলেম মাওলানা মামুনুল হক সামাজিক মাধ্যমে লাইভে এসে আল্লামা সাঈদীর মুক্তি চেয়েছেন বিষয়টা উল্লেখ্য করলে সাঈদী তনয় বলেন, এই সময়ে মাওলানা মামানুল হকের উচ্চারণকে অবশ্যই সাধুবাদ জানাবো। তিনি যে কাজটি করেছেন যথাযথ কাজ করেছেন।
আমাদের মাঝে কিছুটা মতপার্থক্য থাকলেও আমরা একে অপরকে ভালোবাসি আল্লাহর জন্য। আমার এই সময়ে স্মরণ হয় যখন মাওলানা মামুনুল হক এর বাবা আল্লামা আযিযুল হক রহ. কারান্তরীণ হয়েছিলেন। সেসময় আল্লামা আযিযুল হক রহ. এর মুক্তির দাবিতে আব্বা সোচ্চার ছিলেন। আমার মনে পড়ে- আব্বা বলতেন, আমার দুই চোখ আমার কাছে যেমন প্রিয় আলিয়া এবং কওমিয়া আমার তেমন প্রিয়।
আব্বা আলেমদের সম্মান করতেন। নেছারাবাদের হযরতের পা ধুয়ে দিয়েছেন। সিদ্দিকে আযম সাহেবের পা টিপে দিয়েছেন। এগুলো আব্বা প্রকাশ্যে বলতেন। কই এতে তো আব্বা ছোট হয়ে যাননি।
মাসুদ সাঈদী বলেন, শুধু আল্লামা সাঈদী নয়, আরো যেসব আলেম-ওলামা ও সাধারণ মানুষ বিনাদোষে কারান্তরীণ হয়েছেন তাদের মুক্তির ব্যাপারেও সরকার বিবেচনা করতে পারে। অন্য আলেমদেরও প্রত্যেকের জন্য এগিয়ে আসা উচিত।
জামায়াতে ইসলামীর সাথে বাংলাদেশের কওমি ওলাামায়ে কেরামের যে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় মতপার্থক্য রয়েছে আল্লামা সাঈদী যদি জীবিত অবস্থায় মুক্ত হয়ে বের হতে পারেন তাহলে তাকে কেন্দ্র করে দেশের আলেমা-ওলামাগণ একত্রে বসতে পারেন কিনা আপনি কী মনে করেন?
এমন প্রশ্নের জবাবে মাসুদ সাঈদী বলেন, আসলে আপনি যে প্রশ্নটা করলেন খুবই গূরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আমি ক্ষুদ্র মানুষ। এ ব্যাপারে কথা বলতে পারি না। তারপরও আমার যেটা মনে হয়, আমাদের ভিতরে মতামত থাকতে পারে। কিন্তু অন্তত একটা পয়েন্টে কালেমার ভিত্তিতে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন।
আমাদের মূল সমস্য হলো আমাদের আলেমদের অনৈক্য। আলেমরা ঐক্যবদ্ধ হলে ইসলাম কায়েম সহজ হয়ে যেতো। কোনো একটা পয়েন্টে যদি আলেমরা একমত হতেন তাহলে দেশে ইসলাম কায়েম হয়ে যেতো। আমার মনে হয় আল্লামা সাঈদী যদি মুক্ত হয়ে কোরআনের ময়দানে আসতে পারেন তাহলে তাকে কেন্দ্র করে দেশের সব আলেম ওলামাগণ একত্রিত হতে পারেন। কারণ, ব্যক্তি আল্লামা সাঈদীর প্রতি সকলেরই ভালোবাসা আছে।
‘আপনার আম্মা কেমন আছেন?’ ‘‘আব্বা কারাগারে থাকাকালীন দাদী মারা গেলেন। তারপর ভাইয়া (রফিক বিন সাঈদী) মারা গেলেন। আসলে সবচেয়ে বড় বিপর্যয়টা তো আমার মায়ের ওপর দিয়েই গেছে। নিজের স্বামী কারাগারে রয়েছেন, এমন অবস্থায় শাশুড়ির ইন্তেকাল, নিজের বড় ছেলের ইন্তেকাল। সব মিলিয়ে সবচে বড় বিপর্যয় আম্মার ওপর দিয়েই গেছে।
তিনিও বার্ধক্যজনিত কারণে অসুস্থ। হাঁটুতে ব্যাথা আছে। বাসায় লিফট নেই। বাসা থেকে কখনো বের হলে আবার বাসায় উঠতে গেলে খুব কষ্ট হয়। অবশ্য এছাড়া আর তেমন কোনো অসুস্থতা নেই। সর্বাবস্থায় আল্লাহ তাআলার শোকর। আল্লাহ ভালো রেখেছেন’’ বলেন মাসুদ সাঈদী।
সবশেষে আপনাকে একটা কথা বলতে চাই, আব্বার সাথে যখনই দেখা করতে যাই; আব্বা বলেন তার দুইটা স্বপ্ন আছে। যদি কোনোদিন মুক্ত হতে পারেন তাহলে প্রথমে তিনি বাইতুল্লাহ জিয়ারতে যেতে চান। সেটা হজ্বের মৌসুমে কিংবা ওমরা হজ্বে হলেও তিনি আল্লাহর ঘর জিয়ারত করতে চান।
দ্বিতীয়ত তার স্বপ্ন হলো: মুক্তি পেয়ে একবারের জন্য হলেও পুনরায় কোরআনের ময়দানে আসতে চান। দোয়া করবেন আল্লাহ তাআলা যেন আব্বার এই দুটি স্বপ্ন পূরণ করেন।
মাওলানা দেলোওয়ার হোসাইন সাঈদী বাংলাদেশের একজন প্রতিথযশা আলেম, খ্যাতনামা মোফাচ্ছের, দাঈ, রাজনীতিবিদ ও সাবেক সংসদ সদস্য। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর পক্ষ হয়ে দেশবিরোধী এবং মানতবাবিরোধী কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার অভিযোগে আদালতে দোষী সাব্যস্ত হয়ে বর্তমানে তিনি জেল হাজতে আছেন।
১৯৪০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ব্রিটিশ ভারতের পিরোজপুরের ইন্দুরকানী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন মাওলানা দেলোওয়ার হোসেন সাঈদী। বাবা ইউসুফ সাঈদী প্রতিষ্ঠিত মাদরাসায় প্রাথমিক শিক্ষালাভ করেন। এরপর ১৯৫৭ সনে ছারছীনা আলিয়া মাদরাসা থেকে দাখিল ও ১৯৬০ সনে বারইপাড়া সিদ্দিকিয়া সিনিয়র মাদরাসা থেকে আলিম পাস করেন। এরপর ১৯৬২ সালে পুনরায় ছারছীনা মাদরায় ভর্তি হন এবং পরবর্তীতে খুলনা আলিয়া মাদরাসায় স্থানান্তরিত হন।
১৯৯৬ সালের জুনে অনুষ্ঠিত সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পিরোজপুর-১ আসন থেকে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন মাওলানা সাঈদী। এরপর ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি দ্বিতীয় সাংসদ নির্বাচিত হন। এরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকার পেরিয়ে ২০০৯ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে কোনঠাসা হতে থাকে মাওলানা সাঈদীর রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
গ্রেফতার ও আদালতের রায় :
২০১০ খ্রিষ্টাব্দের ২১ মার্চ তারিখে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী কর্তৃক ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় একই বছরের ২৯ জুন মাওলানা সাঈদীকে রাজধানীর শাহীনবাগের বাসা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
এরপর ২০১১ সালে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ দায়ের করা হয় এবং গ্রেফতার দেখানো হয়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, লুটতরাজ ও সংখ্যালঘু হিন্দুদের জোরপূর্বক ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরীত হতে বাধ্য করার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের ২০ দফা অভিযোগ আনা হয় তার বিরুদ্ধে। ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আদালতের রায়ে ২০টি অভিযোগের মধ্যে আটটি অভিযোগে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয় এবং দুটি অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়।
এই রায়ের বিরুদ্ধে আদালতে আপিল করে আসামী পক্ষ। রাষ্ট্রপক্ষও আপিল করে অন্য ছয়টি অভিযোগে সাজা দেওয়ার জন্য। পরের বছর ১৭ সেপ্টেম্বর তৎকালীন প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বাধীন বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী সমন্বয়ে গঠিত পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ আপিলের রায়ে মাওলানা সাঈদীর আমৃত্যু কারাদণ্ড ঘোষণা করেন।
এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে দণ্ডাদেশ পুনর্বিবেচনা চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামীপক্ষ পৃথক রিভিউ আবেদন করে। পরে ২০১৭ সালের ১৫ মে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ আপিল বিভাগের রায় বহাল রাখেন। এরপর থেকে এই দীর্ঘ দশ বছর ধরে তিনি কারাগারেই রয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট খবর :